আইসোটোপ কাকে বলে? আইসোটোপের ধর্ম, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার

আইসোটোপ কাকে বলে? Isotope কি?

যেসকল মৌলের বিভিন্ন ধরনের পরমাণু  থাকে এবং এদের প্রোটন বা পারমাণবিক সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন হয় তাদেরকে আইসোটোপ বলা হয়।

আবার বলা যায়, যেসকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু নিউটন সংখ্যা বা ভর সংখ্যা ভিন্ন তাদের আইসোটোপ বলে। আইসোটোপ সাধারণত একই মৌলের পরমাণুর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

যেমন – হাইড্রোজেনের ৩ টি আইসোটোপ। এগুলো হলো –

  • প্রোটিয়াম 1H1
  • ডিউটেরিয়াম 1H2
  • ট্রিটিয়াম 1H3

উদাহরণ স্বরূপ আরও বলা যায় যে, বেশিরভাগ কার্বনের পরমাণুতে ৬টি প্রোটন এবং ৬টি নিউট্রন থাকে। কিন্তু কার্বনের কিছু পরমাণুতে ৭টি বা ৮টি নিউট্রন থাকে। আর একারণে বলা হয় কার্বন এ তিনটি আইসোটোপ থাকে।

আবার বলা যায়, ইউরেনিয়ামের ৩ টি আইসোটোপ রয়েছে। এগুলো হলো –

  • 92U234
  • 92U235
  • 92U238

আইসোটোপের ধর্ম

আইসোটোপের ধর্মগুলো হলো-

  • আইসোটোপ বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও কণা বিকিরণ করে থাকে।
  • আইসোটোপ স্থায়ী হয়।

আইসোটোপের বৈশিষ্ট্য

আইসোটোপের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে কেন্দ্র করেই আইসোটোপের পরিচয় পাওয়া যায়। নিচে কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো-

  • আইসোটোপের পারমাণবিক সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন হয়।
  • আইসোটোপের রাসায়নিক ধর্ম হলো যোজ্যতা ইলেকট্রন সব সময় অভিন্ন থাকে।
  • আইসোটোপের ভর,গলনাঙ্ক,ঘনত্ব,স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি উপাদানগুলোর ভৌত ধর্ম সব সময় পৃথক হয়।
  • আইসোটোপের ক্ষেত্রে একই মৌলের পর্যায় সারণী একই অবস্থানে থাকে।
  • যেমন – হাইড্রোজেনের ৩ টি আইসোটোপ। এগুলো হলো – প্রোটিয়াম 1H1, ডিউটেরিয়াম 1H2, ট্রিটিয়াম 1H3

আইসোটোপ এর ব্যবহার

নিচে আইসোটোপের কিছু ব্যবহার দেওয়া হলো-

  • আইসোটোপের সাহায্যে তেজস্ক্রিয় কার্বনের মাধ্যমে পুরাতন শিলা,গাছ এবং পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা যায়।
  • কোবাল্টের Isotope ক্যান্সার কোষ এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে ক্যান্সার এবং টিউমার চিকিৎসার জন্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (১৩১) ব্যবহার করা হয়।
  • কৃষিক্ষেত্রে Isotope ব্যবহার করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে নানারকম তথ্য জানা যায়।
  • বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি প্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (C13 , N15 , O18 , S35 ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয় ।
  • খাদ্য ও ফলমূল সংরক্ষণে Isotope ব্যাকটেরিয়া সহ নানা ধরণের জীবাণু ধ্বংস করে থাকে।
  • মাটির মধ্যে থাকা বিভিন্ন ফসলের বয়স নির্ণয় করে থাকে Isotope.
  • আইসোটোপ পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • ফসলে কোন ধরনের সার কতটুকু পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে তা নির্ণয় করতে আইসোটোপ সহায়তা করে থাকে।
  • ডাক্তারি সব ধরণের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
  • মানবদেহে যদি কোন ক্ষুদ্র রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সনাক্ত করতে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
  • মানবদেহের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং নিরাময় করতে আইসোটোপ ব্যবহার করে থাকে।

আইসোবার কী?

যেসকল পরমাণুর ভর সংখ্যা সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন, তাদের আইসোবার বলে। আইসোবার ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণুর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন – 26Fe58 ও 27N58.

আইসোটোন কি বা কাকে বলে?

যেসকল পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন তাদের আইসোটোন বলে। আইসোটোন ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণুর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। যেমন – 7N156N14

ভর সংখ্যা = প্রোটন সংখ্যা + নিউট্রন সংখ্যা

আইসোমার কি? উদাহরণ দাও

যেসকল পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা এবং ভর সংখ্যা একই কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ গঠন ভিন্ন, তাদেরকে পরস্পরের আইসোমার বলে। যেমন – ইথানল, ডাই মিথাইল ইথাইল ইত্যাদি।

রেডিও আইসোটোপ কি?

যেসকল আইসোটোপ সামান্য সময়ের জন্য কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে তাদের রেডিও আইসোটোপ বলা হয়। যেমন – প্লুটোনিয়াম, রেডিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি।

রেডিও আইসোটোপের ব্যবহার –

  • কৃষিক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ ধ্বংস করা
  • অধিক ফসল উৎপাদন
  • বীজ সংরক্ষণ
  • ক্যান্সার নিয়াময়ের জন্য
  • টিউমারের জন্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়।
  • এগুলো ছাড়াও গবেষণাকার্যে ও শিল্পবিজ্ঞানে রেডিও আইসোটোপের ব্যবহার রয়েছে। ইত্যাদি।

আইসোটোপ => প্রোটন সংখ্যা সমান আইসোবার => ভর সংখ্যা সমান আইসোটোন => নিউট্রন সংখ্যা সমান

তো আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করি, আইসোটোপ কাকে বলে? আইসোটোপের ধর্ম, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার, আইসোবার, আইসোটোন, আইসোমার, রেডিও আইসোটোপ ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *