সাইবার ক্যাফে (cyber cafe in Bangla)
তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সাইবার ক্যাফে এক বিশেষ নাম। এর ফলে তরুণ-তরুণীসহ সবাই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ঘোরাফেরার পাশাপাশি, পড়াশোনা, চাকরি, বিনোদন সম্পর্কিত নানা খবরের খোঁজ করা এখন কোনো ব্যাপার নয়। তবেই না সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারা যাবে এমন চিন্তাভাবনা এখন প্রায় সবার। কিন্তু এর জন্য দরকার কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ। যাদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই তারা ভির জমাচ্ছেন সাইবার ক্যাফেগুলোতে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনলাইন ইন্টারনেট সেবা চালুর পর ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও এর ব্যাপক ব্যাবহার থেকেই সাইবার ক্যাফের উৎপত্তি। সাইবার ক্যাফের প্রচলন প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশেও নতুন একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এ সংস্কৃতির নাম সাইবার সংস্কৃতি।
সাইবার ক্যাফে কি?
যেকোনো ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে নিজের ইচ্ছামত সময় ধরে ইন্টারনেটের জগতে ঘুরে বেড়াতে পারেন, পাশাপাশি চা-কফি, হালকা নাস্তা খেতে খেতে দীর্ঘক্ষণ ইন্টারনেট চ্যাট, ই-মেইল করেন যে জায়গায়, সেটাই হলো সাইবার ক্যাফে। অনেক ক্ষেত্রে একে সাইবার কিওস্কও বলা হয়।
সাইবার ক্যাফের বৈশিষ্ট্য
সাইবার ক্যাফের যে বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায় তা হলো–
সাইবার ক্যাফে সবার জন্য উন্মুক্ত। এতে রয়েছে চমৎকার সাজসজ্জা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সহযোগিতার জন্য এখানে আছে অভিজ্ঞ গাইড। সাইবার ক্যাফের কম্পিউটারগুলো মাল্টিমিডিয়া যুক্ত যাতে নেট-টু-ফোন, ওয়েব ক্যামেরা, ভিডিও চ্যাট, ব্রাউজিং সবকিছু করা যায়। বিদ্যুৎ গেলে তাৎক্ষনিক জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রত্যেকে যার যার কম্পিউটারের সামনে নিজেকে নিরাপদ মনে করে, অন্য কেউ এ অধিকার হরণ করে না। ভাইরাস আক্রমণ ও নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিরাপদ রাখার জন্য সাইবার ক্যাফেগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাছাড়া গ্রাহকদের বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী হালকা নাশতা, চা-কফি প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “আমাদের দেশে এখন অলিতে গলিতে সাইবার ক্যাফে গড়ে তুলতে হবে। কেননা মানুষ সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে ইন্টারনেটের জগতে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।”
বাংলাদেশে অনলাইন ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৭ সালে। এরপর দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নেট সংযোগ দেওয়ার জন্য গড়ে উঠতে থাকে নানা (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) আইএসপি। সেই পথ ধরে দেশে ‘ব্রডব্যান্ড’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পুরোনো ‘ডায়ালআপ’ ফোন করে ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার প্রযুক্ত সার্ভিস অর্থাৎ টেলিফোনের মডেমের সাহায্যে নেট সংযোগের বিকল্প হিসেবে ব্রডব্যান্ড ব্যবস্থা চালু হয়।
ব্রডব্যান্ড বলতে কেবল মডেমের সাহায্যে কম্পিউটার এবং সেট টপ বক্স লাগিয়ে টিভিতে/মনিটরে যে নেট সংযোগ দেওয়া হয় তাকে বোঝায়। আরো আছে রেডিও, সিহক,, ডিএসএল। মূলত এই ব্রডব্যান্ড চালু হওয়ার পর দেশে অসংখ্য সাইবার ক্যাফে গড়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার নামমাত্র মূল্যে চলে এসেছে। তাই ব্রডব্যান্ডও সাইবার ক্যাফে একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সাইবার ক্যাফেগুলোর গুণ বিকাশের পেছনে ব্রডব্যান্ডের ভূমিকা রয়েছে বেশি।
সাইবার ক্যাফে এর ইতিবাচক দিক
সাইবার ক্যাফে গড়ে ওঠার ফলে সমাজে বিশেষ করে তরুণ-তরণীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আগে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আড্ডা কিংবা বদ অভ্যাস যেমন নেশা করা, অসামাজিক কাজে লিপ্ত থেকে নিজের দেহ, মন ও রাষ্ট্রের অবক্ষয়মূলক প্রভৃতি কাজ করত তা থেকে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী কিছুটা ফিরেছে। তারা এখন সাইবার ক্যাফেতে কম্পিউটারের সামনে বসে কেউ ইন্টারনেট ব্রাউজিং করছে, বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়ের সাথে চ্যাট করছে অথবা ই-মেইলে দরকারি কাজ করছে।
‘সাইবার ক্যাফে’ গড়ার জন্য যা প্রয়োজন
যে কেউ ইচ্ছে করলে একটি সাইবার ক্যাফে গড়তে পারেন। প্রথমত জায়গা বেছে নিতে হবে। উদ্যোক্তারা নিজস্ব বাসা যদি প্রধানত অফিস পাড়া ট্রেনিং সেন্টারগুলোর আশপাশে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক এলাকাতে হয় তাহলে তো কথাই নেই। যদি জায়গা না থাকে তাহলে উপরিউক্ত স্থানগুলোর পাশে অথবা কোনো রাস্তার পাশে, কিংবা চেনাজানা এলাকায় সাইবার ক্যাফের জন্য স্থান নির্বাচন করা যায়।
সাইবার ক্যাফে গড়ে তোলার জন্য ইউপিএস ব্যাকআপ, জেনারেটরসহ কয়েকটি ভালো মানের কম্পিউটার দরকার হয়। আজকাল ভালোমানের সাইবার ক্যাফের কোনো বিকল্প নেই। কেননা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করতে নানা সুবিধা যেমন নেট টু কোড, ভিডিও চ্যাট, প্রভৃতি করতে ব্রাউজারের সংযোগ দরকার। সাইবার ক্যাফে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং অর্থলগ্নিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেওয়া শুরু করেছে।
সাইবার ক্যাফে সম্পর্কে অন্যন্য তথ্য
ইন্টারনেটে ব্রডব্যান্ড চালু হওয়ার পর থেকে খরচ আগের তুলনায় কমে এসেছে। নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে সদস্য হওয়া যায়। সাইবার ক্যাফে গুলোতে প্রি-পেইড কার্ড ও বিশেষ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।