এসিড কাকে বলে? এসিডের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও চেনার উপায় কি?
এসিড একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটি Acidus (অ্যাসিডাস) বা এসিয়ার হতে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ হলো টক। টক ও স্বাদযুক্ত সবকিছুর মাঝে এসিড থাকে। যেমন – তেঁতুল, লেবু ইত্যাদিতে জৈব অ্যাসিড থাকে। এসব এসিড খুব অল্প পরিমাণে থাকে বলে আমাদের কোন ক্ষতি হয় না। তবে পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত এসিড যেমন – হাইড্রোক্লোরিক এসিড, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি অত্যন্ত তীব্র। এগুলোকে অজৈব বা খনিজ অ্যাসিডও বলা হয়। তাহলে আর দেরি না করে চলুন এসিড কাকে বলে? এসিডের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও চেনার উপায় কি? ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নেই।
অম্ল বা এসিড কাকে বলে?
যৌগের অণুতে এক বা একাধিক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং ঐ প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেনকে ধাতু বা যৌগমূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত করা যায় এবং যা ক্ষারকের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে তাকে অম্ল বা এসিড(Acid) বলে।
আবার বলা যায়, যে সকল পদার্থ জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺) দান করে তাদের কে এসিড বলে। অ্যাসিড ২ ধরণের হয়ে থাকে। এগুলো হলো –
- সবল বা শক্তিশালী এসিড
- দুর্বল এসিড
সবল বা শক্তিশালী এসিড কাকে বলে?
সবল বা শক্তিশালী এসিড: যে সকল এসিড জলীয় দ্রবণে সম্পুর্নরুপে আয়নিত হয় তাদেরকে সবল এসিড বলে। এগুলো অত্যন্ত ক্ষয়কারী এবং ত্বকের তীব্র জ্বলন ঘটায়।
যেমন – নাইট্রিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl)। এটি প্রায় সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয়ে H+ ও Cl- আয়ন উৎপন্ন করে।
দুর্বল অ্যাসিড কাকে বলে?
দুর্বল এসিড : যেসব এসিড জলীয় দ্রবণে আংশিকভাবে আয়নিত হয়ে অল্প পরিমাণ হাইড্রোজেন আয়ন (H+) উৎপন্ন করে তাদেরকে দুর্বল এসিড বলে। সকল জৈব এসিডকে দুর্বল এসিড বলা হয়। এগুলো হালকা ক্ষয়কারী এবং সাধারণত ত্বকে প্রভাবিত করে না।
যেমন : এসিটিক এসিড বা ইথানয়িক এসিড (CH₃COOH), সাইট্রিক এসিড (C6H8O7),টারটারিক এসিড ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু এসিড আছে যা জৈব এসিড না হলেও দুর্বল এসিড। যেমন : কার্বনিক এসিড (H₂CO₃)
এসিডের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও চেনার উপায় কি?
আমাদের সামনে যদি অনেকগুলো যৌগের দিয়ে বলা হয়, এগুলোর মাঝে অ্যাসিডগুলো আলাদা কর। তাহলে অনেকেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাবে। আসলে সংকেত দেখে অ্যাসিড চিনতে পারা জরুরি। তাই এসিড চিনতে হলে এর বৈশিষ্ট্যসমূহ ও চেনার উপায়গুলো ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। নিম্নে অ্যাসিডের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায় দেওয়া হলো –
০১) এসিড যৌগের প্রথমেই H পরমাণু থাকবে অর্থাৎ অ্যাসিডে প্রতিস্থাপনীয় H থাকবে। যেমন –
HCl H₂SO₄
↑ ↑
H━━⤴
০২) এসিড জলীয় দ্রবণে অবশ্যই প্রোটন (H⁺) উৎপন্ন করে বা দান করে। অর্থাৎ প্রতিটি অ্যাসিডই হাইড্রোজেন আয়ন দান করতে পারে। যেমন –
HCl(aq) → H⁺ + Cl⁻
০৩) এসিড নীল লিটমাসকে লাল করে।
০৪) এসিডের pᵸ মান 7 এর কম হবে।
০৫) Acid টক স্বাদ যুক্ত হয়.
০৬) অ্যাসিড ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে। যেমন –
HCL + NaOH = NaCl + H2O
H2SO4 + Ca(OH)2 = CaSO4 + 2H2O
MgO + H2SO4=MgSO4 + H2O
০৭) হাইড্রোজেনের চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতু (যেমন -Mg, Zn, Fe, Al ইত্যাদি) সাথে এসিডের বিক্রিয়ায় অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন পরমাণু ধাতু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে লবণ গঠন করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়। যেমন –
Mg + H2SO4 = MgSO4 + H2
Zn + H2SO4 = ZnSO4 + H2
Mg + 2HCl = MgCl2 + H2
০৮) Acid ধাতুর কার্বনেটের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে।
০৯) যে অ্যাসিড যত বেশি হাইড্রোজেন আয়ন দান করে, সে Acid তত বেশি শক্তিশালী।
১০) দ্রবণ ছাড়া ঘন এসিড অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়, যা মানুষের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।
১১) আয়নীয় বিয়োজনের ফলে এসিডের জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়নরূপে কেবলমাত্র H+ আয়ন বর্তমান থাকে। যেমন –
HCL ⇌ H+ + Cl–
H2SO4 = 2H+ + SO4—
সংকেতসহ কয়েকটি এসিডের উদাহরণ
নিম্নে সংকেতসহ কয়েকটি অ্যাসিডের উদাহরণ দেওয়া হলো:
এসিডের নাম | রাসায়নিক সংকেত |
---|---|
সালফিউরিক অ্যাসিড | H2SO4 |
নাইট্রিক অ্যাসিড | HNO3 |
হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড | HF |
হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড | HCL |
ক্লোরাস অ্যাসিড | HCLO2 |
ক্লোরিক অ্যাসিড | HClO23 |
পারক্লোরিক অ্যাসিড | HCLO4 |
সাইট্রিক অ্যাসিড | C₆H₈O₇ |
অক্সালিক এসিড | C2H2O4 |
কার্বনিক এসিড | H2CO3 |
হাইড্রোজোয়িক এসিড | N3H |
এসিটিক এসিড | CH3COOH |
টারটারিক এসিড | C4H6O6 |
ম্যালিক অ্যাসিড | C4H6O5 |
ল্যাকটিক অ্যাসিড | CH₃CHCOOH / C3H6O3 |
ফরমিক অ্যাসিড(মিথানয়িক অ্যাসিড) | CH₂O₂ |
ফসফরিক অ্যাসিড | H3PO4 |
বরিক অ্যাসিড | H3BO3 |
হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড | HClO |
তো আজকে এখানেই শেষ করছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।