সেকেন্ডারি মেমোরি কি? What is Secondary memory in Bangla?
ব্যবহারকারীর প্রোগ্রাম ও তথ্য দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করে রাখার জন্য অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন, কম গতিবিশিষ্ট ও কম দামের বিশেষ ধরনের মেমোরিকে সহায়ক মেমোরি বা সেকেন্ডারি মেমোরি বলা হয়। কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ বা সিপিইউ এর সাথে এর কোন প্রত্যক্ষ সংযোগ নেই তবে সিপিইউ-এর নির্দেশে প্রধান ও সহায়ক মেমোরির মধ্যে উপাত্ত বা নির্দেশ চলাচল করে। হার্ডডিস্ক, ফ্লপিডিস্ক, কম্প্যাক্ট ডিস্ক, চৌম্বক ফিতা ও ড্রাম হলো সেকেন্ডারি মেমােরির উদাহরণ। সেকেন্ডারি মেমোরি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন–
১. হার্ডডিস্ক
২. ফ্লপি ডিস্ক
৩. ম্যাগনেটিক টেপ
৪. অপটিক্যাল ডিস্ক
৫. পেনড্রাইভ
৬. সিডি, ডিভিডি ও জিপ ড্রাইভ ইত্যাদি।
নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলো :
১. হার্ডডিস্ক : অপেক্ষাকৃত অধিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শক্ত ম্যাগনেটিক ডিস্ককে হার্ড ডিস্ক বলা হয়। এর ধারণ ক্ষমতা ৪০ মেগাবাইট থেকে কয়েক গিগা বাইট পর্যন্ত। হার্ডডিস্ক ফ্লপি ডিস্ক অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও টেকসই। হার্ডডিস্ক সাধারণত কম্পিউটারের কেসিংয়ের অভ্যন্তরে থাকে। বর্তমানে বহনযোগ্য হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়, যাদেরকে এক্সটারনাল হার্ডডিস্ক বলা হয়। এসব বহনযোগ্য হার্ডডিস্ক দিয়ে এক কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে অন্য কম্পিউটারে কাজ করা যায়। বর্তমানে অধিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এক্সটারনাল হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়।
২. ফ্লপি ডিস্ক : অপেক্ষাকৃত কম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চৌম্বকীয় পদার্থের আবরণ লাগানো পাতলা ডিস্ককে Floppy Disk বলা হয়। Floppy Disk এর ধারণ ক্ষমতা সাধারণত ৩৬০ কিলোবাইট থেকে ১.৪৪ মেগাবাইট পর্যন্ত হতে পারে। ১৯৭৩ সালে IBM Company সর্বপ্রথম ফ্লপি ডিস্ক উদ্ভাবন করে। তবে বর্তমানে ফ্লপি ডিস্ক এর ব্যবহার একেবারেই কমে গেছে।
৩. ম্যাগনেটিক টেপ : ম্যাগনেটিক টেপের সাহায্যে স্মৃতি ধারণ করে রাখার প্রক্রিয়া অনেকদিন হতেই চলে আসছে। ম্যাগনেটিক টেপে অধিক স্মৃতি ধারণ করে রাখা যায়। তবে টেপ এর যেকোনো স্থান হতে ডাটা সরাসরি পুনরুদ্ধার করা যায় না কারণ ম্যাগনেটিক টেপে সিকোয়েন্সিয়াল পদ্ধতিতে ডাটা সংরক্ষণ করা হয়।
৪. অপটিক্যাল ডিস্ক : এক্ষেত্রে অপটিক্যাল স্টোরেজ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় ডাটা সংরক্ষণ করার জন্য। Compack Disk Read Only Memory (CD-ROM) অপটিক্যাল ডিস্কের উদাহরণ।
৫. পেনড্রাইভ : পেন ড্রাইভগুলো হাডডিস্কের মতো। তবে এদের ক্ষমতা হার্ডডিস্কের মতো এত বেশি নয়। এগুলো আকারে ছোট। তাই খুব সহজেই এগুলোর সাহায্যে ডাটা আদান প্রদান করা যায়।
৬. সিডি, ডিভিডি ও জিপ ড্রাইভ : সিডি ও ডিভিডি হচ্ছে সবচেয়ে ভালো বহনযোগ্য সহায়ক স্মৃতি। তবে এতে শুধু তথ্য ধারণ করা যায়। এতে ধারণ করা তথ্য মোছা যায় না। এদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এগুলোর দাম কম, এতে মিউজিক, ভিডিও সবই ধারণ করা যায়। বর্তমানে সাধারণভাবে ৭০০ মেগাবাইট এর সিডি ও ৪.৭ গিগাবাইট ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিভিডি প্রচলিত আছে। ডিভিডির ক্ষমতা বেশি থাকায় বর্তমানে সিডির ব্যবহার কমে যাচ্ছে।
সেকেন্ডারি মেমোরির প্রকারভেদ (Types of Secondary memory)
সেকেন্ডারি মেমোরিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা–
- ডাইরেক্ট মেমোরি (Direct Access Memory)
- অনুক্রমিক মেমোরি (Sequential Access Memory)
ডাইরেক্ট মেমোরি (Direct Access Memory): এই মেমোরিতে যেকোন তথ্যের সরাসরি প্রবেশ ও নির্গমন সম্ভব। হার্ডডিস্ক এবং ফ্লপিডিস্ক এ ধরনের মেমোরি। একশত ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত এই মেমোরিতে রেখে যদি ৫০ নম্বর ব্যক্তির বয়স চাওয়া হয়, তাহলে প্রথম ব্যক্তি থেকে ডেটা না পড়ে সরাসরি ৫০ নম্বর ব্যক্তির বয়স বের করে দিতে পারবে। এজন্য এ মেমোরিতে তথ্যের আদান-প্রদান অতি অল্প সময়ে হয়ে থাকে।
অনুক্রমিক মেমোরি (Sequential Access Memory): এ মেমোরিতে নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে তথ্যের প্রবেশ ও নির্গমন হয়। গানের ক্যাসেটে গান রেকর্ড করার সময় যেমন একটার পর একটা গান রেকর্ড করতে হয়, আবার গান শুনার সময়েও যেভাবে রেকর্ড করা হয়েছিল সেই ক্রমানুসারে শুনতে হয়। ইচ্ছে করলেই ৫ নম্বর গানের ৩ নম্বর কলিটি শুনা যায় না, এই মেমোরিও তেমনি ক্রম মেনে চলে। ম্যাগনেটিক টেপ হলাে একটি অনুক্রমিক মেমোরি।
সেকেন্ডারি মেমোরির বৈশিষ্ট্য (Chractertics of Secondary memory)
- সেকেন্ডারি মেমােরি নিকট ভবিষ্যতে গণনা প্রয়ােজন এমন সব উপাত্ত, নির্দেশ, প্রােগ্রাম ইত্যাদি দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে।
- সেকেন্ডারি মেমােরি অনুদ্বায়ী অর্থাৎ বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করলে এতে সংরক্ষিত উপাত্ত ও তথ্য মুছে যায় না।
- সিপিইউ এর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত না থাকায় পঠন/লিখনের গতি ধীর হয়।
- সেকেন্ডারি মেমােরির ধারণক্ষমতা প্রাইমারি মেমােরির তুলনায় বেশি।