স্ট্রোক কাকে বলে? স্ট্রোকের লক্ষণ, নির্ণয় ও প্রতিরোধের কি? (Stroke in Bengali)
স্ট্রোক কি বা কাকে বলে? (What is stroke?)
মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার কারণে স্নায়ুতন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটলে তাকে স্ট্রোক বলে। স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে, হৃৎপিণ্ডে নয়; যদিও এ ব্যাপারে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্তনালির ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া এই দুইভাবে স্ট্রোক হতে পারে। এর মধ্যে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বেশি মারাত্মক। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হতে পারে।
স্ট্রোক রােগের লক্ষণ (Stroke symptoms)
এই রােগের লক্ষণ হঠাৎ করেই প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলাে হচ্ছে বমি হওয়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হওয়া, কয়েক মিনিটের মধ্যে রােগী সংজ্ঞা হারায়, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, মাংসপেশি শিথিল হয়ে যায়, শ্বসন এবং নাড়ির স্পন্দন কমে যায়, মুখমণ্ডল লাল বর্ণ ধারণ করে। অনেক সময় অবশ্য খুব মারাত্মক উপসর্গ ছাড়াই শুধু মুখ বেঁকে যাওয়া বা অল্প সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়ে আবার জ্ঞান ফিরে আসা স্ট্রোকের এ জাতীয় লক্ষণ দেখা যায়। স্ট্রোক কতটা মারাত্মক তা বলতে হলে অন্তত কয়েক দিন রােগীকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়ােজন, যে সময়ে তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হয়।
তাই, স্ট্রোক হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রােগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে এবং যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। উপযুক্ত চিকিৎসা করা হলে রােগী অনেক সময় বেঁচে যায়, তবে যদি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয়, তাহলে বাঁচার নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। রােগী যদি বেঁচে যায়, তাহলে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর সে তার সংজ্ঞা ফিরে পায়। তবে রােগী কিছুটা ছটফট করে এবং আস্তে আস্তে অসাড় হয়ে যাওয়া অঙ্গে দৃঢ়তা ফিরে আসে। জ্ঞান ফিরে এলেও বাক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে রােগীর কথা জড়িয়ে যায়।
পক্ষাঘাত বা অবশ হয়ে যাওয়া অঙ্গ (যেমন: হাত) সংলগ্ন পেশি নড়াচড়ায় শক্তি ক্রমশ ফিরে আসে কিন্তু হাত দিয়ে সূক্ষ্ম কাজ করার ক্ষমতা সাধারণত পুরােপুরিভাবে ফিরে আসে না। চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে আরােগ্য লাভ দ্রুত হতে থাকে কিন্তু দুমাস পরে উন্নতি ক্রমশ কমে আসে। হঠাৎ আক্রমণে যে স্নায়ু সাময়িকভাবে কার্যক্ষমতা হারায়, সেগুলাে দ্রুত আরােগ্য লাভ করে এবং কার্যক্ষমতা ফিরে পায়। আর যেসব স্নায়ু সমপূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেগুলাের কর্মক্ষমতা চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায়।
কী কী পরীক্ষা করে জানা যায় স্ট্রোক হয়েছে কি না?
নিম্নোক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় স্ট্রোক হয়েছে কি না–
১। আল্ট্রাসাউন্ড
২। MRI
৩। আর্টারিওগ্রাফি
৪। ইকোকার্ডিওগ্রাফি
৫। সিটিস্ক্যান।
কী কী কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে?
যেসব কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে তা নিম্নরূপ :
১. হাইপারটেনশন;
২. ডায়াবেটিস;
৩. ধূমপান;
৪. রক্তে চর্বি জমা;
৫. মদ্যপান;
৬. বংশগত কারণে;
৭. অধিক বয়স হলে;
৮. মাথায় আঘাত পেলে।
স্ট্রোক রােগ নির্ণয় ও চিকিৎসা (Stroke treatment)
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না তা নির্ণয় করে এই রােগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই রােগটির সঠিক কারণ অনেক সময় নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে মস্তিষ্কে জমে থাকা রক্ত অনেক সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বের করার প্রয়ােজন হতে পারে। রােগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা, রােগীর প্রয়ােজন অনুযায়ী সম্ভব হলে অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।
রােগীকে উপযুক্ত শুশ্রুষা, মলমূত্র ত্যাগের সুব্যবস্থা করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পথ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়ােজনবােধে রােগীকে নলের সাহায্যে খাবার খাওয়ানাের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ মােতাবেক অবশ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গ নির্দিষ্ট নিয়মে নড়াচড়া করানাে দরকার, এতে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া রােধ করা সম্ভব হয়। রােগীর জ্ঞান ফিরে এলে নিজ প্রচেষ্টায় নড়াচড়া করতে উৎসাহিত করা উচিত।
স্ট্রোক প্রতিরােধের উপায়
ধূমপান না করা, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের নিয়মিত ঔষধ সেবন করা, দুশ্চিন্তামুক্ত, সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করা।