বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী ইতিহাস

বঙ্গবন্ধুর জীবনের ইতিহাস মানেই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস। জীবনে তিনি যা কিছু করেছেন সবকিছু দেশের জন্যই করেছেন। মাত্র ৫৫ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। সময়ের বিচারে এটি সংক্ষিপ্ত হলেও তার জীবনের দৈর্ঘ্যের আকারে তার কর্মের প্রস্থ ছিল অনেক বেশি। তার জন্ম না হলে আজ আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। চলুন তাহলে মহান নেতার সংক্ষিপ্ত জীবনী ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেই।

জন্ম পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার ১৯২০ সালের 17 ই মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহাকুমার (বর্তমানে জেলা) বাইগার নদীর তীরবর্তী টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়রা বেগম।

শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়রা বেগমের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৃতীয়। তার ডাকনাম ছিল খোকা। টুঙ্গিপাড়াতেই খোকার শৈশবকাল কাটে।

শিক্ষাজীবন

১৯২৭ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন।

এরপর ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। ইসলামিয়া কলেজের মুসলিম শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসের নাম ছিল বেকার হোস্টেল। বঙ্গবন্ধু এ ছাত্রাবাসে থেকেই লেখাপড়া করতেন। তি এ ছাত্রাবাসের ২৪ নম্বর কক্ষে ১৯৪৫-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন।

পারিবারিক জীবন

মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৯৩৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের দুই কন্যা (শেখ রেহানা, শেখ হাসিনা), এবং তিন ছেলে (শেখ কামাল শেখ জামাল ও শেখ রাসেল) । তাদের মেয়ে শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কারাজীবন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মোট ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। এর মাঝে ব্রিটিশ আমলে স্কুলের ছাত্রাবস্থায় ৭ দিন‌ কারাভোগ করেন। বাকি ৪৬৭৫ তিনি পাকিস্তান সরকারের শাসনামলে কারাভোগ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রথম কারাগারে যান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের স্মৃতি নিয়ে একটি দুর্লভ আলোকচিত্র সম্বলিত বই রচিত হয় ।বইটির নাম হল “৩০৫৩দিন”

লেখালেখি

এ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হলো- অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২), কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) এবং আমার দেখা নয়াচীন (২০২০)। চলুন তিনটি বই সম্পর্কে সামান্য জেনে নেই।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী

শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হচ্ছে অসমাপ্ত আত্মজীবনী। ২০১২ সালের জুন মাসে এটি প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ফখরুল আলম বইটির ইংরেজি অনুবাদ করেন।

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর লেখা চারটি খাতা হঠাৎ করে তার কন্যা শেখ হাসিনার নিকট হস্তগত হয়। সে খাতাগুলো পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অভ্যন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারেননি। তিনি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তার আত্মজীবনী লিখতে পেরেছিলেন কিন্তু তিনি এ গ্রন্থ কাউকে উৎসর্গ করে যাননি।

এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন সমর মজুমদার।

কারাগারের রোজনামচা

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বই হচ্ছে কারাগারের রোজনামচা। এটি ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ ১৭ মার্চ ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমী বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে। এ গ্রন্থের নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহেনা। এর ইংরেজি অনুবাদ করেন ডক্টর ফখরুল আলম ‌

এই বইটিও বঙ্গবন্ধু কারাগারে বসে রচনা করেছিলেন। বইটিতে বঙ্গবন্ধু সময়কালের (১৯৬৬-১৯৬৮) তারা স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী এর মত এটিও নানা বাধা পেরিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

আমার দেখা নয়াচীন

শেখ মুজিবের তৃতীয় বই আমার দেখা নয়াচীন। ২০২০ সালে এটি প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসের চীনের পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে শেখ মুজিব যোগ দেন। সেসময় নয়াচীন দেখার অভিজ্ঞতার আলোকে বইটি রচিত ।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারন

  1. ১৯৯৭ সালে ঢাকার ধানমন্ডির 32 নং রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়।
  2. ১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের 24 নং কক্ষটি “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ” হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
  3. ২০১১ সালে বেকার হোস্টেলের নবনির্মিত বর্ধিত ভবনকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
  4. ২০১৭ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লি পার্ক স্ট্রিটের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রোড করা হয়।

এছাড়া আরো অনেক রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর উপাদিসমূহ

উপাধি উপাধি দেন তারিখ স্থান
জাতির পিতা অনু ৪(ক) – ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে
বঙ্গবন্ধু তোফায়েল আহমেদ ২৩ ফেব্রুয়ারি ,১৯৬৯ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান)
জাতির জনক আ.স.ম আব্দুর রব ৩ মার্চ ,১৯৭১ পল্টনপল্টন ময়দান
Poet of Politics (রাজনীতির কবি) নিউজ উইক ম্যাগাজিন
(উপাদি দেওয়া সাংবাদিকের নাম – লোরেন জেঙ্কিস)
এপ্রিল ১৯৭১
বিশ্ববন্ধু বিশ্ব শান্তি পরিষদ ২৩ মে, ১৯৭৩
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিবিসির শ্রোতা জরিপে ২০০৪

পদক

১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক এ ভূষিত করে। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধু পদকটি গ্রহণ করেন।

মৃত্যু

শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির ৩২ নং বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *