মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। দুটি ঈদই পালন হয় ত্যাগ তিতিক্ষার মাঝ দিয়ে খুশির বন্যা বইয়ে দিয়ে। একটি সিয়াম সাধনা অপরটি সম্পদের ত্যাগের মাধ্যমে। আজ আমরা মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত নিয়ে আলোচনা করবো। আমাদের এই মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত পোস্টটি তে মহিলাদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বলা হয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নারী-পুরুষ উভয়কেই জামায়াতের সহিত ও পর্দার মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায়ের হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- প্রাপ্ত বয়স্ক কুমারী মেয়ে, অন্তপুরবাসিনী তরুনী ও ঋতুবতী নারীরা যেন বের হয় এবং ঈদের নামাযে ও মুসলমানদের দোয়াতে হাযির হয়।

ঋতুবতী নারীরা যেন নামাযের জায়গা থেকে দূরে থাকে।”[সহিহ বুখারী (১/৮৪)]। তাই আজ আমরা মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

ঈদের নামাজ পড়ার নিয়মঃ

ঈদের নামায বছরে পড়তে হয় বৎসরে মাত্র দুইবার, ফলে অনেকেই এর নিয়মকানুন একটু গুলিয়ে ফেলেন। ফলে নামাযের মধ্যেই এদিক সেদিক তাকা তাকি করেন অনেকেই। যার ফলে নামায ভেঙ্গে যাবে। অনেকেই কখন হাত বাঁধবেন, কখন হাত না বেঁধে ছেড়ে দেবেন এটা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকেন, এমনকি অনেকে একবার ডানপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন আরেকবার বামপাশের লোকেরটা অনুসরণ করেন। অথচ বিষয়টা খুবই সহজ।

নামাযের শুরুতে আমরা যে তাকবির দেই (আল্লাহু আকবার বলি) তাকে তাকবিরে তাহরিমা বা প্রথম তাকবির বলা হয়। যে কোন নামাযে এই তাকবির দেওয়া ফরয। ঈদের নামযে এই তাকবির এবং অন্যান্য সাধারণ তাকবিরের সাথে অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হয়।

সহজ ভাবে বলি – প্রথমে ঈদের নামাজের নিয়ত করে তাকবীর (আল্লাহু আকবর) বলে তাহরিমা বাঁধতে (বুকের নীচে) হবে ইমামের সাথে সাথে। এরপর নীরবে সুবহানাকা ও তাসমিয়া পাঠ করতে হবে।

এরপর ইমাম তিনবার উচ্চঃস্বরে তাকবীর বলবে। প্রত্যেকবার তাকবীর বলবার সাথে সাথে কানের লতি পর্যন্ত হাত তুলতে হবে। প্রথম দুইবার হাত নীচে ছেড়ে দিতে হবে আর তৃতীয়বার হাত বুকের নীচে বাঁধতে হবে। অতঃপর ইমাম উচ্চঃস্বরে সুরা ফাতিহা ও অন্য কোন সুরা বা আয়াত পাঠ করবেন। মুক্তাদিগন উহা শ্রবন করিবে। ইমামের পিছনে রুকু সেজদা করে দ্বিতীয় রাকাতে একই ভাবে সুরা ফাতিহা ও অন্য কোন সুরা বা আয়াত পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয় রাকাতের শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে ইমাম তিনবার তাকবীর পাঠ করবেন। তিনবারই হাত ছাড়িয়া দিতে হইবে, বুকে বাঁধা যাবে না। এই তিন তাকবীর বলার সময় প্রত্যেক বার কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠাইয়া তাকবীর বলার পর দুই হাত দুই পাশে ঝুলাইয়া রাখিবে এবং হাত ঝুলন্ত থাকা অবস্থায়ই তাকবীর বলে রুকুতে যেতে হবে। এর পার সাধারন নামাজের মতোই ইমাম নামাজ শেষ করবেন।

আসুন একটু বিস্তারিতভাবে ঈদের নামাজের নিয়ম দেখি:

ঈদের নামাজের ১ম রাকাতঃ

  • তাকবিরে তাহরিমা (১ম তাকবির)।
  • হাত বাঁধা (কারণ এর পর ছানা পড়তে হবে)।
  • ছানা পড়া।
  • ১ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
  • হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
  • ২য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
  • হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
  • ৩য় অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
  • হাত বেঁধে ফেলা (কারণ এর পর সূরা পড়া হবে)।
  • সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
  • তাকবির দেওয়া।
  • রুকু করা।
  • রুকু থেকে দাঁড়ানো।
  • সিজদায় যাওয়া।
  • ২টি সিজদা করা।
  • তাকবির দেওয়া (২য় রাকাতের জন্য)।

ঈদের নামাজের ২য় রাকাতঃ

  • হাত বেঁধে দাঁড়ানো।
  • সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা মিলানো।
  • ৪র্থ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
  • হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
  • ৫ম অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
  • হাত ছেড়ে দেওয়া (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না)।
  • ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত তাকবির দেওয়া।
  • হাত না বাঁধা (কেননা এরপরে তো আর কোন সূরা পড়া হচ্ছে না, রুকুতে যেতে হচ্ছে)।
  • রুকু করা।
  • রুকু থেকে দাঁড়ানো।
  • সিজদায় যাওয়া।
  • ২টি সিজদা করা।
  • শেষ বৈঠক + সালাম ফিরানো।
#মহিলারা ঘরে একা বা নিজের ঘরের মা বোনদের সাথে নিয়ে বা কয়েক বাড়ির মহিলাদের সাথে নিয়ে একসাথে ঈদের সালাত আদায় করতে পারে। কারো বাড়িতে জামাত করে সালাত আদায় করা বিদাত।
ঈদের দিনে মহিলাদের ঈদগাহে যেতে রাসুল (সাঃ) বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। কারন এতে করে মহিলারা ইদের মাঠে তাকবির ও দোয়াতে শরিক হতে পারে।

ঈদের নামাজের নিয়তঃ-

ঈদুল ফিতর (রোজার ঈদ):

ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ত আরবিতেঃ-
বাংলা উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহে তায়ালা রাকায়াতাই সালাতে ঈদিল ফিতর মাআ সিত্তাতে তাকবীরাতি অয়াজিবুল্লাহে তায়ালা ইক্‌তাদাইতু বি-হাযাল্‌ ইমামে মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শরিফাতে আল্লাহু আকবর।

ঈদুল ফিতর নামাযের নিয়তের বাংলা অনুবাদঃ‘আমি অতিরিক্ত ছয় তাকবিরসহ এই ইমামের পেছনে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি।’
বিঃদ্রঃ ঈদের নামাজের নিয়ত আরবি বা বাংলা দুই ভাবেই করা যায়। যারা আরবি পারবেন না তারা বাংলায় করলেও নিয়ত হয়ে যাবে।

ঈদুল আযহা (কোরবানি ঈদ):

ঈদুল আযহা নামাযের নিয়ত আরবিতেঃ-
বাংলা উচ্চারণ:- নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকআতাই ছালাতিল ঈদিল আযহা মাআ ছিত্তাতি তাকবিরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদুল আযহা নামাযের বাংলা নিয়ত:
আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ছয় তাকবীরের সাথে ঈদুল আযহার দু’ রাকআত ওয়াজিব নামায পড়তেছি আল্লাহু আকবার।
বিঃদ্রঃ আরবি ও বাংলা দুই ভাবেই নিয়ত করা যায়।

ঈদের নামাজের তাকবীরঃ আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর। ওয়া লিল্লাহিল হামদ্‌।
অর্থঃ আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ মহান, আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই, আল্লাহ্‌ মহান। আল্লাহ্‌ মহান। সকল প্রশংসা তাঁর জন্য।

খুতবাঃ খুতবার সময় কথাবার্তা বলা, চলাফেলা করা, নামাজ পড়া সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারও ঈদের নামাজ ছুটে গেলে কিংবা যে কোনো কারণে নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় একাকী তা আদায় বা কাজা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে চার বা তার অধিক লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে তাদের জন্য ঈদের নামাজ পড়ে নেয়া ওয়াজিব।। নামাজ এর পর অবশ্যই খুতবা শুনবেন, খুতবা শোনা ওয়াজিব । আল্লাহ পাক আমাদের কে সঠিক নিয়মে নামায পড়ার তাওফিক দিন।-আমীন

শেষ কথাঃ

মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আমরা ঈদের নামাজের পাশাপাশি প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো। নিজের ঈমান ঠিক রেখে চলার চেষ্টা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *