খুশকি খুবই সাধারণ সমস্যা। প্রায় প্রত্যেক মানুষের মাথায় জীবনে কোনো না কোনো সময় খুশকি হয়েছে। মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্পে সব সময় কিছু নতুন কোষ হয় আর কিছু পুরানো কোষ মরে যায়। এটা একটা চক্র কিন্তু যখন পুরানো মরা কোষ জমে যায় এবং ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয় তখন খুশকি হয়। মাথা থেকে সাদা আঁশের মতো গুঁড়া পড়তে থাকে এবং সেই সাথে চুলকানি হয়।
খুশকির কারণ
তেলের ব্যবহার : প্রচুর তেলের ব্যবহার খুশকি হওয়ার একটি কারণ। মাথার ত্বক তেলের কারণে চিটচিটে হয়ে খুশকি হয়।
যথাযথ শ্যাম্পু ব্যবহার না করা : যথাযথ শ্যাম্পু ব্যবহার না করার কারণেও খুশকি হতে পারে। মাথার ত্বক বা স্ক্যাল্প তৈলাক্ত হলেও খুশকি হওয়ার প্রবণতা থাকে। কিশোর বা তরুণ বয়সে ব্রনের সাথে খুশকিও খুব স্বাভাবিক সমস্যা। স্ক্যাল্প অত্যাধিক শুষ্ক হলেও খুশকি হতে পারে।
কিন্তু ত্বক সমস্যা যেমন সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, সোরিয়াসিস, একজিমা ফাঙ্গাল ইনফেকশন এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা সংক্রমণ খুশকির মতো মনে হতে পারে। মানসিক দুশ্চিন্তার কারণও মাথায় খুশকি হয়।
খুশকির চিকিৎসা
মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ কমিয়ে আনা বা নস্ট করতে পারলেই খুশকি কমে যাবে। তাই খুসকি দূর করার জন্য ডাক্তারগণ একমাত্র বিজ্ঞান ভিত্তিক ছত্রাকনাশক শ্যাম্পু কিটাকোনাজল (Ketoconazole 2%) ব্যবহারের উপদেশ দিয়ে থাকেন।
এই শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম হলো খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে। যাদের নিয়মিত খুশকি হয় তারা ১ বা ২ সপ্তাহ পর পর প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে তারা দীর্ঘদিন খুশকিমুক্ত থাকতে পারবেন। এছাড়াও শ্যাম্পুটি তৈলাক্ত সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে ত্বকের তৈলাক্ত উপাদান নিঃসরণ কমিয়ে আনে যার ফলে খুশকি দূর হয়। এছাড়া এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি কমে, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। যদি কারও ফাঙ্গাল বা অন্যান্য একজিমা জাতীয় অসুখ না থাকে তাহলে এই শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি ৯৫% ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। অবশ্য যদি ইনফেকশন হয়ে যায় বা চুলকানি বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা লাগতে পারে।
খুশকি প্রতিরোধে করনীয়
১। শ্যাম্পু ব্যবহার
যাঁদের প্রায়ই খুশকি হয় তাঁরা নিয়মিত চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
২। মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার
বাইরে বের হলে ধুলোবালি মাথায় জমে খুশকির প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সমস্যা দূর করতে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। এজন্য মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া সহ চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
খুশকিমুক্ত চুলের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। চুল অপরিষ্কার থাকলেই খুশকি বেশি হয়। তাই নিয়মিত চূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
৫। ভেজা চূল জলদি শুকিয়ে নেওয়া
ভেজা অবস্থায় চুল বেঁধে রাখা ঠিক নয়। এজন্য গোছলের পর যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালো করে মুছে নিতে হবে। প্রয়োজনে ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিতে হবে। এছাড়া চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নেওয়া ভালো।
খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করা দরকার। নইলে এই সমস্যা থেকে চুলপড়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই খুশকি প্রতিরোধে শ্যম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবারের বিষয়েও সমান মনযোগী হওয়া প্রয়োজন।