মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জুনেদ রহমান (২১) নামে এক কলেজছাত্র ‘ভালোবাসার প্রমাণ’ দিতে বিষপানে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জুনেদ।

নিহত জুনেদ উপজেলার শহরতলীর সুরভী আবাসিক এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে। সে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের স্নাতক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলো।

পারিবারিক ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, জুনেদ রহমানের সাথে উপজেলার মোহাজেরাবাদ গ্রামের হামিদ উল্লার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের ৪ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। তবে এ সম্পর্ক মেয়েটির পরিবার মেনে নিতে পারেনি।

সম্প্রতি পারিবারিকভাবে জুনেদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। এমন খবর পেয়ে মেয়েটি জুনেদকে জানিয়ে দেয়, অন্যত্র বিয়ে করলে সে বিষপানে আত্মহত্যা করবে। এ নিয়ে জুনেদ দিশেহারা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, মেয়েটির পরিবারও তাকে মেনে নিতে রাজি নয়।

জুনেদের বন্ধুরা জানায়, প্রেমিকা তার মাকে রাজি করাতে জুনেদকে বলে। এজন্য শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে জুনেদ বন্ধুদের সাথে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যায়। সে মেয়ের মা’র পা ধরে অনুরোধ করে সম্পর্ক মেনে নিতে। এতে মেয়েটির মা কর্ণপাত না করে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। বরং বলেন, তার মেয়েকে সত্যিকারের ভালবাসে কিনা তা প্রমাণ দিতে। কী করতে হবে জুনেদ জানতে চাইলে, মেয়েটির মা তাকে বিষপান করতে বলেন। জুনেদ ভালোবাসার মানুষকে পেতে তীব্র আবেগের বসে বাড়িতে রাখা কীটনাশকের বোতল খুলে পান করেন। এতে বিষক্রিয়া শুরু হলে জুনেদ দৌড়ে বাহিরে এসে বন্ধুদের ঘটনা জানায়। এরপর বন্ধুরা তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল এবং পরে সিলেটের আল-রায়হান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুনেদ মারা যায়। দুপুরে লাশ শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হলে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেন। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কান্নায় পুরো থানা চত্বরের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

জুনেদের বাবা সামছুদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে আমার ছেলের বন্ধু ফোন করে বলে; শহরের মোহাজিরাবাদে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন। জুনেদ যে মেয়েটির সঙ্গে প্রেম করতো তাদের ঘরেই নাকি সে বিষ খেয়েছে। খবর পেয়ে আমি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে জুনেদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখান থেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সিলেট নিয়ে যাওয়ার পর সে মারা যায়।

এ বিষয়ে জুনেদের প্রেমিকা জানায়, ঘটনার দিন বিকেলে জুনেদ আমাদের বাসায় এসে দীর্ঘসময় মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করে। এসময় সে আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে মাকে অনুরোধ করে। কিন্তু আমার মা তাকে জানায়, তার বাবা মা যেখানে ঠিক করেছে সেখানেই বিয়ে করতে। এতে মা রাজি না হলে সে চলে যায়। বিষপানে আত্মহত্যার খবরটি তারা আজ জেনেছেন।

মেয়েটির মা সেলিনা বেগম বলেন, জুনেদ তাদের বাড়ি আসার সময় বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিল না। এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি জিডিও করি।

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ন কবির বলেন, এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে রহস্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র- রাইজিংবিডি

Rate this post

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.