সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ এবং পটভূমি আলোচনাসহ ব্যাখ্যা

সতন্ত্র বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি বা উদ্ভবের পটভূমি বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাবের ঘটনা একশত বছরের বেশি নয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে গোটা ইউরোপের Feudal system এর সমাপ্তি ঘটে এবং অর্থনীতি শিল্পকেন্দ্রিক হয়ে যায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে সেখানকার সামাজিক পট পরিবর্তন খুব দ্রুততার সাথে ঘটতে থাকে কিন্তু মানুষ সেই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযুক্ত ছিলো না। ফলশ্রুতিতে…

সমাজবিজ্ঞানে সামাজিক বৈষম্য কি এবং কত প্রকার

সামাজিক বৈষম্য কি সামাজিক বৈষম্য (Social Inequality) বলতে সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধাগত বৈপরীত্য কে বুঝায়, হোক সেটা, অর্থ,লিঙ্গ, অবস্থান বা অন্য যে কোন কারণে। সমাজের মানুষেরা নানান শ্রেণীতে বিভক্ত, এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীর সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্বে লিপ্ত। সমাজের এই স্বার্থদ্বন্দ্ব সমাজে বৈষম্যের সূচনা ঘটায়, একদল মানুষ সকল সুযোগ সুবিধায় একচেটিয়া আধিপত্যে মাতে, আরেকদল মানুষ নূন্যতম…

সমাজ কি, কাকে বলে, কত প্রকার এবং সমাজের উপাদান ও বৈশিষ্ট্য

সমাজ কাকে বলে যে প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মানুষ সংঘবদ্ধ বসবাস করে এক বা অধিক গোত্র বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করে, সেই ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়াকে সমাজ বলে। সমাজবিজ্ঞানের একটি অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ধারণা হচ্ছে সমাজ। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে, সমাজ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল, নিরাপত্তা ও জীবন ধারণের সহজিকরণ করা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ সংঘবদ্ধ বা সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করে যার ফলে সমাজের সূচনা ঘটে। মানব সমাজের আদিম রুপে মানুষ বন্য প্রাণী শিকার ও বন্য ফলমুল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো এবং কালের পরিক্রমায় সেই সমাজ বিবর্তিত হতে আজকের এই Post modern বা উত্তর আধুনিক সমাজের রুপ পরিগ্রহ করেছে। সমাজের উপাদান কি কি বা সমাজের বৈশিষ্ট্য কি কি ১. জন সমষ্টি : জন সমাগম বা…

সমাজবিজ্ঞান কি, কাকে বলে এবং সমাজবিজ্ঞানকে কেন বিজ্ঞান বলা হয়

সমাজবিজ্ঞান কি সমাজবিজ্ঞান এমন একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয় যা মানুষ এবং মানুষের সমন্বয়ে সৃষ্ট সমাজের সকল দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। সমাজবিজ্ঞান শব্দটি একটি যৌগিক শব্দ যা সমাজ ও বিজ্ঞান দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। সমাজ একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, সমাজের সাথে মানব জীবনের সকল দিক সম্পর্কিত, যেমন, পরিবার, ধর্ম, সাংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক। অন্যদিকে বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তি ও বাস্তবিকতার নিরিখে সব কিছু পর্যালোচনা করা। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান শব্দের শাব্দিক অর্থ দ্বারায়, যুক্তি ও বাস্তবিকতার নিরিখে মানুষ এবং সমাজের পর্যালোচনা। সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে যে শাস্ত্র সমাজের উৎপত্তি, বিকাশ, প্রত্যয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সকল দিক থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে অধ্যয়ন করে, সেই বিজ্ঞানময় শাস্ত্রকে সমাজবিজ্ঞান বলে। সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজবিজ্ঞানকে নানা ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যেমন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুর্খেইম বলেছেন,”সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের বিজ্ঞান”।  ম্যাকাইভারের মতে,“সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং মানুষের মধ্যাকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে”। সমাজবিজ্ঞান সমাজের আদি হতে অন্ত সকল দিক পর্যালোচনা করার মাধ্যমে মানব সমাজ এবং মানুষের ব্যাপারে সম্যক ধারণা প্রদান করে। অগাস্ট কোৎ এর সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা অনেক সমাজতাত্ত্বিক সমাজবিজ্ঞানের প্রামাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তবে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সংজ্ঞাটি প্রদান করেছেন সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোৎ, তিনি বলেন, “Sociology is the scientific study of the society” অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অধ্যায়নের বিজ্ঞান। অগাস্ট কোৎ সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রে বিশেষ অবদান রাখেন, যার জন্য অগাস্ট কোৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনিই Sociology (বাংলা অর্থ হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান) শব্দটি প্রবর্তন করে সমাজবিজ্ঞানকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেন। Comte (অগাস্ট কোৎ), scientific study শব্দদ্বয় দ্বারা আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন  তা একটু পর্যালোচনা করে দেখা যাক। scientific study (বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা) দ্বারা scientific method of study বা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় পর্যালোচনা  কে বুঝানো হয়েছে । আর বিজ্ঞান যে প্রক্রিয়ার বস্তুজগতের ব্যাখ্যা প্রদান করে সেইটাকে বলা হয় Doctrine of causality (ঠিক একই মেথড থমাস হবসও তার political philosophy এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন) অর্থাৎ প্রত্যেকটা incidence বা ঘটনা প্রবাহের পিছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। আর এই সুনির্দিষ্ট কারণগুলো অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিজ্ঞান material world বা বস্তুজগতকে বিশ্লেষণ করে। তেমনি সমাজবিজ্ঞান সামাজিক ঘটনাপ্রবাহকে এই একই প্রক্রিয়ায় ব্যাখ্যা করে বলে সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোৎ সমাজবিজ্ঞানকে social physics বা সমাজের পদার্থবিদ্যা বলেছেন। এবার Doctrine of Causality এর একটা বাস্তবধর্মী এক্সাম্পল দেয়া যাক। আমরা জানি যে আগুনের সংস্পর্শে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়, এখানে ছাই হয় effect বা ঘটনা এইটার cause বা কারণ হচ্ছে আগুন। আবার, ধর্ম যদি হয় ইফেক্ট বা ফলাফল, এর cause বা কারণ হচ্ছে geography বা ভূগোল, কারণ কোন অঞ্চলের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ওই অঞ্চলের ধর্মের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। সমাজবিজ্ঞান এর সাথে বিজ্ঞান এর সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজের বিজ্ঞান, অগাস্ট কোৎ সমাজবিজ্ঞানকে বলেছেন, social physics বা সমাজের পদার্থবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে, যেমন- সমাজবিজ্ঞান কেন বিজ্ঞান? সমাজবিজ্ঞান কি ধরনের বৈজ্ঞানিক কার্য সাধন করে? সমাজবিজ্ঞান কেন এবং কিভাবে বিজ্ঞান? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, বিজ্ঞান যেমন এবং যেই প্রক্রিয়ায় বস্তুজগতের ধর্ম (law of material world) উদঘাটন করে, সমাজ বিজ্ঞান একই প্রক্রিয়ায় মানুষের সমাজ জীবনের ধর্ম উদঘাটন করে থাকে। বিজ্ঞান যেমন matter বা বস্তুকে প্রয়োগিক ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বস্তুর ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করে এবং বস্তুসমূহের মধ্যাকার সম্পর্কের স্বরুপ ও ফলাফল ব্যাখ্য করে, ঠিক তেমনিভাবে সমাজবিজ্ঞান প্রয়োগিক এবং বাস্তবিকভাবে পর্যবেক্ষন ও নিরিক্ষনের দ্বারা সমাজ জীবনের ধর্ম নিরুপন করে। একইসাথে সমাজবিজ্ঞান Social mechanism বা সমাজের সমাজ হিসেবে এগিয়ে চলার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সম্পর্ক ও সামাজিক সমস্যার কারণ এবং প্রতিকারও প্রদান করে থাকে সামাজকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অধ্যায়নের মাধ্যমে। যুক্তি ও বাস্তবিকতার মানদন্ড উত্তির্ণ না হলে বিজ্ঞান যেমন সেটাকে স্বীকার করে না, সমাজবিজ্ঞানও যুক্তি ও বাস্তবিকতা বিবর্জিত কোনকিছুকেই স্বীকৃতি প্রদান করে না। সমাজবিজ্ঞানের মূল প্রত্যয়গুলোর মধ্যে rationality বা যুক্তিসিদ্ধতা, causality বা কার্যকরণ-সম্পর্ক অন্যতম। যেহেতু সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানের মতই বাস্তব নিরীক্ষণ ও যুক্তিনির্ভর একটি জ্ঞান, সে কারণেই সমাজবিজ্ঞানও এক প্রকার বিজ্ঞান যা বৃহত্তর পরিসরে সমাজ-জীবনের নানা দিককে যৌক্তিক ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে এবং সামাজিক সমস্যাবলির কারণ নির্ণয় ও সেই মোতাবেক প্রতিকার প্রদান করে।

সামাজিক স্তরবিন্যাস কাকে বলে? সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্য | সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে কর্মনির্বাহী (ক্রিয়াবাদী) তত্ত্ব

সামাজিক স্তরবিন্যাস কাকে বলে? সমাজ জীবনের শুরু থেকে সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজে বসবাসকারী জনসমষ্টির মধ্যে বিভিন্ন স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। সমাজবদ্ধ ব্যক্তিবর্গকে উচ্চ-নীচ স্তর ভেদে বিন্যাস করার জন্য সমাজতাত্ত্বিকগণ ভূ-বিদ্যার স্তরের ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হন। পরবর্তীকালে সমাজতত্ত্বের আলোচনায় স্তরবিন্যাসের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অধ্যাপক সরোকিন মনে করেন সকল সমাজের অধিবাসী বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। Peter Worsely সমাজতত্ত্বে শব্দটি প্রচলন করেন।…

সমাজ কাকে বলে? সমাজের উপাদানগুলো কি কি? সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি? সমাজের প্রয়োজন কেন? সমাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ

সমাজ কাকে বলে? মানুষ যখন একত্রিত হয়, মেলামেশা করে এবং কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংগঠিত হয় তখন তাকে সমাজ বলে। সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস বলেন, “সমাজ বলতে সেই সংঘবদ্ধ মানবগোষ্ঠীকে বুঝায় যারা কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মিলতি হয়েছে।” মনের ভাব প্রকাশের জন্য এবং আদান – প্রদানের সহজাত প্রবৃত্তির বশে মানুষ একত্রে বসবাস করতে শিখেছে। গিডিংসের ভাষায় একত্রিত হওয়ার…

সংস্কৃতি কাকে বলে?

সংস্কৃতি কাকে বলে? সংস্কৃতি হলো এমন জীবন ধারা যা মানুষ তার জীবন নির্বাহ করতে গিয়ে নানা প্রয়োজনে নিজস্ব সাংস্কৃতিক উপাদান ছাড়াও বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহ সংযোজনের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন করে। বিভিন্ন পথ উদ্ভাবন করতে শিখে থাকে। মানসিক, বুদ্ধিভিত্তিক এবং দৈহিক চাহিদা পূরণের জন্য চর্চার মাধ্যমে প্রাপ্ত বিষয়বস্তুর নির্যাসই হলো সংস্কৃতি। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী এবং…

লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন?

লাহোর প্রস্তাব কে উত্থাপন করেন? বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত লিখিত ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান লাহোর প্রস্তাবের প্রারম্ভিক খসড়া তৈরি করেন এবং ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবটি  মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেন।

সামরিক শাসন কি?

সামরিক শাসন কি? সামরিক শাসন হলো সেই শাসন ব্যবস্থা যেখানে কোনো দেশের শাসনভার, বৈদেশিক সম্পর্ক, অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা সবই দেশের সেনাবাহিনীর প্রধানদের হাতে ন্যস্ত থাকে। দেশের সশস্ত্র সামরিক বেসামরিক প্রশাসনকে বিতাড়িত করে নিজেরাই যখন রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব দখন করে তখন তাকে সামরিক শাসন বলে।

আদাম কি?

আদাম কি? চাকমা সমাজে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম সামাজিক সংগঠন হলো চাকমা পরিবার। সবচেয়ে বড় সামাজিক সংগঠন হলো চাকমা সার্কেল। কতগুলো পরিবার মিলে গঠিত হয় আদাম বা পাড়া। এটি ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক একক। আদামের প্রধানকে বলা হয় কারবারি। কয়েকটি আদাম নিয়ে গঠিত হয় গ্রাম বা মৌজা।