স্প্রেডশিট কি? স্প্রেডশিট ব্যবহারের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা কি? স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের সুবিধা
স্প্রেডশিট হচ্ছে এক ধরনের অ্যাপ্লিকেশন কম্পিউটার প্রোগ্রাম। একে কখনো কখনো ওয়ার্কবুকও বলা হয়। একটি রেজিস্টার খাতায় যেমন অনেকগুলো পৃষ্ঠা থাকে, তেমনি একটি ওয়ার্কবুকে অনেকগুলো ওয়ার্কশিট থাকে। একেকটা ওয়ার্কশিটে বহুসংখ্যক সারি (Row) ও কলাম (Column) থাকে।
যে প্যাকেজ প্রোগ্রামের সাহায্যে রো এবং কলাম ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশের কাজ করা হয় তাকে স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ প্যাকেজ প্রোগ্রাম বলে।
উইন্ডোজভিত্তিক স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের সাহায্যে জটিল গাণিতিক হিসাব-নিকাশ, অর্থনৈতিক ও পরিসংখ্যানিক হিসাব নিকাশ এবং যুক্তিমূলক কার্যক্রমসহ তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজও করা যায়। স্প্রেডশিট সফটওয়্যারকে ইলেকট্রনিক স্প্রেডশিট প্রোগ্রামও বলা হয়।
উল্লেখযোগ্য স্প্রেডশিট প্রোগ্রামসমূহ হলো মাইক্রোসফট এক্সেল (MS-Excel), লোটাস ১-২-৩ (Lotus 1-2-3), কোয়াট্রোপ্রো (Quatro Pro), মাল্টিপ্ল্যান (Multiplan), সুপার ক্যাম্প (Super Calc) ইত্যাদি।
প্রথম বাণিজ্যিক স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের নাম হলো ভিসিক্যাল (Visicale), যা ১৯৭৮ সালে বাজারে আসে। এরপর আরও অধিক সুবিধা নিয়ে ১৯৮৩ সালে বাজারে আসে লোটাস ১-২- ৩ (Lotus 1-2-3)। লোটাসের চেয়ে আরো উন্নতমানের সুবিধা নিয়ে বাজারে ১৯৮৫ সালে আবির্ভাব হয় মাইক্রোসফট এক্সেল।
স্প্রেডশিট অ্যানালাইসিস প্রোগ্রামের একটি বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যারই মাইক্রোসফট এক্সেল। এক্সেলের বিভিন্ন সংস্করণ বাজারে এসেছে। তন্মধ্যে Excel 5.0 এবং Excel 7.0 বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এক্সেল ৯৭-এর পরের ভার্সন হলো এক্সেল ২০০০। ২০০১ সালে অফিস এক্সপির অধীনের এক্সপি এক্সেল হলো এক্সেলের সর্বশেষ ভার্সন।
স্প্রেডশিট ব্যবহারের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা কি?
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এমনকি নিজের সাংসারিক হিসাব-নিকাশও খাতা কলমে হিসাব করতে গেলে শুধু সময়ের অপচয় হয় না, ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে অনেক। বড় বড় হিসাব করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পক্ষান্তরে স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত নিয়ে কাজ করা যায়। স্প্রেডশিট সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে হিসাবের কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যায়। এ সফটওয়্যারে সূত্র ব্যবহারের সুযোগ থাকায় হিসাবের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। একই সূত্র বারবার প্রয়োগ করা যায় বলে প্রক্রিয়াকরণের সময় কম লাগে। উপাত্তের চিত্ররূপ দেওয়াও এ সফটওয়্যারে খুব সহজ। স্প্রেডশিট সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাক যোগাযোগের ঠিকানা ও ই-মেইল ঠিকানার ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সহজে করা যায়।
স্প্রেডশিট প্রোগ্রামের সুবিধা :-
একটি স্ট্যান্ডার্ড ইলেকট্রনিক স্প্রেডশিট বিশ্লেষণ প্রোগ্রামের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ
১. সহজেই গাণিতিক, পরিসংখ্যানগত ও অর্থগত হিসাব-নিকাশ করা যায়।
২. একটি সেলের সাথে অন্য এক বা একাধিক সেলের সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
৩. স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মুলা ব্যবহার করে কাজ করা যায়।
৪. স্প্রেডশিটে একটি ওয়ার্কশিটের সাথে অপর এক বা একাধিক ওয়ার্কশিটের সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।
৫. স্প্রেডশিটে প্রয়োজন অনুসারে ম্যাক্রো তৈরি করা যায় এবং সহজেই ব্যবহার করা যায়।
৬. স্প্রেডশিটে Row 3 Column এর দৈর্ঘ্য প্রয়োজন অনুসারে বাড়ানো বা কমানো যায়।
৭. স্প্রেডশিটে বিভিন্ন ধরনের ডেটা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফ বা চার্ট ব্যবহার করা যায়।
৮. লেখার আকার আকৃতি পরিবর্তন করা যায় এবং প্রয়োজন অনুসারে লেখাকে সেলের ডানে বা বামে বা মাঝখানে সাজানো যায়।
৯. প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ছবি সংযোজন করা যায়।
১০. অডিও ও ভিডিও সংযোজন করা যায়।
১১. বিভিন্ন ধরনের ফাংশন ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যায়।
১২. স্প্রেডশিট প্রোগ্রামে ডেটাবেজ প্রোগ্রামে ব্যবহৃত ফাইল নিয়ে কাজ করা যায় ইত্যাদি।
১৩. ছাত্র/ছাত্রীদের পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করা যায় খুব সহজেই।
১৪. কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যায়ের হিসাব করা যায় খুব সহজেই।
১৫. বিপুল পরিমাণ তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে হিসাবের কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যায়।
১৬. এতে একই সূত্র বারবার ব্যবহার করা যায় বলে প্রক্রিয়াকরণে সময় কম লাগে।
১৭. উপাত্তের চিত্ররূপও এর মাধ্যমে দেওয়া যায়।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “স্প্রেডশিট কি?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।