ওযু কাকে বলে? ওযুর সুন্নত ও ফরজ কয়টি ও কি কি?
ওযু আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে ওযু বলে। (সূরা বাকারা,আয়াত:২২২)
ওযুর দোয়া
ওযু শুরু করার আগে এই দোয়া পড়তে হবে –
বাংলা উচ্চারণঃ “বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম, ওয়ালহামদু লিল্লালি আ’লা দীনিল ইসলাম, আল ইসলামু হাক্বকুন, ওয়াল কুফরু বা-ত্বিলুন, আল ইসলামু নূরুন, ওয়াল কুফরু জুলমাতুন।”
অর্থঃ “সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বমহান আল্লাহর নামে অজু শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলারই প্রাপ্য – যিনি আমাকে দ্বীন ইসলামের উপর রেখেছেন। ইসলাম সত্য এবং আলোক স্বরূপ আর কুফরী মিথ্যা ও অন্ধকারতুল্য।”
অজু করা শেষ হলে নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়া–
বাংলা উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মাজ্বআলনী মিনাত তাওয়্যাবীনা ওয়াজ্বআলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীন।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী এবং পবিত্রতা হাসিলকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর।”
ওযুর নিয়ত
বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফ’ইল হাদাছি ওয়াস্তিবাহাতাল লিছছালাতি ওয়া তাক্বাররুবান ইল্লাল্লা-হি তা’আলা”
অর্থঃ “আমি নাপাকি দূর করার জন্য, বিশুদ্ধভাবে নামাজ পড়ার ও আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে অজু করছি।”
ওযুর সুন্নত
ওযুর সুন্নত ১১টি। এগুলো হলো–
- নিয়ত করা,
- বিসমিল্লাহ বলে ওযু শুরু করা,
- দাঁত মাজা,
- কব্জি পর্যন্ত দুই হাত তিনবার ধোয়া,
- তিনবার কুলি করা,
- পানি দিয়ে তিনবার নাক সাফ করা,
- প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার ধোয়া,
- কান মাসাহ করা,
- হাত-পা ধোয়ার সময় ডান হাত ও ডান পা আগে ধোয়া,
- সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসাহ করা,
- ওযুর কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে পর পর করা।
- মুখমণ্ডল ধোয়া।
- কনুইসহ উভয় হাত ধোয়া।
- চার ভাগের এক ভাগ মাথা মাসাহ করা।
- গিরাসহ উভয় পা ধোয়া।
- কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে অজু করতে বসিবে
- পাক পানির বদনা /মগ বাম পার্শ্বে রেখে অজুর দোয়া (বিসমিল্লাহিল আলিয়্যিল আজীম…….) পড়ে তারপর অজুর নিয়ত করতে হবে। (আরবি নিয়ত না জানলে বাংলাতেই করতে হবে)
- এরপর প্রথমে দু-হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত ধুতে হবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলো খেলাল করবে।
- তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে তিনবার গড়গড়া সহ কুলি করতে হবে। ( রোজাদার হলে গড়গড়া করা যাবে না)
- এরপর নাকে পানি দিয়ে তিনবার নাক পরিষ্কার করতে হবে। (বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করায়া নাক সাফ করবে।)
- তারপর তিনবার সমস্ত মুখমণ্ডল এমনভাবে ধৌত করতে হবে যাতে চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে। দাড়ি ঘন হলে খিলাল করতে হবে।
- অতঃপর ডান হাত এবং পরে বাম হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে। হাতে ঘড়ি, আংটি ইত্যাদি থাকলে তা নাড়াচাড়া করতে হবে যাতে সবখানে পানি পৌঁছায়।
- তারপর দুহাত ভিজিয়ে মাথা ও কান মাসেহ্ করতে হবে। মাসেহ্ করার সময় দু-হাতের বুড়ো ও শাহাদাত আঙ্গুলি আলাদা রেখে বাকি তিন আঙ্গুলি মিলিয়ে আঙ্গুলিগুলোর ভিতর দিক দিয়ে কপালের চুলের গোড়া থেকে পিছন দিকে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ্ করতে হবে। এরপর শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে হাতের আঙ্গুলিগুলোর পিঠ দিয়ে ঘাড় মাসেহ্ করতে হবে।
- তারপর প্রথমে ডান পা এবং পরে বাম পা তিনবার গিরা পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে যাতে একটু জায়গাও বাকি না থাকে। পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করতে হবে।