বিড়াল (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) প্রবন্ধ প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১। বিড়াল প্রবন্ধের লেখক কে?
উত্তরঃ বিড়াল প্রবন্ধের লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
প্রশ্ন-২। ন্যায় শাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তিকে কী বলা হয়?
উত্তরঃ ন্যায় শাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তিকে নৈয়ায়িক বলা হয়।
প্রশ্ন-৩। কমলাকান্তের কাকে বোঝানো দায় হলো?
উত্তরঃ কমলাকান্তের বিড়ালকে বোঝানো দায় হলো।
প্রশ্ন-৪। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যে বঙ্কিমচন্দ্র কোন উপাধিতে ভূষিত হন?
উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যে বঙ্কিমচন্দ্র ‘সাহিত্যসম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত হন।
প্রশ্ন-৫। নেশায় বুঁদ হয়ে কমলাকান্ত কোন যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন?
উত্তরঃ নেশায় বুঁদ হয়ে কমলাকান্ত ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন।
প্রশ্ন-৬। বিড়ালের মতে, চোরে যে চুরি করে সে অধর্ম কার?
উত্তরঃ বিড়ালের মতে, চোরে যে চুরি করে সে অধর্ম কৃপণ ধনীর।
প্রশ্ন-৭। কমলাকান্ত নিজেকে কার সাথে তুলনা করেছিলেন?
উত্তরঃ কমলাকান্ত নিজেকে নেপোলিয়নের সাথে তুলনা করেছিলেন।
প্রশ্ন-৮। বিড়ালের মতে, মনুষ্যজাতির রোগ কোনটি?
উত্তরঃ বিড়ালের মতে, মনুষ্যজাতির রোগ হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেওয়া।
প্রশ্ন-৯। কমলাকান্তের মতে, কী ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই?
উত্তরঃ কমলাকান্তের মতে, সামাজিক ধনবৃদ্ধি ব্যতীত সমাজের উন্নতি নাই।
প্রশ্ন-১০। ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ পড়লে বিড়াল কী বুঝতে পারবে?
উত্তরঃ ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ পড়লে বিড়াল আফিঙের অসীম মহিমা বুঝতে পারবে।
প্রশ্ন-১১। ‘লাঙ্গুল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ ‘লাঙ্গুল’ শব্দের অর্থ লেজ।
প্রশ্ন-১২। কমলাকান্ত অনেক অনুসন্ধানে কী আবিষ্কার করে মার্জারীর প্রতি ধাবমান হলেন?
উত্তরঃ কমলাকান্ত অনেক অনুসন্ধানে একটি ভগ্ন যষ্টি আবিষ্কার করে মার্জারীর প্রতি ধাবমান হলেন।
প্রশ্ন-১৩। বিজ্ঞ লোকের মতে, বিচারে পরাস্ত হলে কী করতে হয়?
উত্তরঃ বিজ্ঞ লোকের মতে, বিচারে পরাস্ত হলে গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করতে হয়।
প্রশ্ন-১৪। মার্জারের মতে, সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ কী?
উত্তরঃ মার্জারের মতে, সমাজের ধনবৃদ্ধির অর্থ হলো ধনীর ধনবৃদ্ধি।
প্রশ্ন-১৫। ‘মার্জার’ শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ ‘মার্জার’ শব্দের অর্থ বিড়াল।
প্রশ্ন-১৬। ‘বিড়াল’ রচনায় পরম ধর্ম বলা হয়েছে কোনটিকে?
উত্তরঃ ‘বিড়াল’ রচনায় পরম ধর্ম বলা হয়েছে পরোপকারকে।
প্রশ্ন-১৭। চারপায় শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ চারপায় শব্দের অর্থ টুল বা চকি।
প্রশ্ন-১৮। কার কথাগুলো ভারি সোশিয়ালিস্টিক?
উত্তরঃ মার্জারের কথাগুলো ভারি সোশিয়ালিস্টিক।
প্রশ্ন-১৯। ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ কী জাতীয় সংকলন?
উত্তরঃ ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ একটি রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন।
প্রশ্ন-২০। জলযোগ অর্থ কি?
উত্তরঃ জলযোগ অর্থ হালকা খাবার, টিফিন।
প্রশ্ন-২১। কস্মিনকালে কথাটির অর্থ কি?
উত্তরঃ কস্মিনকালে কথাটির অর্থ- কোনো সময়ে বা কোনোকালে।
প্রশ্ন-২২। প্রেতবৎ অর্থ কি?
উত্তরঃ প্রেতের মতো।
প্রশ্ন-২৩। বূহ্য রচনা অর্থ কি?
উত্তরঃ প্রতিরোধ বেষ্টনী তৈরি করা। যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজানো।
প্রশ্ন-২৪। দিব্যকর্ণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ দিব্যকর্ণ বলতে ঐশ্বরিকভাবে শ্রবণ করাকে বোঝায়।
প্রশ্ন-২৫। পতিত আত্মা কি বুঝ?
উত্তরঃ পতিত আত্মা বলতে বিপদগ্রস্ত বা দুর্দশাগ্রস্ত আত্মাকে বুঝায়।
প্রশ্ন-২৬। ওয়েলিংটন কে ছিলেন?
উত্তরঃ ওয়েলিংটন একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ডিউক অফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত। ওয়াটারলু যুদ্ধে তাঁর হাতে নেপোলিয়ন পরাজিত হন।
প্রশ্ন-২৭। ওয়াটারলু যুদ্ধ কত সালে এবং কোথায় সংঘটিত হয়? কে পরাজিত হন?
উত্তরঃ ১৮১৫ সালের ১৮ জুন বেলজিয়ামের ‘ওয়াটারলু’ নামক স্থানে ওয়াটারলু’র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট পরাজিত হন।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১। ‘কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : কেউ একজন কাজ করে কিন্তু তার ফল ভোগ করে অন্যজন— এটি বোঝাতে উক্তিটি করা হয়েছে।
প্রসন্ন গোয়ালিনী কমলাকান্তের খাওয়ার জন্যে কিছুটা দুধ বাটিতে করে রেখে যায়। কিন্তু সে অন্যমনস্ক হওয়ার সুযোগে বিড়াল তার দুধটুকু খেয়ে নেয়। দুধ খাওয়ার পর পরিতৃপ্ত বিড়ালের আচরণ দেখে কমলাকান্তের মনে হয় বিড়াল ভাবছে, কেহ মরে বিল ছেঁচে, কেহ খায় কই। অর্থাৎ কমলাকান্তের জন্যে দুধ রাখা হলেও তা সে পান করতে পারল না, বিড়ালই তা পান করল।
প্রশ্ন-২। ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্যজাতির রোগ’ বলতে মানুষের ধনীদের প্রতি তোষামোদি আচরণকে বোঝানো হয়েছে।
বিড়ালের মতে, ধনীদের তোষামোদ করা মানুষের স্বভাব। যাদের প্রচুর ধনসম্পদ আছে তারা দরিদ্রকে দান করে না। অথচ ধনী বা প্রভাবশালী মান্য লোককে আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা ধনীদের এ অমানবিক দিকটিকেই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন-৩। বিড়াল চরিত্র দ্বারা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : বিড়াল চরিত্র দ্বারা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকারের বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন।
বিড়াল মূলত একটি রূপক চরিত্র। চরিত্রটি সমাজের অন্যায় ও অবিচারের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। বঙ্কিমচন্দ্র বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্যরূপে তুলে ধরেছেন। তিনি সমাজের সচেতন, বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মনের মানবিক যুক্তিপূর্ণ কথাগুলো বিড়ালের মুখ দিয়ে উচ্চারণ করিয়েছেন।
প্রশ্ন-৪। চোরকে সাজা দেওয়ার আগে বিচারককে তিন দিন উপবাস করার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : বিচারক যদি অপরাধীর দুঃখ বুঝতে পারেন তাহলে বিচার সার্থক হয় এ কারণে চোরকে সাজা দেওয়ার আগে বিচারককে তিন দিন উপবাস করার কথা বলা হয়েছে। বিচারকের কাজ সর্বদা ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষভাবে অপরাধের কারণ বের করে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া। ক্ষুধা না লাগলে কেউ চুরি করে না। তাই চোরের বিচার করার আগে বিচারক যদি তিন দিন উপবাস করেন তবেই তিনি বুঝতে পারবেন ক্ষুধার জ্বালা কেমন এবং চোরের চুরির কারণ কী। বিষয়টি বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৫। ‘বিজ্ঞ চতুষ্পদের কাছে শিক্ষালাভ ব্যতীত তোমাদের জ্ঞানোন্নতির উপায়ান্তর দেখি না।’ বিড়াল একথা কেন বলেছে?
উত্তর : মানবসমাজে বিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যবস্থার যে দুর্দশা তা দেখে বিড়াল একথা বলেছে।
বিদ্যালয় মানুষের শিক্ষালাভের স্থান। এখান থেকেই মানুষ ভালো, সঠিক ও ন্যায়ের পথের সন্ধান লাভ করে। সকল অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। বৈষম্য দূরীকরণের শিক্ষা মানুষ এখান থেকেই লাভ করে। বিড়ালের মতে, ধনীরা সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে বলেই দরিদ্ররা চুরি করতে বাধ্য হয়।
কাজেই চুরি করা কোনো অন্যায় কাজ নয়- এ শিক্ষা কমলাকান্ত বিদ্যালয় থেকে পায়নি বলে বিড়াল আলোচ্য কথাটি বলেছে।
প্রশ্ন-৬। বিড়ালকে জ্ঞান দিতে পেরে কমলাকান্তের আনন্দ হলো কেন?
উত্তর : বিড়ালকে জ্ঞান দিতে পেরে একটি পতিত আত্মাকে অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছেন ভেবে কমলাকান্তের আনন্দ হলো।
‘বিড়াল’ প্রবন্ধে বিড়াল চরিত্রটি দারিদ্র্য, বঞ্ছিত ও শোষিত সমাজের প্রতিনিধি। কিন্তু বিড়ালের মুখে নীতিকথা শুনে কমলাকান্ত অধৈর্য হলেন। বিড়ালকে তিনি ধর্মাচরণে মন দিতে বললেন এবং খাবারের ভাগ দিতে রাজি হলেন। আপসের কথায় বিড়াল বিদায় হলে কমলাকান্ত একটি পতিত আত্মাকে জ্ঞান দিয়ে অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছেন ভেবে আনন্দিত হলেন।
বিড়াল প্রবন্ধের পাঠ-পরিচিতি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। তিন অংশে বিভক্ত এই গ্রন্থটিতে যে কটি প্রবন্ধ আছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রচনা ‘বিড়াল’। একদিন কমলাকান্ত নেশায় ঝুঁদ হয়ে ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে। এর প্রথম অংশ নিখাদ হাস্যরসাত্মক, পরের অংশ গূঢ়ার্থে সন্নিহিত।
বিড়ালের কণ্ঠে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিষ্পেষিত, দলিতের ক্ষোভ-প্রতিবাদ-মর্মবেদনা যুক্তিগ্রাহ্য সাম্যতাত্ত্বিক সৌকর্যে উচ্চারিত হতে থাকে, “আমি চোর বটে, কিন্তু আমি কি সাধ করিয়া চোর হইয়াছি? খাইতে পাইলে কে চোর হয়? দেখ, যাঁহারা বড় বড় সাধু, চোরের নামে শিহরিয়া উঠেন, তাঁহারা অনেকে চোর অপেক্ষাও অধার্মিক।” মাছের কাঁটা, পাতের ভাত – যা দিয়ে ইচ্ছে করলেই বিড়ালের ক্ষিধে দূর করা যায়, লোকজন তা না করে সেই উচ্ছিষ্ট খাবার নর্দমায় ফেলে দেয়, …..যে ক্ষুধার্ত নয়, তাকেই বেশি করে খাওয়াতে চায়। ক্ষুধাকাতর-শ্রীহীনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না, এমন ঘোরতর অভিযোগ আনে বিড়ালটি।
বিড়ালের ‘সোশিয়ালিস্টিক’, ‘সুবিচারিক’, ‘সুতার্কিক’ কথা শুনে বিস্মিত ও যুক্তিতে পর্যুদস্ত কমলাকান্তের মনে পড়ে আত্মরক্ষামূলক শ্লেষাত্মক বাণী– “বিজ্ঞ লোকের মত এই যে, যখন বিচারে পরাস্ত হইবে, তখন গম্ভীরভাবে উপদেশ প্রদান করিবে” – এবং তিনি সে-রকম কৌশলের আশ্রয় নেন। সাম্যবাদবিমুখ, ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষের একজন সরকারি কমকর্তা হয়েও বঙ্কিমচন্দ্র একটা বিড়ালের মুখ দিয়ে শোষক-শোষিত, ধনী-দরিদ্র, সাধু-চোরের অধিকারবিষয়ক সংগ্রামের কথা কী শ্লেষাত্মক, যুক্তিনিষ্ঠ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তা এ প্রবন্ধ পাঠ করে উপলব্ধি করা যায়।