আস‌লে শরী‌রের চা‌হিদা অনুযায়ী আমরা কতটুকু পা‌নি পান কর‌ছি?

পানির অপর নাম জীবন হলেও সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে শীতকাল আসলে পানির চাহিদা অনেকটাই কমে যায় আমাদের। তবে আমাদের পানির চাহিদা খানিকটা কমে গেলেও কিন্তু শরীরের পানির চাহিদা কমে যায় না। শরীরের নিয়মেই শরীরকে তার দরকারি পানিটা দিয়ে যেতে হয় সবসময়। যেটা কিনা অবহেলায় অনেকেই এড়িয়ে যান আর দিনশেষে মুখোমুখি হন পানি না পান করার নানারকম উপসর্গের। কিন্তু কোন কোন উপসর্গগুলো শরীরে দেখা দিলে আমরা বুঝব যে আমাদের শরীর যথেষ্ট পানি পাচ্ছে না? সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন এমনই কিছু উপসর্গের নাম। চলুন দেখে আসি সেগুলোকে আর মিলিয়ে নিই নিজেদের সাথে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি যথেষ্ট পানি পান করছেন না-
১. শরীরে শুষ্কতা দেখা দেওয়া
পানি এমন একটা জিনিস যেটা আমাদের শরীরকে সুস্থভাবে চলতে প্রচন্ডভাবে সাহায্য করে। আর তাই পানি না খেলে শরীরের নানা অংশে শুষ্কতা বেশ বড় রকমভাবেই দেখতে পাই আমরা। বিশেষ করে মুখ, ত্বক ও চোখকে ভালোভাবেই প্রভাবিত করে পানি। মুখের ভেতরে যে পিচ্ছিল পদার্থ আমাদের জিহ্বা ও গলাকে ঠিকঠাক রাখে সেটার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় ক্রমান্বয়ে কম পানি পান করতে থাকলে। এছাড়াও ত্বকে শুষ্কতা দেখা যায়। শুষ্কতা দেখা দেয় চোখেও। বিশেষ করে কনট্যাক্ট লেন্স পড়ার অভ্যাস থাকলে ব্যাপারটা আরো গুরুতর মাত্রা নেয় ।
২. হাড়ের গিঁটে ব্যথা অনুভব
আমাদের শরীরের কার্টিলেজ ও স্পাইনাল ডিস্কগুলোর ৮০ শতাংশ পানি দ্বারা তৈরি। আর তাই এগুলোকে ঠিকঠাক রাখতে পানির প্রচন্ড দরকার পড়ে শরীরের। অন্যথায় আমাদের হাড়গুলো একে অন্যের সাথে সামান্য নড়াচড়াতেই ঘর্ষণের সম্মুখীন হয়। আর সেই ঘর্ষণ আমাদেরকে দৈনন্দিন হাঁটাচলা বা দৌড়ানোর মতন কাজে হুটহাট ঝটিকা তীব্র ব্যথা উত্পাদন করে (হেলদি ফুড অ্যাডভাইস)। তাই যদি আপনার হাড়ের গিঁটে ব্যথা অনুভব করেন আপনি তাহলে বুঝবেন যে আপনার শরীরে পনির কমতি দেখা দিয়েছে।
৩. মাংসপেশীতে ব্যথা অনুভব
আমাদের মাংসপেশীগুলোও অনেকটাই পানির দ্বারা তৈরি। আর তাই হঠাৎ করে পানির কমতি দেখা দিলে আমাদের শরীরের এই পেশীগুলো টানটান হয়ে যায়, সামান্য নড়াচড়াতেও তখন ব্যথা উৎপন্ন হয় দেহে। এছাড়াও ব্যয়াম বা এ ধরনের শরীরচর্চার পরপরই শরীরের ব্যথা ও প্রদাহ দূর করার জন্যে প্রচুর পানি পান করে মানুষ। সেটা না করলেও শরীরে বেশ পানিশূন্যতা দেখা দেয় আর প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয় মাংসপেশীতে (লাইফহ্যাক)। পানির কমতি দেখা গেলে শরীরের মাংসপেশী ধ্বংস হতে শুরু করে মানুষের।
৪. অতিরিক্ত অসুস্থতা ও ক্ষুধা অনুভব
পানি কম পান করলে মানুষের শরীরে দূর্বলতা দেখা যায়। সেই সাথে মাথা ঘোরা, বমিভাব, জ্বালাপোড়া করাসহ দীর্ঘকালীন অসুস্থতায় ভোগে মানুষ। কারণ, পানি কম পান করে বিধায় এসময় শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলো বাইরে বেরোতে পারেনা। তৈরি করে নানারকম সমস্যার। তবে অসুস্থ থাকার পাশাপাশি শরীরে পানির কমতি দেখা দিলে প্রচন্ড ক্ষুধাবোধ সৃষ্টি হয় মানুষের শরীরে (হেলদি ফুড অ্যাডভাইস)। পানির অভাবকে পূরণ করার জন্যে শরীর খাদ্যগ্রহণের পথ ধরে নেয় যেটা কিনা আরো বেশি পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে দেহে। তৈরি হয় হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য। ফলে একেবারেই দূর্বল হয়ে যায় মানুস।
৫. অসময়ে শরীরে বয়স্কভাব দেখা দেওয়া
শরীরের দীর্ঘকালীন পানিশূন্যতা শরীরকে অনেক বেশি শুষ্ক করে তোলে (ইট কোলোসেল)। কোন কাজই তখন শরীর ঠিকভাবে করতে পারেনা। ত্বক সময়ের আগেই বুড়োটে হয়ে যায়। তবে সেই সাথে বাইরের পাশাপাশি ভেতরের শরীরকেও কিন্তু যথেষ্ট ক্ষতির মুখে ফেলে দেয় পানি কম পান করা। যেটা কিনা বোঝা যায় একটু দেরীতে। তবে দ্রুত হোক কিংবা দেরীতে, একটা সময় গিয়ে শরীরকে বেশ বয়স্কভাবের আদল দিয়ে দেয় পানি কম পান করার অভ্যাসটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *