হেপাটাইটিস বলতে কি বুঝায়? হেপাটাইটিস কত ধরনের হয়? What is Hepatitis?

হেপাটাইটিস বলতে সাধারণত যকৃতের প্রদাহকে বুঝায়। এটি প্রধানত ভাইরাসজনিত যকৃতের রোগ। হেপাটাইটিস অনেক কারণে হতে পারে, তবে ভাইরাসজনিত সংক্রমণই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী। হেপাটাইটিস সৃষ্টিকারী ভাইরাস অনেক ধরনের। যেমন– হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-ডি এবং হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস।

 

  • হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাস : সাধারণত আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র, খাবারে বা পানিতে সংক্রমিত হয়ে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। অর্থাৎ দূষিত খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে সুস্থদেহী মানুষের দেহে এ জীবাণু প্রবেশ করে। ‘এ’ ভাইরাস অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর। ‘এ’ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় ক্ষেত্রে আপনা আপনি সেরে যায়।
  • হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস : আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত সঞ্চালন, সংক্রমিত ইঞ্জেকশনের সূঁচ ও সিরিঞ্জ ব্যবহার, আক্রান্ত মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের, রোগীর মুখের লালা এবং শরীরের যে কোনো নিঃসৃত রস থেকে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। ‘বি’ ভাইরাস ভয়ঙ্কর ও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ‘বি’ ভাইরাস প্রায় ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিসসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করে এবং মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।
  • হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস : রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমেই প্রধানত এ ভাইরাস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করে। ইনজেকশনের মাধ্যমে, মাদক-ড্রাগ গ্রহণে, একই সূঁচ ব্যবহারেও এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। এ ভাইরাসের দূষিত রক্ত ত্বকের সংস্পর্শে এলেও দেহে বিস্তার লাভ করে। ‘সি’ ভাইরাস অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও ঝুঁকিপূর্ণ। ‘সি’ ভাইরাসও দূরারোগ্য, তাই প্রায় ক্ষেত্রে লিভার নষ্টসহ জটিলতা সৃষ্টি করে এবং প্রাণঘাতী।
  • হেপাটাইটিস ‘ডি’ ভাইরাস : এর সংক্রমণ হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের মতো এবং প্রায়শই একই ব্যক্তিতে উভয়ের সন্ধান মেলে।
  • হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস : অন্ত্রপথে সংক্রমিত হয়, যেমনটা হয় ‘এ’ ভাইরাসে। ‘ই’ ভাইরাস অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর। পানি বাহিত এবং খাদ্য ও স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। ‘ই’ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় ক্ষেত্রে আপনা আপনি সেরে যায়।
রোগের লক্ষণ
লিভার (যকৃত) বড় হয়ে যায়; যকৃত সিরোসিস সৃষ্টি হয়। জন্ডিস দেখা দেয় এবং রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। দেহত্বক, মুখ, চোখ এবং থুতু হলুদ বর্ণের হয়। প্রস্রাবের রং-সরিম্বার তেলের রং এর মতো এবং পায়খানা সাদাটে হয়। গুরুতর অবস্থায় জন্ডিসের সাথে পেটে পানি আসে। বমিভাব বা বমি হয়। খাবারে অরুচি হয় এবং জ্বরও হতে পারে।
প্রতিকারের উপায়
রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর পানি, টাটকা ফলের রস, ডাবের পানি, ডালিমের রস, গ্লুকোজ, আখের রস, ছোট মাছ ও মুরগির ঝোল, পেঁপে, পটল ও করলার তরকারি খাওয়াতে হবে। তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত খাবার সম্পূর্ন পরিহার করতে হবে। কোমল পানীয় পরিত্যাগ করতে হবে। লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে এবং বাসি, খোলা ও অফুটানো পানি বর্জন করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
ভ্যাকসিন গ্রহণ করাই হলো প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। হেপাটাইটিস-B এর ভ্যাকসিন ডোজ ৪টি। প্রথম ৩টি একমাস পরপর এবং ৪র্থটি প্রথম ডোজ থেকে এক বছর পর দিতে হয়। পাঁচ বছর পর বুস্টার ডোজ নিতে হয়। এর মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস-B ভাইরাসের বিপক্ষে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। রক্ত পরীক্ষা করে HBsAg পজিটিভ হলে B-ভাইরাস আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া হয়। মা থেকে শিশুতে এ রোগ ছড়াতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *