তৃতীয় অধ্যায় : বল, নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। ভরবেগ কি রাশি?
উত্তরঃ ভরবেগ ভেক্টর রাশি।

প্রশ্ন-২। বলের মাত্রা কী?
উত্তরঃ বলের মাত্রা MLT-2।

প্রশ্ন-৩। ভরবেগের একক কী?
উত্তরঃ ভরবেগের একক kgms-1।

প্রশ্ন-৪। ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র কি?
উত্তর :
 যখন কোনো ব্যবস্থার উপর প্রযুক্ত নিট বাহ্যিকবল শূন্য হয়, তখন ব্যবস্থাটির মোট ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে।

প্রশ্ন-৫। ঘর্ষণ বল কী ধরনের বল?
উত্তরঃ ঘর্ষণ বল হলো স্পর্শ বল।

প্রশ্ন-৬। কোন বলের কারণে বিটা ক্ষয় হয়?
উত্তরঃ দুর্বল নিউক্লিয় বলের কারণে বিটা ক্ষয় হয়।

প্রশ্ন-৭। পদার্থের জড়তার পরিমাপ কী?
উত্তরঃ ভর।

প্রশ্ন-৮। নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে কয়টি বিষয়ের ধারণা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে দুটি বিষয়ের ধারণা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন-৫। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি লিখ।
উত্তরঃ নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রটি হচ্ছে– কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।
অর্থাৎ কোনো বস্তুর ভর যদি অপরিবর্তিত থাকে,তবে বস্তুটির ওপর প্রযুুক্ত বাহ্যিক নেট বল বস্তুটির ভর ও ত্বরণের গুণফল হয়।

প্রশ্ন-৫। জড়তা কাকে বলে?
উত্তরঃ বস্তু যে অবস্থায় আছে চিরকাল সে অবস্থায় থাকতে চাওয়ার প্রবণতা বা সে অবস্থা বজায় রাখতে চাওয়ার ধর্মকে জড়তা বলে।

প্রশ্ন-৬। মাত্রা কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো ভৌত রাশিতে উপস্থিত মৌলিক রাশিগুলোর সূচককে এর মাত্রা বলে।

প্রশ্ন-৭। স্পর্শ বল কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বল ক্রিয়া করার জন্য দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ প্রয়োজন হয় তাকে স্পর্শ বল বলে।

1N বল বলতে কি বুঝ?
উত্তর :
 যে পরিমাণ বল 1kg ভরের বস্তুর উপর ক্রিয়া করে 1ms -2 ত্বরণ সৃষ্টি করে তাই 1N বল।

প্রশ্ন-৮। সাম্য বল কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো বস্তুর উপর একাধিক বল ক্রিয়া করলে যদি বলের লন্ধি শূন্য হয় অর্থাৎ বস্তুর কোনো ত্বরণ না থাকে, তখন যেই বলগুলো এই সাম্যাবস্থা সৃষ্টি করে তাদেরকে সাম্য বল বলে।

প্রশ্ন-৯। ঘর্ষণ কাকে বলে?
উত্তরঃ দুটি বস্তু একে অপরের উপর দিয়ে চলতে চেষ্টা করলে বা চলতে থাকলে বস্তুদ্বয়ের স্পর্শ তলে এই গতির বিরুদ্ধে যে বাধার উৎপত্তি হয় তাকে ঘর্ষণ বলে।

প্রশ্ন-১০। আবর্ত ঘর্ষণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যখন একটি বস্তু অপর একটি তলের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে তখন গতির বিরুদ্ধে যে ঘর্ষণ ক্রিয়া করে তাকে আবর্ত ঘর্ষণ বলে।

প্রশ্ন-১১। নিউটনের গতির ১ম সূত্র লিখ।
উত্তর :
 বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সুষম দ্রুতিতে সরলপথে চলতে থাকবে।

প্রশ্ন-১১। নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি লেখ।
উত্তরঃ প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।

প্রশ্ন-১২। সুষম ত্বরণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যদি কোন বস্তুর বেগ নির্দিষ্ট দিকে সব সময় একই হারে বাড়তে থাকে তবে তার বেগকে সুষম ত্বরণ বলে।

প্রশ্ন-১৩। গতি ঘর্ষণ কাকে বলে?
উত্তরঃ যখন একটি বস্তু অন্য একটি বস্তু তথা তলের উপর দিয়ে পিছলিয়ে বা ঘষে চলতে চেষ্টা করে বা চলে তখন যে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় তাকে গতি ঘর্ষণ বলে।

প্রশ্ন-১৪। নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্রটি লিখ।
উত্তরঃ “কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।” এটিই নিউটনের গতির ২য় সূত্র।

প্রশ্ন-১৫। স্থিতি জড়তা এবং গতি জড়তার মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ বাহ্যিক বল প্রয়োগ ব্যতিরেকে স্থির বস্তুর চিরকাল স্থির থাকতে চাওয়ার ধর্মকে স্থিতি জড়তা বলে। অপরদিকে, গতিশীল বস্তুর সুষম গতিতে একই দিকে চলতে চাওয়ার যে প্রবণতা তাকে গতি জড়তা বলে। সুতরাং স্থিতি জড়তা থাকে স্থির বস্তুসমূহে এবং গতি জড়তা থাকে গতিশীল বস্তুসমূহে।

প্রশ্ন-১৬। লুব্রিকেন্ট যন্ত্রপাতিকে কীভাবে ভাল রাখে?
উত্তরঃ তেল, মবিল এবং গ্রীজ জাতীয় পদার্থকে সংক্ষেপে লুব্রিকেন্ট বলে। কোন যন্ত্রাংশের মধ্যবর্তীস্থানে লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করলে তলগুলোর মধ্যে ঘর্ষণের পরিমান কমে যায়। ফলে যন্ত্রপাতি ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় এবং স্থায়ীত্ব বেড়ে যায়।

প্রশ্ন-১৭। হাটার সময় কোন গতি সূত্র মেনে চলে- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মাটির উপর হাটার সময় নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র মেনে চলে।
আমরা যখন, মাটির উপর দিয়ে হাঁটি তখন পেছনের পা দ্বারা মাটির উপর পেছনের দিকে তির্যকভাবে একটি বল প্রয়োগ করি। এ বল হলো ক্রিয়া বল। তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী এই বলের বিপরীতে একটি প্রতিক্রিয়া বল সৃষ্টি হয়। এই প্রতিক্রিয়া বলের প্রভাবে আমরা রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটতে সক্ষম হই।

প্রশ্ন-১৮। বন্দুক হতে গুলি ছুঁড়লে বন্দুকের পশ্চাৎ বেগ হয় কেন?
উত্তরঃ বন্দুক হতে গুলি ছুঁড়লে ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র এবং নিউটনের গতির ৩য় সূত্র প্রযোজ্য হয়। এক্ষেত্রে বন্দুকের ব্যারেল গুলির উপর যে মানের বল (ক্রিয়া) প্রয়োগ করে, গুলিও ঐ সময় বন্দুকের ওপর এর গতির বিপরীত দিকে একই মানের প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। এ কারণে বন্দুক হতে গুলি ছুঁড়লে বন্দুকটি পশ্চাৎ বেগপ্রাপ্ত হয়।

প্রশ্ন-১৯। জুতা ও স্যান্ডেলের তলা মসৃণ না হয়ে খাঁজ কাটা হয় কেন?
উত্তরঃ হাঁটার জন্য ঘর্ষণ খুবই প্রয়োজন। জুতা পায়ে হাঁটার সময় জুতার খাজগুলো রাস্তাকে আঁকড়ে ধরে রাখে এবং প্রয়োজনীয় ঘর্ষণ বলের যোগান দেয়। জুতা ও রাস্তার মধ্যবর্তী ঘর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্যই জুতার নিচে খাঁজকাটা থাকে।

প্রশ্ন-২০। পাহাড়ের উপর অভিকর্ষ ত্বরণ কম হয় কেন?
উত্তরঃ আমরা জানি, অভিকর্ষজ ত্বরণ, g = GM/R2।  অর্থাৎ অভিকর্ষজ ত্বরণ দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। তাই ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে উঠা যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কমতে থাকে। একারণেই পাহাড়ের উপর অভিকর্ষজ ত্বরণের মান কম।

প্রশ্ন-২১। গতির উপর বলের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ কোনো স্থির বস্তুর গতিশীল হওয়া বা গতিশীল বস্তুর স্থির হওয়ার প্রধান কারণ হল বল।
অর্থাৎ, বাহ্যিক বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থিরই থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরলপথে চলতেই থাকবে। এটিই হলো গতির ওপর বলের প্রভাব।

প্রশ্ন-২২। রকেট নিউটনের ৩য় সূত্র মেনে চলে ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ রকেটে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিশ্রণের ফলে যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, তা পেছনের দিক দিয়ে সমবেগে বের হয়ে যায়। অর্থাৎ ঐ গ্যাসকে বের করে দিতে রকেটকে গ্যাসের উপর বল প্রয়োগ করতে হয়, এটি হলো ক্রিয়া। ক্রিয়ার ফলে গ্যাসও রকেটের উপর গ্যাসের গতির বিপরীতে প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে, এই প্রতিক্রিয়া বলের দরুণই রকেট সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই বলা যায় রকেট নিউটনের ৩য় সূত্র মেনে চলে।

প্রশ্ন-২২। চাকা গোলাকার হলে ঘর্ষণের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে- ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ গোলাকার চাকার ফলে চাকা ও রাস্তার মাঝে আবর্ত ঘর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং আবর্ত ঘর্ষণের মান পিছলানো ঘর্ষণ অপেক্ষা কম। তাই চাকার আকৃতি গোলাকার করা হয়, চাকা ও রাস্তার মাঝে ঘর্ষণ বল কমানোর উদ্দেশ্য।

প্রশ্ন-২৩। ঘর্ষণ বল অসংরক্ষণশীল বল কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ কোনো বস্তু একটি বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করে নির্দিষ্ট পথে ঘুরে আবার একই বিন্দুতে ফেরত আসলে যদি বিবেচনাধীন বল দ্বারা কৃতকাজ শূন্য হয় তবে ঐ বলকে সংরক্ষণশীল বল বলা হবে। মহাকর্ষ বল ও তড়িৎ বলের ক্ষেত্রে এরূপ সম্ভব। কারণ মহাকর্ষ বল বা তড়িৎ বলের দিক বস্তুর গতির দিকের ওপর নির্ভর করে না। তবে ঘর্ষণ বলের দিক সর্বদা বস্তুর গতির বিপরীতে হয়। তাই বস্তুর চলার পথে ঘর্ষণ বল দ্বারা সর্বদা ঋণাত্মক কাজ সম্পন্ন হয়। তখন বস্তুটি আদি বিন্দুতে ফিরে আসলেও ঘর্ষণ বল দ্বারা মোট কৃতকাজ শূন্য নয়। বরং ঋণাত্মক। এ কারণে ঘর্ষণ বল সংরক্ষণশীল বল নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *