ব্লুটুথ কি? ব্লুটুথ এর ব্যবহার, বৈশিষ্ট্য / সুবিধা ও অসুবিধা

মনে করুন ,আপনার বন্ধুর মোবাইলে একটি ছবি বা কোন মুভি বা নাটক আছে। ইন্টারনেট ব্যবহার না করেই আপনি ছবি, নাটক বা মুভিটিকে আপনার মোবাইলে নিতে চান। তাহলে আপনারা কিভাবে নেবেন ? আশা করি, আপনারা সহজেই বুঝে গেছেন আমি কার কথা বলতেছি। আমি ব্লুটুথ এর কথা বলতেছি। এক্ষেত্রে যদি আপনাদের দুজনের মোবাইলে ব্লুটুথ থাকে তাহলে এটি ব্যবহার করে এগুলোকে আনা যাবে।

বর্তমানে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, ট্যাব, পিডিএ, মেডিকেল ডিভাইস, ডিজিটাল ক্যামেরা, ওয়ারলেস মাউস কিংবা হেডসেট এবং বাসাবাড়ির বিনোদনের অনেক ডিভাইসে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। নামটি অদ্ভুত হলেও এটি কাজে বেশ পটু। তারের ঝামেলা থেকে মুক্তির শুরু হয়েছে এর হাত ধরেই। কিন্তু অনেকেই ব্লুটুথ সম্পর্কে জানেনা । চলুন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

ব্লুটুথ কি?

ব্লুটুথ হল স্বল্প দূরত্বের (10 মিটার এর কাছাকাছি) ভেতর ডাটা আদান-প্রদানের জন্য বহুল প্রচলিত একটি ওয়ারল্যাস প্রযুক্তি। এটি তারবিহীন পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক প্রটোকল। যেখানে উচ্চমানের নিরাপত্তা বজায় থাকে। ব্লুটুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকে পিকোনেট বলে।দুইটি পাশাপাশি পিকোনেট একটি সাধারন স্ল্যাভ নোডের মাধ্যমে যুক্ত হলে এ দুটি পিকোনেটকে একসাথে স্কাটারনেট বলে।

এর কার্যকরী পাল্লা হচ্ছে 10 মিটার। তবে বিদ্যুৎ কোষের শক্তি বাড়িয়ে এর পাল্লা 100 মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। এটি ২.৫ গিগাহার্জেও কাজ করে। টেলিকম ভেন্ডর কোম্পানি এরিকসন 1994 সালে এটি উদ্ভাবন করেন। ডেনমার্কের রাজা হ্যারল্ড ব্লুটুথ এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে।

ব্লুটুথ এর ব্যবহার

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্লুটুথের ব্যবহার হয়। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

  • মোবাইল ফোনের সাথে hands-free হেডসেটের সংযোগ ঘটিয়ে সাউন্ড বা ভয়েস ডাটা ট্রান্সফারে ব্যবহৃত হয়।
  • মোবাইল থেকে কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তরে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
  • কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য ডিভাইস এর সংযোগ ঘটানো যায় এবং তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
  • পিসির ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস গুলোর সাথে তারবিহীন যোগাযোগে এটি ব্যবহৃত হয়।
  • জিপিএস রিসিভার, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, বারকোড স্ক্যানার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল ডিভাইস গুলোতে ব্যবহৃত হয়।
  • ইনফ্রারেড ব্যবহৃত হয়, এমন জায়গায় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
  • ডেডিকেটেড টেলিহেলথ ডিভাইসগুলোতে হেলথ সেন্সর ডাটাগুলোর short-range ট্রান্সমিশনে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।

ব্লুটুথের বৈশিষ্ট্য / সুবিধা

ব্লুটুথের অনেক বৈশিষ্ট্য / সুবিধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো –

  • কাছাকাছি দুটি ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তরে ব্যবহৃত হয়।
  • ২.৪ গিগাহার্টজ ফ্রিক্যুয়েন্সিতে সিগন্যাল আদান-প্রদান করে।
  • এর ব্যান্ডউইথ ১ Mbps.
  • 10-100 মিটারের মধ্যে তারবিহীন ডিভাইসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।
  • এটি মাস্টার স্লেভ কাঠামোসহ একটি প্যাকেজ ভিত্তিক প্রটোকল।
  • মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ভিডিও গেইম কনসোলগুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করতে এবং তথ্য বিনিময় করতে ব্লুটুথ ব্যবহৃত হয়।
  • একেকটি পিকোনেটে মোট ২৫৫ টি স্লেভ নোড থাকে, তবে সাতটি স্লেভের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং অবশিষ্ট নোডগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে।
  • স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনফিগার করতে পারে ইত্যাদি।

ব্লুটুথের অসুবিধা

ব্লুটুথের যেমন সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। কয়েকটি হলো –

  • ডাটা ট্রান্সফার রেট কম।
  • ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে যোগাযোগ করা সম্ভব না।
  • ব্লুটুথ অপশন অন করা থাকলে ফোনের ব্যাটারির চার্জ বেশি খরচ হয়।
  • ব্লুটুথ ইন্টারনেট গতি অনেক কম।
  • এর মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফারে সিকিউরিটি কম।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *