সূরা আল ফাতিহা – বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত

মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা হচ্ছে সূরা আল ফাতিহা। আরবি ফাতহুন শব্দ থেকে ফাতিহা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ হলো উন্মুক্তকরণ। এর আয়াত সংখ্যা ৭ টি এবং রুকু সংখ্যা ১। মক্কায় অবতীর্ণ হওয়ায় এটি মাক্কী সূরা। সূরা আল ফাতিহাকে ভেঙে ভেঙে আলাদাভাবে পড়া যায় না বলে একে অখন্ড সূরাও বলা হয়। চলুন তাহলে সূরা ফাতিহা সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছু জেনে নেই –

সূরা আল ফাতিহা নিয়ে কিছু কথা

সূরার নাম সূরা আল ফাতিহা
অন্য নাম ফাতিহাতুল কিতাব, উম্মুল কিতাব,
সূরাতুল হামদ, সূরাতুস সালাত,
আস সাবয়ুল মাসানী ইত্যাদি।
আয়াত সংখ্যা ০৭
রুকু সংখ্যা ০১
সূরার ক্রম ০১
পারার ক্রম ০১
সিজদাহর সংখ্যা নেই
শব্দের সংখ্যা ২৯
নামের অর্থ শুরু

সূরা আল ফাতিহা

ক্রম আয়াত & অর্থ উচ্চারণ & ইংলিশ অর্থ
1 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। In the name of Allah, Most Gracious, Most Merciful.
2 الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ আল হামদুলিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন।
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। Praise be to Allah, the Cherisher and Sustainer of the worlds;
3 الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ আররাহমা-নির রাহীম।
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু। Most Gracious, Most Merciful;
4 مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন।
যিনি বিচার দিনের মালিক। Master of the Day of Judgment.
5 إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ইয়্যা-কা না‘বুদুওয়া ইয়্যা-কা নাছতা‘ঈন।
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। Thee do we worship, and Thine aid we seek.
6 اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ ইহদিনাসসিরা-তাল মুছতাকীম।
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, Show us the straight way,
7 صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ সিরা-তাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম । গাইরিল মাগদূ বি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন।
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। The way of those on whom Thou hast bestowed Thy Grace, those whose (portion) is not wrath, and who go not astray.

সূরা ফাতিহার বৈশিষ্ট্য

আল কুরআনের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ একটি সূরা হচ্ছে সূরা আল ফাতিহা। এর অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে তা দেখা যায়। চলুন তাহলে এসব হাদিস সম্পর্কে জেনে নেই –

১. সূরা ফাতিহা কুরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কুরআন কোনো কিতাবে এই সূরার তুলনীয় কোন সূরা নেই। (বুখারি, মিশকাত : ২১৪২)

২. সূরা আল ফাতিহা এবং সূরায়ে বাকারা’র শেষ তিনটি আয়াত হল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নূর, যা ইতিপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)

৩. যে ব্যক্তি নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অপূর্ণাঙ্গ। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিনবার বললেন। (মিশকাত : ৮২৩)

৪. আবু সা‘ঈদ খুদরী রা. বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সূরায়ে ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (বুখারি শরীফ : ৫৪০৫)

৫. সুরা ফাতিহার বিশেষ মর্যাদা হলো, আল্লাহ এটিকে নিজের ও নিজের বান্দার মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। একে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব নয়। সেজন্যই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘উম্মুল কুরআন’। পবিত্র কুরআন মূলত তিনটি বিষয়ে বিন্যস্ত। তাওহীদ, আহকাম ও নছীহত। সূরায়ে ইখলাছে ‘তাওহীদ’ পূর্ণাঙ্গভাবে থাকার কারণে তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু সূরায়ে ফাতিহায় তিনটি বিষয় একত্রে থাকার কারণে তা ‘উম্মুল কুরআন’ হওয়ার মহত্তম মর্যাদা লাভে ধন্য হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী : ১৪৮)

এগুলো ছাড়াও আরও অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

সূরা আল ফাতিহার ফজিলত

সুরা আল ফাতিহার ফজিলত অপরিসীম। এর ফযীলত নিয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হলো –

১. আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সূরা ফাতিহা পড়। কোন বান্দা যখন বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। যখন বলে, আর-রহমা-নির রহীম, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুন বর্ণনা করেছে।

বান্দা যখন বলে, মালিকি ইয়াউমিদ্দীন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বান্দা যখন বলে, ইয়্যাকানা’বুদু ওয়া ইয়্যা কানাস্তাইন, আল্লাহ বলেন, এ হচ্ছে আমার ও আমার বান্দার মাঝের কথা। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়।

বান্দা যখন বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম.. (শেষ পর্যন্ত)। আল্লাহ বলেন, এসব হচ্ছে আমার বান্দার জন্য। আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, যা সে চায়। (মুসলিম শরীফ : ৩৯৫)

২. ইবনে আববাস (রা.) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চোখ আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনদিন খোলা হয়নি।

সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে কোন নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষ দু’আয়াত।’ (মুসলিম শরীফ : ৮০৬)

০৩. হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন যে নবী বলেছেন যে,

“যে ব্যক্তি এমন কোন সালাত আদায় করে যাতে সে উম্মুল কুরআন (যেমন, আল-ফাতিহা) পড়ে না, তবে তার সালাত অসম্পূর্ণ।” (সহিহ মুসলিম)

০৪. উবাই ইবনু কা’ব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ উম্মুল কুরআনের মত তাওরাত ও ইনজিলে কিছু নাজিল করেননি। এটিকেই বলা হয়, ‘আস-সাবউল মাছানী’ (বারবার পঠিত সাতটি আয়াত), যাকে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আর আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে, সে যা চাইবে’। (নাসায়ী শরীফ : ৩১৯)

০৫. আবু সা ‘ইদ আল খুদরী বলেছেন: “আমরা যখন আমাদের একটি যাত্রায় ছিলাম, তখন আমরা এমন এক জায়গায় ফিরে গেলাম যেখানে একজন দাসী এসে বলল,” এই গোত্রের প্রধান বিচ্ছু দ্বারা আহত হয়েছিল এবং আমাদের লোকেরা উপস্থিত নেই; তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে তাকে চিকিৎসা করতে পারে (কিছু পাঠ করে)? ” তারপরে আমাদের একজন লোক তার সাথে চলে গেল যদিও আমরা মনে করি নি যে তিনি এই জাতীয় কোনও চিকিৎসা জানেন। কিন্তু তিনি কিছু পাঠ করে চিকিৎসা করলেন এবং অসুস্থ লোকটি সুস্থ হয়ে উঠল এবং তারপরে তিনি তাকে ত্রিশটি ভেড়া উপহার দিয়েছিলেন এবং আমাদেরকে দুধ পান করান (পুরস্কার হিসাবে)।

তিনি ফিরে আসলে, আমরা আমাদের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি কি কিছু পাঠ করে চিকিৎসা করা জানেন?” তিনি বলেছিলেন, “না, তবে আমি কেবল সূরা আল-ফাতিহা আবৃত্তি করে চিকিৎসা করেছি।” আমরা বললাম, আমরা মদীনা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা নবীকে জিজ্ঞাসা করার আগ পর্যন্ত কিছু না বলতে (এ সম্পর্কে), আমরা রাসূলের নিকট উল্লেখ করেছিলাম (আমরা যে মেষগুলি নিয়েছিলাম তা গ্রহণ করা বৈধ ছিল কি না তা জানতে) । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি কীভাবে জানতে পেরেছিলেন যে এটি (আল-ফাতিহা) চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? আপনার পুরস্কার বিতরণ করুন এবং আমার জন্য এটির একটি অংশও অর্পণ করুন। ” (আল বুখারী ০০৬.০৬১.৫২৯ – কুরআনের ফজিলত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *