চতুর্থ অধ্যায় : উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি, অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান

প্রশ্ন-১. প্রজনন প্রধানত কয় প্রকার?
উত্তর : প্রজনন প্রধানত দুই প্রকার।

প্রশ্ন-২. জজ নিষিক্তকরণের পূর্বশর্ত কি?
উত্তর : নিষিক্তকরণের পূর্বশর্ত হলাে জননকোষ সৃষ্টি।

প্রশ্ন-৩. প্রজনন কাকে বলে?
উত্তর : একটি উদ্ভিদ থেকে অনুরূপ আরেকটি উদ্ভিদ তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রজনন বলে। উদ্ভিদের প্রজনন পদ্ধতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা- অণুজীব প্রজনন ও অঙ্গজ প্রজনন।

প্রশ্ন-৪. অযৌন জনন কাকে বলে?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্নধর্মী জনন কোষের মিলন ছাড়াই জনন সম্পন্ন হয় তাকে অযৌন জনন বলে।

প্রশ্ন-৫. স্ব-পরাগায়ন কাকে বলে?
উত্তর : একই ফুলে বা একই গাছের ভিন্ন দুটি ফুলের মধ্যে যখন পরাগায়ন ঘটে তখন তাকে স্ব-পরাগায়ন বলে।

প্রশ্ন-৬. বাম্প মােচন কাকে বলে?
উত্তর : উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে পাতার মাধ্যমে বাম্পাকারে পানি নির্গমন করার প্রক্রিয়াকে বাম্পমােচন বলে।

প্রশ্ন-৭. সম্পূর্ণ ফুল কাকে বলে?
উত্তর : যে ফুলে পাঁচটি অংশের সবগুলাে স্তবক উপস্থিত থাকে তাকে সম্পূর্ণ ফুল বলে।

প্রশ্ন-৮. পরাগায়ন কাকে বলে?
উত্তর : ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াকে পরাগায়ন বলে।

প্রশ্ন-৯. অঙ্গজ প্রজনন কাকে বলে?
উত্তর : কোনো ধরনের অযৌন রেণু বা জনন কোষ সৃষ্টি না করে দেহের অংশ খণ্ডিত হয়ে বা কোনো অঙ্গ রূপান্তরিত হয়ে যে উদ্ভিদের প্রজনন ঘটে তাকে অঙ্গজ প্রজনন বলে।

প্রশ্ন-১০. ফল কাকে বলে?
উত্তর : উদ্ভিদের নিষিক্তকরণের পর গর্ভাশয় এককভাবে অথবা ফুলের অন্যান্য অংশসহ পরিপুষ্ট হয়ে যে অঙ্গ গঠন করে তাকে ফল বলে।

প্রশ্ন-১১. বৃতি কি?
উত্তর : বৃতি হলাে ফুলের সর্ব বাহিরের স্তবক।

প্রশ্ন-১২. জনন স্তবক কাকে বলে?
উত্তর : ফুলের যে অংশ জনন কাজে অংশগ্রহণ করে তাকে জনন স্তবক বলে।

প্রশ্ন-১৩. বুলবিল কাকে বলে?</b
উত্তর : কোনাে কোনাে উদ্ভিদের কাঙ্ক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি যথাযথভাবে না হয়ে একটি পিণ্ডের ন্যায় আকার ধারণ করে। এদেরকে বুলবিল বলে।

প্রশ্ন-১৪. নিষেক কাকে বলে?
উত্তর : একটি পুংগ্যামেট অন্য একটি স্ত্রীগ্যামেটের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে মিলিত হওয়াকে নিষেক বলে।

প্রশ্ন-১৫. অফসেট কি?
উত্তর : অফসেট হলাে এক ধরনের রূপান্তরিত কাণ্ড যার মাধ্যমে কচুরিপানা, টোপাপানা ইত্যাদি উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রতিকূলতায় অঙ্গজ প্রজনন হয়ে থাকে।

প্রশ্ন-১৬. প্রকৃত ফল কাকে বলে?
উত্তর : শুধু গর্ভাশয় ফলে পরিণত হলে তাকে প্রকৃত ফল বলে।

প্রশ্ন-১৭. পরাগধানী কি?
উত্তর : পুংকেশরের শীর্ষের থলের ন্যায় অংশই হলাে পরাগধানী।

প্রশ্ন-১৮. পতঙ্গপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তর : পতঙ্গপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য হলাে— i. আকারে বড়, রঙিন হয় এবং মধুগ্রন্থিযুক্ত হয়। ii. পরাগরেণু ও গর্ভমুন্ড আঁঠালাে ও সুগন্ধযুক্ত হয়।

প্রশ্ন-১৯. সরল ফল বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ফুলের একটি মাত্র গর্ভাশয় থেকে যে ফলের উৎপত্তি হয় তাকে সরল ফল বলে। যেমন— আম। ফুলের একটি মাত্র গর্ভাশয় থেকে আম উৎপন্ন হয়। সরল ফল রসালাে বা শুষ্ক হতে পারে।

প্রশ্ন-২০. পুষ্পমঞ্জরী বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : কাণ্ডের শীর্ষমুকুল বা কাক্ষিক মুকুল থেকে উৎপন্ন একটি শাখায় ফুলগুলাে বিশেষ একটি নিয়মে সাজানাে থাকে। ফুলসহ এই শাখাই হলাে পুষ্পমঞ্জরী। পরাগায়নের জন্য এর গুরুত্ব খুব বেশি। এ শাখার বৃদ্ধি অসীম হলে তাকে অনিয়ত পুষ্পমঞ্জরী ও বৃদ্ধি সসীম হলে তাকে নিয়ত পুস্পমঞ্জরী বলে।

প্রশ্ন-২১. টিউবার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : কিছু কিছু উদ্ভিদে মাটির নিচের শাখার অগ্রভাগে খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত হয়ে কন্দের সৃষ্টি করে, এদের টিউবার বলে। ভবিষ্যতে এ কন্দ জননের কাজ করে। কন্দের গায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত থাকে যেগুলােকে চোখ বলা হয়। প্রতিটি চোখ থেকে একটি স্বাধীন উদ্ভিদের জন্ম হয়। যেমন- আলু ।

প্রশ্ন-২২. পর-পরাগায়ন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : একই প্রজাতির দুটি ভিন্ন উদ্ভিদের ফুলের মধ্যে যখন পরাগরেণু সংযােগ ঘটে তখন তাকে বলা হয় পর-পরাগায়ন। যেমন- শিমুল, পেঁপে ইত্যাদি গাছের ফুলের পর-পরাগায়ন হতে দেখা যায়।

প্রশ্ন-২৩. শিমুল পানিপরাগী ফল– ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : প্রাণিপরাগী ফুল মােটামুটি বড় ধরনের হয়। তবে ছােট হলেও ফুলগুলাে পুষ্পমঞ্জরীতে সজ্জিত থাকে। এদের রং আকর্ষণীয় হয়। এসমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলাে শিমুল ফুলে বিদ্যমান থাকায় শিমুল প্রাণিপরাগী ফুল।

প্রশ্ন-২৪. পরাগায়ন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াই হলো পরাগায়ন। ফুলের প্রতিটি উর্বর পুংকেশরের মাথায় একটি পরাগধানী থাকে। পরাগধানীর ভেতরে পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। এক সময় পরাগধানী ফেটে যায় এবং পরাগরেণু কীটপতঙ্গ, বাতাস বা অন্য কোনো বাহকের মাধ্যমে ফুলের গর্ভমুণ্ডের উপর পতিত হয় এবং পরাগায়ন সমপন্ন হয়।

প্রশ্ন-২৫. অঙ্কুরোদগম বলতে কি বুঝায়?

উত্তর : বীজ থেকে চারাগাছ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া হলো অঙ্কুরোদগম। যথাযথ অঙ্কুরোদগমের জন্য পানি, তাপ ও অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। অঙ্কুরোদগম দুই প্রকার। বীজপত্র মাটির ভেতরে থেকে ভ্রূণকাণ্ড মাটি ভেদ করে বেরিয়ে আসে মৃদ্গম অঙ্কুরোদগমের ক্ষেত্রে। যেমন- ছোলা, ধান ইত্যাদি। আর মৃদভেদী অঙ্কুরোদগমে বীজপত্রসহ ভ্রূণমুকুল মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে। যেমন- কুমড়া, বেরী ইত্যাদি।

প্রশ্ন-২৬. আদাকে রাইজোম বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : আদা মাটির নিচে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। কাণ্ডের মতাে আদার স্পষ্ট পর্ব ও পর্বসন্ধি রয়েছে। পর্বসন্ধিতে শল্কপত্রের কক্ষে কাক্ষিক মুকুল জন্মে। আদা খাদ্য সঞ্চয় করে মােটা ও রসাল হয়। অনুকূল পরিবেশে আদার এসব মুকুল বৃদ্ধি পেয়ে আলাদা আলাদা উদ্ভিদ উৎপন্ন করে। এভাবে আদা উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে বলে আদাকে রাইজোম বলা হয়।

প্রশ্ন-২৭. “পাতা শ্যাওলাকে” পানিপরাগী বলা হয় কেন?

উত্তরঃ পাতা শ্যাওলার ফুল আকারে ক্ষুদ্র, হালকা এবং অসংখ্য। এরা সহজেই পানিতে ভাসতে পারে। পরিণত পুং ফুল বৃন্ত থেকে খুলে পানিতে ভাসতে থাকে। পাতা শ্যাওলা ফুলের পরাগায়ন পানির মাধ্যমে হয়। একারণেই পাতা শ্যাওলাকে পানিপরাগী ফুল বলে।

প্রশ্ন-২৮. আনারস একটি যৌগিক ফল– ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ একটি মঞ্জুরীর সম্পূর্ণ অংশ যখন একটি ফলে পরিণত হয় তখন তাকে বলা হয় যৌগিক ফল। এসব ফল রসালো ও অপ্রকৃত ধরনের। আনারসের পুষ্পমঞ্জরীর সম্পূর্ণ অংশ ফলে পরিণত বলে এটি একটি যৌগিক ফল।

প্রশ্ন-২৯. কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন বলতে কী বুঝ?

উত্তর : স্বাভাবিক অযৌন জননের মাধ্যমে যখন নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি সম্ভব হয় তখন যে উপায়ে প্রজনন ঘটিয়ে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করা হয় তাই কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন। কাটিং, লেয়ারিং, গ্রাফটিং, বাডিং ইত্যাদি পদ্ধতিতে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন ঘটানাে হয়। লিচু, আম, বরই ইত্যাদি উদ্ভিদের কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন ঘটিয়ে নতুন উদ্ভিদ তৈরি করা হয়।

প্রশ্ন-৩০. পরাগায়ন গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু একই ফুলে বা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়াই হলাে পরাগায়ন। পরাগরেণু থেকেই পুংগ্যামিটের সৃষ্টি হয়। যা নিষিক্তকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফুলের গর্ভাশয়ে থাকা স্ত্রীগ্যামিটের সাথে মিলিত হয়। এর মাধ্যমে ফল ও বীজের সৃষ্টি হয়। এজন্যই পরাগায়ন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন-৩১. মিয়োসিসকে হ্রাসমূলক বিভাজন হয় কেন?

উত্তর : মিয়ােসিস কোষ বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে অভিহিত করা হয়। এ বিভাজনে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পর পর দুইবার বিভাজিত হলেও ক্রোমােজোমের বিভাজন ঘটে মাত্র একবার। ফলে অপত্য কোষে ক্রোমােজোম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায়। মিয়ােসিস কোষ বিভাজনে ক্রোমােজোমের সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পায় বলে একে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে।

প্রশ্ন-৩২. কীটপতঙ্গকে পরাগায়নের মাধ্যম বলা হয় কেন?

উত্তর : ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণুর একই ফুলে অথবা একই জাতের অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে পরাগায়ন সম্পন্ন হয়। জবা, সরিষা, কুমড়া প্রভৃতি ফুলের পরাগরেণু স্থানান্তরের কাজটি কীটপতঙ্গের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এজন্য কীটপতঙ্গকে পরাগায়নের মাধ্যম বলে।

প্রশ্ন-৩৩. ছোলা বীজে কোন ধরনের অঙ্কুরােদগম হয়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : ছােলা বীজে মৃদগত অঙ্কুরােদগম হয়। এ বীজের বীজপত্র মাটির নিচে অবস্থান করে এবং ভ্রূণকাণ্ড মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে। বীজপত্রটি মাটির ভেতরে থেকে যাওয়ায় মৃদগত অঙ্কুরােদগম ঘটে।

প্রশ্ন-৩৪. আম গাছের কলম কেন করা হয়?

উত্তর : আম গাছের কলম করা হয় কারণ বীজ থেকে উৎপাদিত উদ্ভিদ মাতৃ উদ্ভিদের তুলনায় অনুন্নত ও পরিমাণে কম হয়। কলম দ্বারা নতুন উদ্ভিদ তৈরি করলে সেটিতে মাতৃ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত থাকে। নতুন উদ্ভিদ মাতৃ উদ্ভিদের মত বা তার চেয়ে বেশি এবং তাড়াতাড়ি ফল দেয়।

প্রশ্ন-৩৫. কচু গাছের প্রজনন কিভাবে সম্পন্ন হয়?

উত্তরঃ কচু গাছের প্রজনন স্টোলনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এরা জননের জন্য পরিবর্তিত হয়ে শাখা কাণ্ডে পরিণত হয়, যা আমরা কচুর লতি হিসেবে চিনি। স্টোলনের অগ্রভাগে মুকুল উৎপন্ন হয়। এভাবে স্টোলন কচু গাছের জনন সম্পন্ন করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *