বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার বা মোবাইলের সাথে পরিচিত নয় এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। এখনকার সময়ে সকলেরই বেশিরভাগ সময় কাটে কম্পিউটার বা ফোনকে ঘিরে। তাই আমরা যারা মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করি তারা মনে হয় Operating System শব্দটি শুনেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা অনেকে জানি না অপারেটিং সিস্টেম কী? তাই যারা জানে না, মূলত তাদের জন্যই আমার এ আর্টিকেলটি লিখা। তাহলে চলুন প্রথমেই জেনে নেই অপারেটিং সিস্টেম (OS)কী?
অপারেটিং সিস্টেম কি?
এক কথায় এটি কম্পিউটারের এমন প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যার কাজ হচ্ছে ইউজারের নির্দেশ অনুসারে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর মাঝে সমন্বয় সাধন করা এবং কম্পিউটারের নানান ধরণের প্রোগ্রামের Input, Output, Storage এবং Processing এর জন্য কাজ করা।
অপারেটিং সিস্টেমের (OS) ইতিহাস
- টেপ স্টোরেজ ম্যানেজ করতে 1950 দশকের শেষদিকে অপারেটিং সিস্টেমগুলি প্রথম ডেভেলপ করা হয়েছিল ।
- জেনারেল মোটরস রিসার্চ ল্যাব তাদের IBM 701 এর জন্য 1950 এর প্রথমদিকে প্রথম OS প্রয়োগ করে
- 1960 দশকের মাঝামাঝি সময়ে, অপারেটিং সিস্টেমগুলি ডিস্ক ব্যবহার শুরু করে।
- 1960 এর দশকের শেষদিকে, Unix OS এর প্রথম সংস্করণটি তৈরি করা হয়েছিল।
- মাইক্রোসফ্ট দ্বারা নির্মিত প্রথম OS ছিল DOS। এটি 1981 সালে সিয়াটলের একটি সংস্থা থেকে 86-DOS সফ্টওয়্যার কিনে নির্মিত হয়েছিল।
- বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় OS উইন্ডোজ 1985 সালে প্রথম অস্তিত্ব নিয়ে আসে, যখন একটি GUI তৈরি করা হয়েছিল এবং MS-DOS যুক্ত করা হয়েছিল।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এর জীবনী এবং সফলতার গল্প জেনে নিন।
বিভিন্ন ধরণের অপারেটিং সিস্টেমের নাম
- Windows OS
- Linux OS
- Mac OS
- Android OS
- Network OS
- Haiku OS
- React OS
- Infarno OS
- Aros OS
- Distributed OS
- Multiprocessing OS
- Multitasking/Time Sharing OS
অপারেটিং সিস্টেমের (OS) বৈশিষ্ট্য
অপারেটিং সিস্টেমের সাধারণত পাওয়া বৈশিষ্ট্যগুলির একটি তালিকা এখানে রয়েছে:
- সুরক্ষিত এবং সুপারভাইজার মোড
- ডিস্ক অ্যাক্সেস এবং ফাইল সিস্টেমের অনুমতি দেয় ডিভাইস ড্রাইভার নেটওয়ার্কিং সিকিউরিটি
- প্রোগ্রাম এক্সিকিউশন
- মেমরি ম্যানেজমেন্ট ভার্চুয়াল মেমোরি মাল্টিটাস্কিং
- I / O অপারেশন হ্যান্ডেল করা
- ফাইল সিস্টেমের কারসাজি
- ত্রুটি শনাক্ত করা এবং হ্যান্ডেল করা।
- ইনফরমেশন এবং রিসোর্স প্রটেকশন করা ইত্যাদি।
অপারেটিং সিস্টেমের (OS) কাজ
যেকোন কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোগ্রাম হলো অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন কার্যাবলি রয়েছে। নিচে কয়েকটি দেওয়া হলোঃ
প্রসেস ম্যানেজমেন্ট
প্রসেস ম্যানেজমেন্ট OS প্রক্রিয়াগুলো তৈরি এবং ডিলিট করতে সাহায্য করে। কম্পিউটারের প্রসেসর একই সাথে যেকোনো একটি প্রসেসের কাজ করতে পারে।
কম্পিউটারে একসাথে অনেক প্রসেস চলমান থাকে, এখানে OS এর কাজ হলো কোন প্রসেসটি কম্পিউটারের প্রসেসর দিয়ে ফাংশনাল কাজে ব্যবহৃত হবে তা নির্ধারণ করা।
মেমোরি ম্যানেজমেন্ট
কোন প্রসেস চলাকালীন প্রয়োজনীয় ফাইল Storage (HDD / SDD) থেকে RAM এ লোড করে নেয়। এখানে অপারেটিং সিস্টেম (OS) প্রোগ্রামগুলোতে মেমোরি স্পেস বরাদ্দ করে অর্থাৎ কোন প্রোগ্রাম মেমোরির কতটুকু জায়গা কতক্ষণ এবং কীভাবে ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ করে।
স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট
OS এর কাজ হচ্ছে সিস্টেম Storage কে সিস্টেম ফাইল হিসেবে ট্রান্সফার করা। এর ফলে ফাইলটি Storage এ কোন অবস্থা থাকাকালীন কতটুকু জায়গা নিয়ে আছে এটাও OS নির্ধারণ করে দেয়।
ফাইল ম্যানেজমেন্ট
OS (Operating System) ফাইল সম্পর্কিত সমস্ত কার্যকলাপ (যেমন – প্রতিষ্ঠানের স্টোরেজ,নামকরণ, পুনরুদ্ধার, শেয়ারিং,ফাইলগুলোর প্রটেকশন ইত্যাদি) ম্যানেজ করে।
ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট
ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট সমস্ত ডিভাইসের ট্র্যাক রাখে। এই মডিউলটি এই টাক্সের জন্য দায়ী যা I / O কন্ট্রোলার হিসাবে পরিচিত। এটি ডিভাইসগুলির বরাদ্দ এবং ডি-বরাদ্দের কাজও সম্পাদন করে।
I / O সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট
যে কোনও OS এর প্রধান অবজেক্টগুলির মধ্যে একটি হল ব্যবহারকারী থেকে সেই হার্ডওয়্যার ডিভাইসের বিশেষত্বগুলি লুকানো।
সেকেন্ডারি-স্টোরেজ ম্যানেজমেন্ট
সিস্টেমে বেশ কয়েকটি স্তরের স্টোরেজ থাকে। যার মধ্যে প্রাইমারি স্টোরেজ, সেকেন্ডারি স্টোরেজ এবং ক্যাশে স্টোরেজ রয়েছে। নির্দেশাবলী এবং ডাটা অবশ্যই প্রাথমিক স্টোরেজ বা ক্যাশে স্টোরেজ করতে হবে যাতে কোনও চলমান প্রোগ্রাম এটি উল্লেখ করতে পারে।
সিকিউরিটি
সিকিউরিটি মডিউল ম্যালওয়্যার হুমকি এবং অনুমোদিত অ্যাক্সেসের বিরুদ্ধে কম্পিউটার সিস্টেমের ডেটা এবং তথ্য সুরক্ষা দেয়। তাছাড়া এক প্রসেস যাতল অন্য প্রসেসের কাজে ঝামেলা না করে সেটার নিয়মিত দেখাশোনা করে OS. অর্থাৎ, প্রতিটি কম্পিউটারের সুরক্ষা এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করে।
জব কাউন্টিং
বিভিন্ন জব এবং ব্যবহারকারীদের দ্বারা ব্যবহৃত সময় এবং সংস্থান সম্পর্কে নজর রাখে ইত্যাদি।
অপারেটিং সিস্টেমের প্রকারভেদ
গুরুত্বপূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে 5 ভাগে ভাগ করা যায় এগুলো হলোঃ
- ব্যাচ অপারেটিং সিস্টেম (Betch Operating System)
- রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real Time Operating System)
- টাইম শেয়ারিং অপারেটিং সিস্টেম (Time Sharing Operating System)
- নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম (Network Operating System)
- ডিস্ট্রিবিউটেড অপারেটিং সিস্টেম (Distributed Operating System)
কোন ধরনের কম্পিউটার কন্ট্রোল করে এবং কোন ধরনের অ্যাপস সমর্থন করে এর উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেম কে 4 ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
- সিঙ্গেল ইউজার, সিঙ্গেল টাক্স অপারেটিং সিস্টেম (Single User, Single Task Operating System)
- রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম (Real Time Operating System)
- সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টি টাস্কিং অপারেটিং সিস্টেম (Single User, Multi Tasking Operating System)
- মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম (Multi User Operating System)
অপারেটিং সিস্টেম কাজ করে কিভাবে?
সারাদিন আমরা কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে অনেক ট্যাব ওপেন করে কাজ করি, তার কোন হিসেব থাকে না। এই যে আমরা ইচ্ছানুযায়ী অধিক ট্যাব একসাথে ওপেন করে রাখি এটা অপারেটিং সিস্টেমেরই কাজ। তাহলে চলুন এবার বিস্তারিত জেনে নেই-
ধরুন, আপনি কম্পিউটার অন করবেন। এজন্য আপনি কি করলেন? এজন্য আপনি সুইচবোর্ডে আপনার কম্পিউটারের প্লাগগুলো লাগিয়ে CPU বাটনে ক্লিক করলেন। ক্লিক করার সাথে সাথে কম্পিউটার তার হার্ডডিক্স, RAM ইত্যাদি বিষয়গুলো ওপেন করে দেয়। তখন RAM আর হার্ডডিস্ক কার্ণেলকে নির্দেশ দেয় আর সেই কার্ণেল যেয়ো আবার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমকে নক করে ডিসপ্লে ওপেন করতে। অবশেষে আপনি দেখলেন আপনার ডিসপ্লে অন হয়েছে।
আবার ধরুন, কোন ব্রাউজারে ওপেন করার জন্য এক ক্লিকে আপনার কম্পিউটারকে নির্দেশ দিলেন। তখন আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের কার্নেলকে সে ব্রাউজার ওপেন করার নির্দেশ পৌঁছে দেয়। কার্ণেল তখন সেটা পৌঁছে দেয় RAM আর হার্ডডিস্কের কাছে। হার্ডডিক্স তখন ব্রাউজারের ওপেন করার জন্য আবার কার্ণেলকে বলে। কার্ণেল আবার সেটা অপারেটিং সিস্টেম এর কাছে পৌঁছে দেয় আর সাথে সাথে আপনার নির্দেশনা দেওয়া সাইটটি আপনার কম্পিউটারের ডিসপ্লে তে ওপেন হয়।
সব প্রসেস খুবই জটিল এবং সময় সাপেক্ষ মনে হলেও আসলে এগুলো শেষ হতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। মূলত অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটারের ম্যানেজারের মতো। কম্পিউটারের সব দেখাশুনা করা, ঠিকভাবে, ঠিক সময়ে সব কাজ হচ্ছে কি না এসব নিশ্চিত করায় অপারেটিং সিস্টেম এর প্রধান কাজ।
অপারেটিং সিস্টেমের সুবিধা
- কম্পিউটারে ইন্সটল করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার হলো অপারেটিং সিস্টেম।
- এটি কম্পিউটারের প্রসেসরের কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করে।
- কম্পিউটারের হার্ডওয়ারের মাঝে থাকা বিভিন্ন শব্দ গ্রাফিক্স এবং মেমোরি শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
- অপারেটিং সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন এবং হার্ডওয়্যার উপাদানগুলির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে।
- সহজে ব্যবহারযোগ্য।
- কম্পিউটার সিস্টেমের সংস্থান সরবরাহ করে
- সিস্টেমের সমস্ত হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার এর মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে ইত্যাদি।
অপারেটিং সিস্টেমের অসুবিধা
অপারেটিং সিস্টেমের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনই কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এগুলো হলো –
- যদি OS -এ কোনও সমস্যা দেখা দেয় তবে আপনি আপনার সিস্টেমে থাকা সমস্ত সামগ্রী হারাতে পারেন।
- অপারেটিং সিস্টেমের সফ্টওয়্যারটি ছোট আকারের সংস্থার জন্য বেশ ব্যয়বহুল যা তাদের উপর বোঝা যুক্ত করে। যেমন – উইন্ডোজ
- কোন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা না থাকলে কম্পিউটার অকেজো হয়ে যায়।
- অপারেটিং সিস্টেম না থাকলে যেকোনো ধরনের ডিভাইস যেমন – কম্পিউটার মোবাইল চালানো সম্ভব হবে না।
মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (Mobile OS)
মোবাইল অপারেটিং (Mobile OS) সিস্টেম এমন একটা অপারেটিং সিস্টেম যা মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, পিডিএ, ট্যাবলেট কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইস গুলোর মত মোবাইল ডিভাইস গুলোতে ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ডাটা এবং প্রোগ্রামগুলোর একটি সমন্বিত সেট যা মোবাইল ডিভাইসে চলে। এটি হার্ডওয়ার ম্যানেজ করে এবং মোবাইলের ক্ষেত্রে যে কোন অ্যাপ চালানো সম্ভব হয়। কয়েকটি জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম হলো-
- অ্যান্ড্রয়েড
- সিম্বিয়ান
- আইও এস (IOS)
- ব্ল্যাকবেরি
- উইন্ডোজ মোবাইল ইত্যাদি।
মোটকথা, অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম সফটওয়্যার। অপারেটিং সিস্টেমকে বাদ দিয়ে কম্পিউটারকে দিয়ে কোন কাজ করাতে পারবেন না।
তাই বলা যায় অপারেটিং সিস্টেম হল কম্পিউটার আর ইউজারকারীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক। যার সাহায্যে ব্যবহারকারী যেকোনো ইনস্ট্রাকশন কম্পিউটারে দেয় আর অপারেটিং সিস্টেম সে ইনস্ট্রাকশন বাস্তবায়ন করে।