মাক্কী ও মাদানী সূরা কি? মাক্কী ও মাদানী সূরা সংখ্যা এবং বৈশিষ্ট্য

পবিত্র কুরআনে মোট সূরার সংখ্যা 114 টি। এই ছড়াগুলো কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি অংশ হচ্ছে মাক্কী সূরা অপরটি মাদানী সূরা।

মাক্কী সূরা কাকে বলে?

সাধারণভাবে বলা যায়, পবিত্র মক্কা নগরীতে আল-কোরআনের যে সূরা সমূহ নাযিল হয়েছে সেগুলো কে মাক্কী সূরা বলা হয়। প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী, মানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পূর্বে নাযিল হওয়া সমস্ত সূরাকে নাকি সূরা বলা হয়।

উল্লেখ্য, মাক্কী সূরা প্রসঙ্গে ইয়াহিয়া ইবনে সালাম বলেন, ” মহানবী (সা:) এর হিজরত কালে মদীনায় গমনের পথে মদিনায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত যে সকল সূরা নাযিল হয় সেগুলোও মাক্কী সূরা।

মাক্কী সূরা কয়টি?

মাক্কী ও মাদানী সূরার মধ্যে মাক্কী সূরা সংখ্যাই বেশি। পবিত্র কোরআনে মাক্কী সূরার সংখ্যা মোট 86 টি।

মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য

মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য গুলো হল:

  • মাক্কী সূরা সমূহে তাওহীদ ও রিসালাতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
  • মৃত্যুর পরবর্তী জীবন কেয়ামত, জান্নাত জাহান্নাম তথা আখিরাতের বর্ণনা মাক্কী সূরা সমূহ প্রাধান্য পেয়েছে।
  • শিরক ও কুফরের পরিচয় বর্ণনা করে এগুলোর অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে।
  • মুশরিক ও কাফেরদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
  • এতে পূর্ববর্তী মুশরিক ও কাফেরদের হত্যাযজ্ঞের কাহিনী, ইয়াতিমদের সম্পদ হরণ করা, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া ইত্যাদি কুপ্রথা ও কু আচরণের বিবরণ রয়েছে।
  • পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের সফলতা ও তাদের অবাধ্যদের শোচনীয় পরিণতির বর্ণনা করা হয়েছে।
  • এ সূরাগুলোতে শরীয়তের সাধারণ নীতিমালা উল্লেখ রয়েছে।
  • এতে উত্তম চরিত্র বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
  • মাক্কী সূরা সমূহ সাধারণত আকারে ছোট এবং আয়াতগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট।
  • এর শব্দমালা শক্তিশালী, ভাবগম্ভীর ও অন্তরে প্রকম্পন সৃষ্টিকারী।
  • এতে প্রসিদ্ধ বিষয়সমূহ শপথের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মাদানী সূরা কাকে বলে?

সাধারণ ভাষায় বলা যায়, যে সূরাগুলো মদিনাতে নাযিল হয়েছে সেগুলো কে মাদানী সূরা বলে। তবে প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনায় হিজরতের পর নাযিল হওয়ার সকল সূরাকে মাদানী সূরা বলা হয়।

মাদানী সূরা কয়টি?

নাকি ও মাদানী সূরার মধ্যে সংখ্যায় কম হচ্ছে মাদানী সূরা। পবিত্র কুরআনে মাদানী সূরার সংখ্যা মোট 28 টি।

মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য

মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে দেওয়া হল:

  • মাদানী সূরা সমূহ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রতি ইসলামের আহবান জানানো হয়েছে।
  • এতে আহলে-কিতাবের পথভ্রষ্টতা ও তাদের কিতাব বিকৃত কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
  • মাদানী সূরা সমূহ নিফাকের পরিচয় ও মুনাফিকের ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে।
  • ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
  • পারস্পরিক লেনদেন, উত্তরাধিকার আইন, ব্যবসা বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয় সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিধান বর্ণিত হয়েছে।
  • বিচারব্যবস্থা, দন্ডবিধি, জিহাদ, পররাষ্ট্র নীতি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে
  • ইবাদতে রীতিনীতি, সালাত, সাওম, হজ, যাকাত ইত্যাদি বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।
  • শরীয়তের বিধি-বিধান, ফরজ, ওয়াজীব, হালাল হারাম ইত্যাদির সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
  • মাদানী সূরা গুলো ও এর আয়াতসমূহ তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *