ইস্তেখারার দোয়া, নিয়ম ও নামাজ | অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ
আসলামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোন। আজকে আমরা ইস্তেখারার দোয়া, নিয়ম ও নামাজ | অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ শিখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
ইস্তেখারা কি?
ইস্তেখারা শব্দের অর্থ হলো কোন জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ বা মঙ্গল কামনা করা। সাধারণত কোন কাজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য অর্থাৎ কাজটি তার জন্য কল্যাণকর কি না সে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াকেই ইস্তেখারা বলে। আজ আমরা ইস্তেখারার দোয়া, নিয়ম, নামাজ, নিয়ত ও শর্ত সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ।
অনেক সময় মানুষ বিভিন্ন বিষয়ের মাঝে কোনটি গ্রহণ করতে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কোথায় তার জন্য কল্যাণ রয়েছে সে নিয়ে কারো জ্ঞান নাই। এ কারণে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে কল্যাণ লাভের জন্য আল্লাহর নিকট সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইস্তেখারা করতে হয়। সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যাতে তার সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থির করে দেন যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর জন্য উপকারী হয়। বিশেষ করে বিয়ে, চাকুরি, ব্যবসা, সফর ইত্যাদি বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করা উত্তম।
ইস্তেখারা করার নিয়ম
- অযু করতে হবে।
- ২ রাকাআত নফল নামাজ আদায় করতে হবে।
- নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরূদ পেশ করার পর ইস্তেখারার দুয়াটি পাঠ করতে হবে।
উপরে আমরা ইস্তেখারা করার নিয়ম জানলাম। এবার আমরা ইস্তেখারার শর্ত, নামাজ ও দোয়া অর্থসহ বাংলা উচ্চারণ শিখব।
ইস্তেখারার শর্ত
- মনে মনে নিয়্যাত করা।
- প্রয়োজনীয় সকল চেষ্টা করা।
- আল্লাহর হুকুমে সবসময় খুশি থাকা।
- শুধুমাত্র হালাল কিংবা বৈধ বিষয়ে ইস্তেখারা করা।
- তাওবা করা
- অন্যায় করে কিছু গ্রহণ না করা
- হারাম উপার্জন না করা
- হারাম মাল ভক্ষণ না করা
- যে সব বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে অর্থাৎ বিষয়টি তার ইচ্ছার অধীনে সেসব বিষয়ে ইস্তেখারা না করা।
ইস্তেখারার দোয়া
জাবির ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন, ঠিক সেভাবে প্রতিটি কাজে আমাদেরকে ইস্তিখারা (কল্যাণ প্রার্থনা) শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, যখন তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করে তখন সে যেন ফরয ছাড়া দুই রাক’আত নফল নামায আদায় করে নেয়, অতঃপর নিম্নের দোয়াটি বলেন।
ইস্তেখারার দোয়া আরবি
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ
ইস্তেখারার দোয়া বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা ইন্নী-আস্তাখিরুকা বি-ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি-কুদরাতিকা ওয়াআসআলুকা মিনফাদলিকাল আযীম, ফা-ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না “হাযাল আমরা” খাইরুল্লি ফীহ- দ্বীনী ওয়া মা’আশী ওয়া আক্বিবাতি আমরী, ফাকদুরহুলী ওয়া-্ইয়াসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিকলী ফীহি, ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা’আশী ওয়াআকীবাতি আমরি,ফাসরিফহু আন্নী ওয়াসরীফনী আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদিনী বিহী।
ইস্তেখারার দোয়া বাংলা অর্থ বা অনুবাদ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার জ্ঞানের সাহায্য চাইছি, তোমার শক্তির সাহায্য চাইছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহ চাইছি। তুমিই শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী, আমার কোন ক্ষমতা নেই। তুমি অফুরন্ত জ্ঞানের অধিকারী, আমার কোন জ্ঞান নেই। তুমি অদৃশ্যবিষয়ে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত। হে আল্লাহ! তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য, আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজের পরিণামের দিক হতে, ভাল মনে কর তবে তা আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দাও এবং আমার জন্য সহজ করে দাও। পক্ষান্তরে তুমি যদি এ কাজটি আমার জন্য আমার দ্বীনের দৃষ্টিকোণ হতে, আমার জীবন যাপনের ব্যাপারে এবং আমার কাজকর্মের পরিণামের দিক হতে ক্ষতিকর মনে কর, তবে তুমি সে কাজটি আমার থেকে দূরে সরিয়ে দাও। এবং আমাকে তা থেকে বিরত রাখ। এবং যেখান থেকে হোক তুমি আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করে দাও”। (তিরমিজি ৪৮০ ইবনু মাজাহ (১৩৮০,রিয়াদুস সলিহীন ৭২২)
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তায়মিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইস্তেখারা সম্পর্কে বলেন, “ওই ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না; যে আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা বা কল্যাণ কামনা করে, মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল-অবিচল থাকে।”
ইস্তেখারার নামাজ পড়ার নিয়ম
যোহর, মাগরিব ও এশার নামাজের শেষে যেভাবে ২ রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা হয় ঠিক একই নিয়মে ইস্তেখারার নামাজ আদায় করতে হবে। শুধু পার্থক্য হলো – এখানে ইস্তেখারার উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
ইস্তেখারার জন্য নফল নামাজ আদায় করতে চায়লে প্রথমে নিয়ত করতে হবে। এরপর প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য যেকোন একটি সূরা পড়তে হবে। একইভাবে দ্বিতীয় রাকআতেও সূরা ফাতিহার পর অন্য আরেকটি সূরা পড়তে হবে।
এভাবে ছাড়াও অন্য নিয়মে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তা হলো – প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর ৩ বার সূরা ইখলাস পড়তে পারেন।
দুটি নিয়মের মাঝে যেটি আপনার কাছে ভালো লাগবে এবং সহজ মনে হবে আপনি সে নিয়মেই নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন।
ইস্তেখারার নিয়ত
নিয়ত যে কেবল আরবিতে করতে হবে এমন নয়। নিয়ত বাংলাতেও করা যাবে।
ইস্তেখারার নিয়ত আরবি
নিম্নে ইস্তেখারার আরবি ও বাংলা নিয়ত দেওয়া হলো –
نويت ان اصلي لله تعالى ركعتى صلواة الاستخارة نفل متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر
ইস্তেখারার নিয়ত বাংলা
বাংলায় উচ্চারণ:– নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ইস্তেখারাতি নাফলা, মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় নিয়তঃ “আমি আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে ইস্তেখারার দুই রাকআত নফল নামাজের নিয়ত করছি। আল্লহু আকবার।”
যা জানা প্রয়োজন
- ইস্তেখারার দোয়া মুখস্থ না থাকলেও কোন অসুবিধা নেই। আপনি দেখে দেখে পড়তে পারবেন। তবে মুখস্থ করে পড়া বেশি ভালো।
- ইস্তিখারা করার পর এ বিষয়ে স্বপ্ন দেখা আবশ্যিক নয়। স্বপ্নের মাধ্যমে আবার স্বপ্ন ছাড়াও সঠিক জিনিসটি জানতে পারে এবং কাজটির প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে।
- নির্দিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পর আল্লাহর উপর ভরসা রেখে দৃঢ়ভাবে কাজ করে যান। কোন পিছুপা হবেন না। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে – “আর যখন সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেল তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর।” [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]
- ইস্তেখারার সালাত ও দোয়া পড়ার পরও যদি আপনি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারেন তাহলে তা একাধিক বার পড়তে পারবেন। একাধিকবার পড়া জায়েজ আছে।
- একজনের পক্ষ থেকে অন্যজন ইস্তেখারার সালাত আদায় করতে পারবেন না। তবে তার জন্য দুয়া করতে পারবেন।
- কোনরকম অন্যায় বা হারাম কাজে এমনকি মাকরূহ কাজেও ইস্তিখারা করার জায়েজ নেই।