নিফাক কাকে বলে? নিফাকের কুফল ও প্রতিকার।

নিফাক হচ্ছে একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ভণ্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখীনীতি ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলে। অর্থাৎ, এক কথায় অন্তরে কুফর রেখে মুখে মুখে ইমানের কথা প্রকাশকে নিফাক বলে।

যারা এরূপ কাজ করে তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়। মুনাফিকরা অন্তরের দিক থেকে কাফির ও অবাধ্য। কিন্তু বাহ্যিকভাবে ইসলাম ও ঈমান স্বীকার করে এবং মুসলিমদের নেই এবাদত পালন করে। মুনাফিকরা ইসলামের জন্য ভয়ঙ্কর শত্রু।

রাসুলুল্লাহ (সা:) মুনাফিকদের চিহ্ন বর্ণনা করে বলেছেন- মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি।

নিফাকের কুফল ও প্রতিকার
নিফাক একটি মারাত্মক পাপ। এটি মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংস করে দেয়। নিফাক মানুষের মধ্যে মিথ্যাচারের অভ্যাস তৈরি করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন- “আর আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী।” (সূরা আল মুনাফিকুন, আয়াত-১)

মুনাফিকরা মিথ্যার পাশাপাশি অন্যান্য খারাপ ও অনৈতিক কার্যকলাপ করে থাকে। দুনিয়াবী লোভ-লালসা ও স্বার্থ রক্ষায় তারা মানুষের অকল্যাণ করতেও দ্বিধা করে না। মুনাফিকরা পরনিন্দা-পরচর্চা করে। ফলে সমাজের সন্দেহ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মুনাফিকরা ভেতরে এক আর বাইরে অন্যরকম হয় লোকজন তাদের বিশ্বাস করে না। উপরন্ত তাদের সন্দেহ ও ঘৃণার চোখে দেখে। সমাজে তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জীবন কাটায়।

মুনাফিকরা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর। কারণ তারা মুসলমানদের সাথে মিশে ইসলামের শত্রুদের সাহায্য করে। মুসলমানদের গোপন তথ্য ও দুর্বলতার কথা শত্রুদের জানিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ(সা:) এর যুগেও মদিনাতে মুনাফিকরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।

তারা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে থেকেও আল্লাহতায়ালার অবাধ্য ছিল। পরকালীন জীবনে মুনাফিকের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। তাদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন- “নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।” (সূরা আন নিসা, আয়াত-১৪৫)

নিফাক একটি ঘৃণ্য কাজ। তাই আমরা প্রতিটি সময় নিফাক থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সকলের নিকট নিফাকের কুফল ও পরিণতির কথা তুলে ধরব এবং তাদের সতর্ক করব। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিফাকের যে তিনটি চিহ্ন বা নিদর্শনের কথা বলেছেন আমরা সেগুলো থেকে সবসময় দূরে থাকার চেষ্টা করব এবং জীবনে উত্তম চরিত্র অনুশীলন করব।

‘নিফাক নৈতিকতা ও মানবিক আদর্শের বিপরীত কাজ’- ব্যাখ্যা করো।
নিফাক মানুষের নীতিবোধ ও মানবিক মূল্যবোধ নষ্ট করে দেয়। এ কারণে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে।

নিফাকের ফলে মুনাফিকরা বিভিন্ন ধরনের খারাপ ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। পার্থিব লোভ-লালসা ও স্বার্থ রক্ষায় তারা মানুষের ক্ষতি করতেও পিছপা হয় না। তারা পরনিন্দা ও পরচর্চা করে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মুনাফিকরা ভেতরে এক আর বাইরে অন্য রকম। তাই তাদের প্রতি মানুষের বিশ্বাস থাকে না। এ কারণে বলা হয় নিফাক নৈতিকতা ও মানবিকতার বিপরীত কাজ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *