ফ্যাগোসাইটোসিস (Phagocytosis) কাকে বলে? ফ্যাগোসাইটোসিসের ধাপসমূহ কি কি?

যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের শ্বেত-রক্তকণিকা দেহরক্ষার অংশ হিসেবে ক্ষণপদ সৃষ্টি করে দেহে অনুপ্রবেশকারী জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস প্রভৃতি) বা টিস্যুর মৃতকোষ ও অন্যান্য বহিরাগত কণাকে গ্রাস ও এনজাইমের সাহায্যে ধ্বংস করে দেহকে আজীবন সুস্থ রাখতে সচেষ্ট থাকে তাকে ফ্যাগােহটোসিস (Phagocytosis) বলে। ইমিউনতন্ত্রের প্রধানতম কাজ হচ্ছে সমন্বিত ও কার্যকর ফ্যাগােসাইটোসিস চালু রাখা।

ফ্যাগােসাইটোসিসের ধাপসমূহ (Steps of Phagocytosis)
সম্পূর্ণ ফ্যাগােসাইটোসিস জুড়ে এমন জৈবরাসায়নিক, জৈবপদার্থবিজ্ঞান এর কর্মকান্ড অব্যাহত থাকে যার ফলে এ প্রক্রিয়ার সুচিন্তিত ধাপ শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। প্রাথমিক পর্যায়ে আলােচনার সুবিধার জন্য ফ্যাগোসাইটোসিসকে নিচেবর্ণিত ৭টি ধাপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।

  • ম্যাক্রোসাইটের সক্রিয় হওয়া (Activation of macrocytes): জীবাণু সংক্রমণের ফলে প্রদাহস্থলে ক্ষতিগ্রস্ত রক্তকণিকা, টিস্যু বা রক্তজমাট থেকে উৎপন্ন কাইনিন, হিস্টামিন, প্রােস্টাগ্ল্যান্ডিনস ইত্যাদি রাসায়নিকে উদ্দীপ্ত হয়ে ম্যাক্রোসাইটগুলাে (ম্যাক্রোফেজ/নিউট্রোফিল) কৈশিকনালির প্রাচীর ভেদ করে ক্ষতস্থানে অভিযাত্রী হয়। ম্যাক্রোসাইটগুলাে যখন সংক্রমণকারী ব্যকিটেরিয়ার বিভিন্ন রাসায়নিক ক্ষরণে উদ্দীপ্ত হয়ে ক্ষতস্থানে জড়াে হতে থাকে সে প্রক্রিয়াকে বলে কেমােট্যাক্সিস (chemotaxis)।
  • অণুজীব ভক্ষণ (Ingestion): সক্রিয় হওয়ার পর ক্রমশঃ অণুজীবের দেহতলের সংস্পর্শে এলে ফ্যাগােসাইটে (ম্যাক্রোফেজ ও নিউট্রোফিল) দ্রুত যে ভৌত-রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে তার ফলে ফ্যাগােসাইট ক্ষণপদ সৃষ্টি করে অণুজীব ভক্ষণে উদ্যত হয় এবং মাত্র ০.০১ সেকেন্ডে একটি ব্যাকটেরিয়াম ভক্ষণ সম্পন্ন করতে পারে।
  • ফ্যাগােজোম সৃষ্টি (Formation of phagosome): অণুজীব ভক্ষণের উদ্দেশে ফ্যাগােসাইট ক্ষণপদ বের করে ব্যাকটেরিয়াকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে এবং ক্ষণপদের মাঝে সৃষ্ট গহ্বরে ব্যাকটেরিয়াকে আবদ্ধ করে। দুদিক থেকে আসা ক্ষণপদের অগ্রভাগ আরাে এগিয়ে পরস্পর একীভূত হয়। এভাবে সৃষ্ট ঝিল্লিবেষ্টিত থলিকাটি ফ্যাগোজোম নামে পরিচিত। ফ্যাগােসাইটের সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত আকিটিন ও অন্যান্য সংকোচনশীল তন্তু ফ্যাগোজোমের চতুর্দিক ঘিরে রাখে। এসব তন্তুর সংকোচনে ফ্যাগোসাইটের ঝিল্লি থেকে ফ্যাগোজোম সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে ঝিল্লিবেষ্টিত থলিকার মতো চালিত হয়।
  • ফ্যাগোলাইসোজোম সৃষ্টি (Formation of phagolysosome): আবদ্ধ ব্যাকটেরিয়াসহ ফ্যাগোজোম সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে পরিযায়ী হয়। এ সময় সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত গোল, ঝিল্লিবেষ্টিত ও হাইড্রোলাইটিক এনজাইমপূর্ণ দুএকটি লাইসোজোম নামক কোষ-অঙ্গাণু ও অন্যান্য সাইটোপ্লাজমিক দানা ফ্যাগোজোমের ঝিল্লির সঙ্গে একীভূত হয়। একীভূত লাইসোজোম থেকে ব্যাকটেরিয়ানাশক (bactericidal agents) ও পরিপাক এনজাইম (digestive enzyme) ফ্যাগোজোমে ক্ষরিত হয়। ফ্যাগােজোমটি তখন ঝিল্লিবেষ্টিত একটি পরিপাক থলিকা (digestive vesicle)-য় পরিণত হয়। থলিকাটিকে ফ্যাগােলাইসােজোম বলে।
  • ব্যাকটেরিয়ার অন্তঃকোষীয় মরণ ও পাচন (Intracellular killing and digestion of bacteria): ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস ও পরিপাকের জন্য লাইসােজোম ফ্যাগােজোমের সঙ্গে একীভূত হয়ে দুধরনের রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে। গ্রাসের কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাকটেরিয়ার চলন, রেচন, জননসহ যাবতীয় কার্যকলাপ রূদ্ধ হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য বহিরাগত প্রােটিন অণুকে হজম করার জন্য ফ্যাগােসাইটের লাইসােজোম থেকে বিপুল পরিমাণ প্রােটিওলাইটিক এনজাইম ক্ষরিত হয়। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া পরিপাকে এসব এনজাইম যথেষ্ট। অন্যান্য বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ এনজাইম কার্যকর হয়, ব্যর্থ হলে যক্ষ্মার মতাে অসুখের সৃষ্টি হতে পারে।
  • অপাচ্য অংশসহ ব্যাকটেরিয়ার অবশেষ (Residual body containing indigestible materials): ফ্যাগােজোম ঝিল্লিবেষ্টিত পরিপাক গহ্বর হওয়ায় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস বা হজমের কোনাে পর্যায়ে ক্ষতিকর কোনাে অংশ ফ্যাগােলাইসােজোমের সাইটোপ্লাজমে প্রবেশ করতে পারে না। তবে উপযুক্ত পুষ্টি পদার্থ উৎপন্ন হলে তা ফ্যাগােজোমের সাইটোপ্লাজমে শােষিত হয়।
  • বর্জ্যপদার্থ নিষ্কাশন (Discharge of waste materials): বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া গ্রাস করায় এবং তা পরিপাকের পর বর্জিত বিষাক্ত পদার্থ সঞ্চয় বা লাইসােজোমের ধ্বংসাত্মক রাসায়নিক পদার্থ সাঠকভাবে ফ্যাগােজোমে পতিত না হয়ে ফ্যাগােসাইটের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত হওয়ায় প্রতিটি নিউট্রোফিলই মৃত্যুবরণ করে। অন্যদিকে, ম্যাক্রোফেজ উৎপন্ন বিষাক্ত ও অপাচ্য অংশ ত্যাগ করে নতুন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে তৎপর হয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *