অনেক চেষ্টা করে বাঁচানো গেল না পাঁচ লাখ টাকার গরুটি
ফ্রিজিয়ান জাতের ৫০০ কেজি ওজনের ষাঁড়টি দুই বছর ধরে পালন করেছেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার কৃষক আল-আমিন। মোটাতাজা করার পর এটাকে বিক্রি করতে হাটে নিয়ে যান তিনি। দর-দামও হচ্ছিল ভালো। কিন্তু তিনি জানতেন না তাকে সর্বস্ব করে বিক্রির আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়বে ষাঁড়টি।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বিকেলে জেলার হোসেনপুর গরুর হাটে হঠাৎ স্টোক করে মারা যায় ফ্রিজিয়ান জাতের ওই ষাঁড়টি। কৃষক আল-আমিন বরফ, পানি দেয়াসহ নানা চেষ্টা করেও ষাঁড়টিকে বাঁচাতে পারেননি। ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির ওজন ছিল প্রায় ৫০০ কেজি। মারা যাওয়ার আগে বাজারে এটার দাম উঠেছিল ৪ লাখ টাকা। হোসেনপুর উপজেলার পুমদী ইউনিয়নের বড়বাড়ী গ্রামের আল-আমিন ষাঁড়টির অপ্রত্যাশিত মৃ’ত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ষাঁড়টি বিক্রির জন্য হোসেনপুর হাটে নিয়ে যাই। ৪ লাখ টাকা দাম বলার পরও আরও বেশি দামের আশায় বিক্রি করেনি। এখন আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। হাটে আসা লোকজন জানান, প্রচণ্ড গরমে গরুটি স্টো’ক করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা পানি ও বরফ দিয়েছি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গরুটি মা’রা যায়।
হোসেনপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, গরুর হাটে আমাদের একটি মেডিকেল টিম ছিল। ষাঁড় অসুস্থ হওয়ার সংবাদ আমরা পাইনি। তাৎক্ষণিক সংবাদ পেলে হয়তো গরুটি বাঁচানো যেত।
উল্লেখ্য, দর কষাকষিতে ছুটির দিনে জমজমাট রাজধানির কোরবানির পশুর হাট। তবে বাড়তি দামের কারণে অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে পছন্দের পশু। ক্রেতাদের অভিযোগ, গতবারের চেয়ে এবার গরু ভেদে দাম ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। যদিও আশানুরুপ দাম না পাওয়ার দাবি বিক্রেতাদের। কোরবানির আর খুব বেশি সময় নেই। দেখার পালা শেষ, এখন পছন্দ করে কেনার সময়। তাই ঈদের একদিন আগে জমজমাট রাজধানীর আবতাব নগর পশুর হাট। বেলা গড়িয়ে বিকাল হলে ক্রেতাদের ভীড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
কোরবানির পশু কিনতে হাতে আছে মাত্র একটি দিন। কয়েক দিনের ক্রেতাশূন্য হাট এখন ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর। এবারে চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি গরুর। শেষ দিনের ঝুঁকি এড়াতে যারা হাটে এসেছেন তারা কিনে ফিরছেন কোরবানির পশু। এবার হাটে ক্রেতাদের দাবি, গেল বছরের চেয়ে এবার হাটে কোরবানির পশু অনেক বেশি। তারপরও দামের কারণে অনেকে কিনতে পারছেন না পছন্দসই গরু। হাটে ছোট গরু ৫০ থেকে ৭০ হাজার, মাঝারি বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় লাখ টাকায়।
যদিও বিক্রেতারা দাবি করছেন, গো-খাদ্যের দাম বেশি এবং বন্যার কারণে এবার দাম বেড়েছে। অবশ্য তারা মনে করছেন করোনার ধকল কাটিয়ে গতবারের চেয়ে এবার বিক্রি বাড়বে। রাজধানীর গাবতলী ও সারুলিয়া স্থায়ী হাটসহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী হাটে এবার এসেছে পুতিন, হিরো আলম, ক্যাপ্টেন, ব্ল্যাক ডায়মন্ড, ডাক্তার, নিরব, রাজাবাবু, কালাপাহাড়, টাইগারসহ বাহারি নামের গরু। আছে চেয়ারম্যান নামের খাসিও।
এসব গরুতে ক্রেতাদের চোখ আটকালেও দরদাম চলছে। অনেক হাটে লাখ টাকার নিচে হাঁকছেন না গরুর দাম। আছে ১৫ লাখ টাকার গরুও। উট, দুম্বা উঠেছে কয়েকটি হাটে। গতকাল বৃহস্পতিবার গাবতলী, আফতাবনগর, মেরাদিয়া, রহমতগঞ্জ, নয়াবাজার পশুর হাট ঘুরে বেচাকেনার এমন চিত্র মিলেছে। হাটে ছোট এবং মাঝারি গরুর বিক্রি ভালো। তবে দুশ্চিন্তায় বড় গরুর মালিকেরা। ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পাড় করছেন তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজধানীতে এবার কুরবানির পশুর চাহিদা ২৫ লাখের মতো। গরুর পর রাজধানীর কয়েকটি খামারে এবারো আমদানি করা হয়েছে উট-দুম্বা। এরই মধ্যে অধিকাংশ বিক্রিও হয়ে গেছে। প্রতিটি উট ১৫ থেকে ১৮ লাখ আর দুম্বা বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকায়।