মেয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ায় পরিবারকে সমাজচ্যুত

মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছেন। এ কারণে দেশে থাকা পুরো পরিবারকে একঘরে করেছে স্থানীয়রা। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন ঝর্ণা চৌধুরী। ঝর্ণার বাবা আবদুল হাই চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। নারী অধিকার নিয়ে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে এলাকার কিছু মানুষের বিরাগভাজন হন ঝর্ণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝর্ণার নামে কুৎসা রটায় কিছু লোক। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় জিডিও করেছিলেন ঝর্ণা। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা চলে যান।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি গোষ্ঠি। বলা হয়, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছেন। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় তিনি সামাজিকভাবে চাপে আছেন।

ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি এই সেই নানা কিছু গল্প তারা তাদের মতো বানাতে থাকে। পরদিন ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি ঝর্ণার বাবা হাজী আব্দুল হাই চৌধুরী গুলাবের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক ডাকেন। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ থাকায় বৈঠকে বাবা উপস্থিত হতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে।

কমিটির লোকজনকে সতর্ক করেছেন জানিয়ে ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, আগামী ৯ তারিখ তাদেরকে অফিসে আসতে বলেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও বলেছি বিষয়টি আজই দেখে দিতে। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করেছি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *