পড়াশোনা

থ্যালাসেমিয়া কি? থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ, চিকিৎসা What is Thalassemia?

1 min read

থ্যালাসেমিয়া রক্তের লােহিত রক্ত কণিকার এক অস্বাভাবিক অবস্থাজনিত রােগের নাম। এই রােগে লােহিত রক্ত কণিকাগুলাে নষ্ট হয়। ফলে রােগী রক্তশূন্যতায় ভােগে। এই রােগ বংশপরম্পরায় হয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বংশবাহিত রক্তজনিত সমস্যা। ধারণা করা হয়, দেশে প্রতিবছর ৭০০০ শিশু থ্যালাসেমিয়া রােগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং বর্তমানে প্রায় এক লাখ রােগী আছে। এটি একটি অটোসােমাল রিসিসিভ ডিজঅর্ডার, অর্থাৎ বাবা ও মা উভয়েই এ রােগের বাহক বা রােগী হলে তবেই তা সন্তানে রােগলক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। চাচাতাে-মামাতাে-খালাতাে ভাইবােন বা অনুরূপ নিকট আত্মীয়য়ের মধ্যে বিয়ে হলে এ ধরনের রােগে আক্রান্ত সন্তান জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।

লােহিত রক্তকোষ দুধরনের প্রােটিন দিয়ে তৈরি, α-গ্লোবিউলিন এবং β-গ্লোবিউলিন। থ্যালাসেমিয়া হয় লােহিত রক্তকোষে এ দুটি প্রােটিনের জিন নষ্ট থাকার কারণে, যার ফলে ত্রুটিপূর্ণ লােহিত রক্তকোষ উৎপাদিত হয়। দুই ধরনের জিনের সমস্যার জন্য দুই ধরনের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়, আলফা (α) থ্যালাসেমিয়া এবং বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া। আলফা থ্যালাসেমিয়া রােগ তখনই হয়, যখন a গ্লোবিউলিন তৈরির জিন অনুপস্থিত থাকে কিংবা ত্রুটিপূর্ণ হয়। এই ধরনের রােগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, চীন ও আফ্রিকার জনগণের মাঝে বেশি দেখা যায়। একইভাবে বিটা (β) থ্যালাসেমিয়া তখনই হয়, যখন (β) গ্লোবিউলিন প্রােটিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিটা থ্যালাসেমিয়াকে ‘কুলির থ্যালাসেমিয়া’ ও বলা হয়। এ ধরনের রােগ ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাবাসীদের মাঝে বেশি দেখা গেলেও কিছু পরিমাণ আফ্রিকান, আমেরিকান, চীন ও এশিয়াবাসীদের মধ্যেও দেখা যায়।

জিনের প্রাপ্তির উপর নির্ভর করেও থ্যালাসেমিয়াকে দুভাবে দেখা হয়, থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়া মেজরের বেলায় শিশু তার বাবা ও মা দুজনের কাছ থেকেই থ্যালাসেমিয়া জিন পেয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া মাইনরের বেলায় শিশু থ্যালাসেমিয়া জিন তার বাবা অথবা তার মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। এ ধরনের শিশুরা থ্যালাসেমিয়ার কোনাে উপসর্গ দেখায় না। তবে থ্যালাসেমিয়া জিনের বাহক হিসেবে কাজ করে।

থ্যালাসেমিয়া এর লক্ষণ
তীব্র থ্যালাসেমিয়ার কারণে জন্মের আগেই মায়ের পেটে শিশুর মৃত্যু হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া মেজর আক্রান্ত শিশুরা জন্মের পর প্রথম বছরেই জটিল রক্তশূন্যতা রােগে ভােগে।

থ্যালাসেমিয়া এর চিকিৎসা
সাধারণত নির্দিষ্ট সময় পর পর রক্ত প্রদান এবং নির্দিষ্ট ঔষধ খাইয়ে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হয়। রােগীদের লৌহসমৃদ্ধ ফল বা ঔষধ পরিহার করা উচিত, কারণ তা শরীরে জমে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। এছাড়া যকৃৎ নষ্ট হলে জন্ডিস, অগ্ন্যাশয় নষ্ট হলে ডায়াবেটিস ইত্যাদি নানা প্রকার রােগ ও রােগলক্ষণ দেখা দিতে পারে। থ্যালাসেমিয়া রােগীর ৩০ বছরের বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম, যদি এসব সমস্যা একবার শুরু হয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Comment

x