নরমাল ডেলিভারিতে ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ, বিল ৯ হাজার টাকা!

গত ১৪ জানুয়ারি কক্সবাজারের বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান জেনারেল হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি হওয়া এক প্রসূতির কাছ থেকে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ ফি নেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ দিনের মাথায় এবার নরমাল ডেলিভারিতে ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ বিল ৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজারের বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় একজন অপরজনকে দুষছেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের দায় নিতে রাজি নয় কেউ। অভিযুক্ত চিকিৎসক বলছেন, তার ফি নেওয়ার কথা এক হাজার, বাকি টাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এ বিল চিকিৎসকের। রোগীর স্বজনরা না দিলে এ বিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। তবে বিল পরিশোধ ছাড়া রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।

এদিকে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, অতিরিক্ত বিল আদায়ের অভিযোগ পেলে এবারও তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

অভিযোগে জানা যায়, কক্সবাজারের রামু উপজেলার পাহাড়ি জনপদ ঈদগড় থেকে ছমিরা নামে সন্তান সম্ভাবাকে কক্সবাজার আনা হয়। ৩ জানুয়ারী ভোর সাড়ে পাঁচটায় ডেলিভারির জন্য তাকে ডিজিটাল হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে কোন ডাক্তার না থাকাই নার্স আর ধাত্রীর মাধ্যমে স্বাভাবিক ডেলিভারী সম্পন্ন হয়। এরপর বিকেলে ছাড়পত্রের জন্য ক্যাশ কাউন্টারে বিল জমা দিতে গেলে হাসপাতালের চার্জ বাবদ ২ হাজার ২শ  টাকা, এবং ডাক্তারের সাথে ফোনে কথা বলার জন্য ১ হাজার এবং ফোনে পরামর্শের ফি ধরা হয় ৮ হাজার টাকা। ডাক্তার ছাড়াই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে শুধু ফোন কলের ফি হিসেবে ডাক্তারের বিল বানিয়ে ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডাক্তার ছাড়াই স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব করার পরেও কেন এত টাকা ডাক্তারের বিল?  জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ কোন সদুত্তর দেন নি। বরং টাকা না দিলে ছাড়পত্র দেবেন না বলে জানায় তারা।

এক পর্যায়ে ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর স্বজনরা কথা বললে ডাক্তার বলেন, আমার বিল তো ১ হাজার, ৮ হাজার তো আমার বিল না। আপনারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিলে আমাদের কোন হাত নেই এগুলো সম্পূর্ণ ডাক্তারের টাকা। আপনি চাইলে ২ হাজার টাকা কম দিতে পারবেন। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই। পরে নিরোপায় হয়ে টাকা পরিশোধ করেই ছাড়পত্র নেন বলে কেঁদে কেঁদে বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য মনির আলম।

অভিযোগের বিষয়ে ডিজিটাল হাসপাতালের ডাক্তার ইফফাত সানিয়া বলেন, আমি ডেলিভারির সময় ছিলাম না। তারপরেও আমার ফোন কল হিসেবে এক হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু ৮ হাজার টাকার ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। হয়তো তা হাসপাতালের খরচ বাবদ নিয়েছে। এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়।

অতিরিক্ত বিল আদায়ের ব্যাপারে কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব ইফতেখার জানান, আমাদের হাসাপাতালের বিল বাবদ ২২শ’ টাকা আমরা নিয়েছি। অতিরিক্ত ৮ হাজার বিলটা ডাক্তারের জন্য নেওয়া হয়।

কিন্তু এই বিলের ব্যাপারে তো ডাক্তার কিছুই জানে না বলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে- ব্যাবস্থাপনা পরিচালক জানান, আপনাকে হয়তো বলেছে কিন্তু যদি এই বিলটা ডাক্তারকে না দিই, ডিউটিতে যিনি ছিলেন তার বেতন থেকে কেটে নিবে।

প্রসঙ্গত, সী সাইড হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল এবং সর্বেশেষ ডিজিটাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ডাক্তার বিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছো।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। বৃহস্পতিবারে ডিজিটাল হাসপাতালের বিলের বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন সিভিল সার্জন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *