পড়াশোনা

সিপিইউ কি? সিপিইউ এর বিভিন্ন অংশ What is CPU?

1 min read

কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় অংশ হলাে সিপিইউ (CPU)। অবশ্য সিপিইউ বলতে আগের দিনে বােঝাত কম্পিউটারের মধ্যবর্তী কেন্দ্রীয় অংশটিকে। এখন সিপিইউ বলতে শুধু মাইক্রোপ্রসেসরকে বােঝানাে হয়। কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ (Central Processing Unit) বা সিপিইউ কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিপিইউকে কম্পিউটারের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সংক্ষেপে একে শুধু প্রসেসরও বলা হয়। কোন প্রোগ্রামের নির্দেশ Interpret করা ও ডেটাকে প্রসেস করা সিপিইউ-এর কাজ। সিপিইউ অনেকগুলাে ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিটের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় প্রজন্ম ও তৃতীয় প্রজন্মের মেইনফ্রেম, মিনিফ্রেম ও সুপার কম্পিউটারে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে প্রচুর চিপের সমন্বয়ে এবং বহু কার্ডের সংমিশ্রণে সৃষ্ট সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ)। ১৯৭০ সালে একক চিপের মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার হবার পর অন্যান্য সিপিইউগুলাের জায়গা মাইক্রোপ্রসেসর দখল করে নেয়। কম্পিউটারের ইনপুট, আউটপুট, স্মৃতি ও অন্যান্য বর্তনী সিপিইউ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। সিপিইউকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়-

ক) গাণিতিক যুক্তি ইউনিট (ALU = Arithmetic Logic Unit)
খ) নিয়ন্ত্রণ ইউনিট (Control Unit)
গ) রেজিস্টার স্মৃতি (Register Memory)

মাইক্রোপ্রসেসর (Microprocessor)
মাইক্রোকম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউকে মাইক্রোপ্রসেসর বলা হয়। মাইক্রোপ্রসেসর একক চিপ বা আইসি আকারে মাইক্রোকমপিউটারের অভ্যন্তরে সন্নিবিষ্ট থাকে। অসংখ্য ইন্টিগ্রেটেড (IC) সার্কিট দিয়ে প্রসেসর তৈরি হয়। আইসি তৈরি হয় ট্রানজিস্টর দিয়ে। একটি প্রসেসরে ট্রানজিস্টর এর সংখ্যা যত বেশি হবে প্রসেসরের গতি তত বেশি হবে। প্রসেসরের গতি সাধারণত Hz (হার্জ) এককে পরিমাপ করা হয়। বর্তমানে প্রসেসর জগতে ইন্টেল কোর i7 এবং i5 বহুল ব্যবহৃত হয়। এগুলাে উচ্চগতিসম্পন্ন GHz (গিগাহার্জ) এককের প্রসেসর। প্রথম প্রসেসর ইন্টেল-৪০০৪ এ ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৩০০টি অপরদিকে কোর i7 প্রসেসরে ট্রানজিস্টর সংখ্যা ২২৭০০০০০০০টি। বর্তমানে প্রচলিত মাইক্রোপ্রসেসর সাধারণভাবে নিম্নোক্ত তিনভাগে ভাগ করা যায়-
১. সিস্ক প্রসেসর (CISC Processor)
২. রিস্ক প্রসেসর (RISC Processor)
৩. বিশেষ ব্যবহার কার্যের প্রসেসর (Special Purpose PrOCessor)

সিস্ক প্রসেসর (CISC Processor)

  1. CISC = Complex Instruction Set Computing ।
  2. তুলনামূলকভাবে জটিল ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করা হয়।
  3. এসেম্বলি ভাষায় প্রােগ্রামিং এর জন্য বেশি উপযােগী।

উদাহরণ: Intel – Pentium, Motorola – 6800, AMD (Advanced Micro Device) – K6, AMD – Athlon, Cyrix – 486DLC, IBM-Blue Lighting, TI ( Texas Instrument ) – 486SLC/E ইত্যাদি।

রিস্ক প্রসেসর (RISC Processor)

  1. RISC = Reduced Instruction Set Computing ।
  2. সরল ও ছোট মােডের ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করা হয়।
  3. উচ্চতর ভাষায় প্রােগ্রামিং এর জন্য বেশি উপযােগী।

উদাহরণ: Motorola Power PC – 601, DEC Alpha – 21064, MIPs – R10000, SPARC – TMS390S10 ইত্যাদি।

বিশেষ ব্যবহার কার্যের প্রসেসর (Special Purpose Processor)
বিশেষ কোন কাজের উদ্দেশ্যে অথবা প্রধান প্রসেসরের কার্যক্ষমতা বাড়ানাের জন্য যে সকল প্রসেসর ব্যবহৃত হয়, তাকে বিশেষ ব্যবহার কার্যের প্রসেসর বলে। কোপ্রসেসর হলাে বিশেষ ব্যবহার কার্যের প্রসেসরের উদাহরণ।

মাইক্রোপ্রসেসরের মৌলিক কাঠামাে
একটি প্রসেসরের মৌলিক কাঠামাে গড়ে উঠেছে নিচের প্রদত্ত ইউনিটগুলাের সমন্বয়েঃ

কোর: প্রসেসরের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে এক্সিকিউপন তথা নির্বাহ ইউনিট, এটিকে কোর বলা হয়।
ব্রাঞ্চ প্রিডিক্টর: এ ইউনিটের কাজ হচ্ছে কন্ডিশনাল জাম্পের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা অনুমান করে ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে করে পি-ফেচ ও ডিকোড ইউনিট আগেভাগেই ইনস্ট্রাকশনগুলাে পেয়ে যায়।
ফ্লোটিং পয়েন্ট ইউনিট: যে অংশের মাধ্যমে ভগ্নাংশ বা মাল্টিমিডিয়া ইন্সট্রাকশন নির্বাহ হয়।
প্রাইমারি ক্যাশ (L1 ক্যাশ): বাহ্যিক বা L2 ক্যাশ থেকে ইন্ট্রাকশন বা ডেটা সংগ্রহ করে কাজকে ত্বরান্বিত করে।
বাস ইন্টারফেস: বাহ্যিক জগতের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য ডেটা এবং ইন্সট্রাকশন কোডকে সংমিশ্রণ ঘটায়।

মাইক্রোপ্রসেসরের বৈশিষ্ট্য (Feature of Microprocessor)
মাইক্রোপ্রসেসর স্পিড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে শুধু স্পিডই কার্যক্ষমতা যাচাইয়ের একমাত্র উপাদান নয়। প্রসেসরের কার্যক্ষমতা বা পারফরমেন্সকে মূল্যায়নের জন্য নিচে বর্ণিত বিষয়গুলাে বিবেচনায় আনা আবশ্যক।

  • ক্লক স্পিড (Clock Speed): মাইক্রোপ্রসেসর কত স্পিডে ইন্ট্রাকশন নির্বাহ করতে পারে তা তার ক্লক স্পিডের উপর নির্ভর করে। প্রতিটি ইন্সট্রাকশন নির্বাহে সিপিইউ এর ফিক্সড ক্লক টিকস ‘ (অথবা ক্লক সাইকেলস) এর প্রয়ােজন হয়। ক্লক যত দ্রুতগতির হয় সিপিইউ প্রতি সেকেন্ডে ততসংখ্যাক ইন্সট্রাকশন নির্বাহ করতে পারে।
  • ফ্লোটিং পয়েন্ট ইউনিট (FPU): মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যদক্ষতার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে ফ্লোটিং পয়েন্ট হিসাবের ক্ষেত্রে সে কত পারদর্শী। বিশেষ করে থ্রিডি গেমস, থ্রিডি রেকর্ডিং এবং গ্রাফিক্স ম্যানিপুলেশনের ক্ষেত্রে এ ইউনিট অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
  • লেভেল থ্রি ক্যাশ (L3 Cache): চিপের অভ্যন্তরস্থ L3 ক্যাশ মেমােরির স্পিড ও সাইজ কাৰ্যদক্ষতার ব্যাপারে বেশ কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
  • মাল্টিমিডিয়া ইন্ট্রাকশন (Multimedia Instruction): বর্তমানে প্রচলিত সকল মাইক্রোপ্রসেসরই মাল্টিমিডিয়া ইন্সট্রাকশন রয়েছে যা ত্রিমাত্রিক অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের জন্য কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
  • বাস-স্পিড (Bus Speed): মাদারবাের্ডের চিপসেট প্রসেসরসহ র‌্যাম ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের সাথে যে গতিতে যােগাযােগ ঘটাতে সক্ষম তাকে ফ্রন্টসাইড বাস স্পিড বলা হয়। যে প্রসেসরের বাস স্পিড যত বেশি সেটি তত উন্নত প্রসেসর হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
মাইক্রোপ্রসেসরের কাজ (Fuction of Microprocessor)
  • প্রােগ্রামের নির্দেশ Interpret করে এবং ডেটাকে প্রসেস করে।
  • গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজ করে।
  • ইনপুট, আউটপুট, মেমােরি ও অন্যান্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • মেমােরিতে রক্ষিত প্রােগ্রাম নির্বাহ করা।
  • কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় করে।
  • মেমােরি ও ইনপুট/আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে ডেটা স্থানান্তর করে।
  • ইস্ট্রাকশন ডিকোড করে।
  • কম্পিউটারের সকল অংশের জন্য টাইমিং ও কন্ট্রোল সিগন্যাল প্রদান করে।
সিপিইউ এর সংগঠন (Organization of CPU)
কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। এই অংশগুলাে হচ্ছেঃ
  1. গাণিতিক যুক্তি অংশ (Arithmatic and Logic Unit)
  2. নিয়ন্ত্রণ অংশ (Control Unit)
  3. রেজিস্টার স্মৃতি (Register Memory)
কন্ট্রোল ইউনিট (Control Unit)
যে অংশের মাধ্যমে কম্পিউটারের সকল কার্য নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে কন্ট্রোল ইউনিট বলা হয়। এটি কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসরের একটি অংশ যা কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
কন্ট্রোল ইউনিটের কাজ
• ইনপুট ডিভাইসমূহের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশাবলির ধারাবাহিকতা অর্থাৎ কোন নির্দেশের পর কোন নির্দেশ পালিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
• তথ্যসমূহের প্রবাহ কখন কোন দিকে হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
• স্মৃতিকোষের কোন অংশে তথ্যসমূহ সংরক্ষিত হবে (পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য) এসব নিয়ন্ত্রণ করে।
• কম্পিউটারের প্রধান প্রধান সাংগঠনিক উপাদানের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
• ALU এর মাধ্যমে গাণিতিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকি।
• ALU এর কাজের ফলাফলকে প্রধান মেমোরিতে পাঠায়।
• প্রধান মেমোরিতে রাখা ফলাফল আউটপুট ইউনিটে পাঠায়।
1/5 - (1 vote)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x