পড়াশোনা
1 min read

বল কি? | বল কাকে বলে? বলের একক, প্রকারভেদ, প্রভাব এবং বৈশিষ্ট্য। What is Force?

Updated On :

বল (Force) হলো​ এমন একটি বাহ্যিক প্রভাব, যা স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে স্থির বস্তুকে গতিশীল করে বা করতে চায় এবং যা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায়। যেমন : একটি ফুটবল একজন খেলোয়াড় হতে অন্য খেলোয়াড়ের নিকট এমনিতেই যায় না। ফুটবলের উপর বল প্রয়োগের ফলেই সেটা ঘটে। আবার গোল করার লক্ষ্যে ফুটবলটিকে ছুড়ে দিলে গোলকিপার তা ধরে ফেলে এক্ষেত্রেও তাকে বল প্রয়োগ করতে হয়েছে।

বলের একক (Unit of Force)
M.K.S পদ্ধতিতে বলের একক Newton (নিউটন)
C.G.S পদ্ধতিতে বলের একক Dyne (ডাইন)
F.P.S পদ্ধতিতে বলের একক Poundal (পাউন্ডাল)

বলের প্রকারভেদ (Types of Force)

উৎস বা প্রয়োগ ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে বলকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন: টান, চাপ, ঠেলা, ঘর্ষণ, আকর্ষণ, বিকর্ষণ, ওজন ইত্যাদি।
টান (Tension) : কোনো বস্তুকে একটি সরু রশি বা তার দ্বারা টানা হলে ঐ রশি বা তার বরাবর বস্তুটির উপর যে বল ক্রিয়া করে তাকে টান বলে।
চাপ (Pressure) : যখন একটি বস্তুকে অপর একটি বস্তুর উপর রাখা হয়, তখন প্রথম বস্তুটি দ্বিতীয় বস্তুর উপর যে বল প্রয়োগ করে তাকে চাপ বলে।
ঠেলা (Thrust) : অনেক সময় দেখা যায় বাস (বা অন্য কোনো গাড়ী) কোনো স্থানে রাখা ছিল, এখন স্টার্ট দেওয়ার সময় স্টার্ট নিচ্ছে না। এমন অবস্থায় বাসটিকে কতকগুলি লোক বল প্রয়োগ করে সামনে বা পিছনে সরানোর চেষ্টা করে এবং গড়ালেই ড্রাইভার স্টার্ট করতে সক্ষম হন। এই ক্ষেত্রে যে বল প্রয়োগ করে গাড়িকে গড়ানো হয় তাকে ঠেলা বা ধাক্কা বল বলে।
ঘর্ষণ (Friction) : একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর উপর দিয়ে (স্পর্শ করে) চলতে গেলে বাধাপ্রাপ্ত হয়। যেমন- তুমি যদি একটি ফুটবলে শট দাও তবে তা কিছুক্ষণ ভূমিতে গড়ানোর পরে থেমে যাবে। ফুটবলটি নিশ্চয়ই কোনো বাধার কারণে থেমে গেছে। এখানে ভূমির স্পর্শে গড়ানোর কারণে যে বল বাধা হিসেবে কাজ করে তাকে ঘর্ষণ বল বা সংক্ষেপে ঘর্ষণ এবং যে বিন্দুতে স্পর্শ করে ঐ বিন্দুকে ঘর্ষণ বিন্দু বলা হয়।
আকর্ষণ (Attraction) : বাহ্যিক কোনো বল (যেমন- চাপ, ঠেলা, ধাক্কা) প্রয়োগ ছাড়াই একে অপরকে স্পর্শ করেনি এরূপ দুইটি বস্তু যে বলের ক্রিয়ার কারণে একে অপরের দিকে অথবা যে কোন একটি অপরটির দিকে অগ্রসর হয় বা হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয় তাকে আকর্ষণ বল বা সংক্ষেপে আকর্ষণ বলে। যেমন, একটি লৌহ খণ্ড চুম্বকের আকর্ষণে চুম্বকের দিকে অগ্রসর হয়, পৃথিবীর আকর্ষণে বৃন্তচ্যুত ফল মাটিতে পড়ে।

বিকর্ষণ (Reputation) : বাহ্যিক কোনো বল প্রয়োগ ব্যতিরেকে একে অপরকে স্পর্শ করেনি এরূপ দুইটি বস্তু যে বলের ক্রিয়ার ফলে একটি অন্যটি থেকে সরে যায়, তাকে বিকর্ষণ বল বা সংক্ষেপে বিকর্ষণ বলে।
চুম্বকের সমজাতীয় দুই মেরু কাছাকাছি আনলে চুম্বকদ্বয় পরস্পর হতে দূরে সরে যাবে। এই বলটিই বিকর্ষণ বল।
ওজন (Weight) : কোনো বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে যে পরিমাণ আকর্ষণ বল দ্বারা টানে তাকে ঐ বস্তুর ওজন বলা হয়।
বস্তুর ওজন সর্বদা বস্তুর ওপরস্থ একটি নির্দিষ্ট বিন্দু দিয়ে খাড়া নিচের দিকে ক্রিয়াশীল। ঐ নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বস্তুর ভারকেন্দ্র (Centre of gravity) বলা হয়।

বলের প্রভাব (Effects of Force)
বল নিচের ঘটনাগুলো ঘটাতে পারে:
১. বল একটি স্থির বস্তুকে গতিশীল এবং গতিশীল বস্তুকে স্থির করতে পারে।
২. বল একটি বস্তুর গতির দিক পরিবর্তন করতে পারে।
৩. বল একটি গতিশীল বস্তুর বেগ কমাতে বা বাড়াতে পারে।
৪. বল একটি বস্তুর আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে।

বলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Force)

  • বল প্রয়োগে কোন বস্তুর জড়তার পরিবর্তন হয় বা হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
  • বল সর্বদা জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া করে। অর্থাৎ কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে প্রযুক্ত বলের বিপরীত দিকে আরেকটি বল ক্রিয়া করে। একারণে বলের ক্রিয়াকে Interaction বা মিথস্ক্রিয়াও বলে। যেমন যখন কোন বস্তুকে দড়িতে বেধে টানা হয় তখন প্রযুক্ত বলের বিপরীত দিকে দড়িতে যে একটা বল ক্রিয়া করে তাকে টান বল বলে।
  • যতক্ষণ লব্ধ বল ক্রিয়াশীল থাকে ততক্ষণ উক্ত বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টি হয়। মূলত কোন পদার্থের ভর স্থির হলে প্রযুক্ত বল বস্তুটির গতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় বা ত্বরণ সৃষ্টি করে।
  • বল কোন বস্তুকে বিকৃত করতে পারে বা তার ভৌত ধর্মের পরিবর্তন করতে পারে।
  • বল একটি ভেক্টর রাশি। কারণ এর মান ও দিক আছে।

 

 

বল (Force): যা স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা গতিশীল করতে চায় অথবা যা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাকে বল (Force) বলে।

বলের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of force)

  • বল একটি ভেক্টর বা দিক রাশি। এর মান ও দিক উভয়ই আছে।
  • কোনো স্থির বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল সেই স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে।
  • বল সর্বদা জোড়ায় জোড়ায় ক্রিয়া করে।
  • কেনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে সেই বস্তুর অবস্থার বিকৃতি ঘটতে পারে।
  • একটি গতিশীল বস্তুর উপর বল প্রযুক্ত করা হলে সেই বল বস্তুর গতি বা দিকের পরিবর্তন করে বা করতে চেষ্টা করে।
  • বল বস্তুতে ত্বরণ বা মন্দন সৃষ্টি করতে পারে।

বলকে সাধারণত F দ্বারা প্রকাশ করা হয়। SI(M.K.S) পদ্ধতিতে বলের একক নিউটন(N)।

বলের মাত্রা, F = [MLT-2]

m ভরের কোনো একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করার ফলে এর ত্বরণ a সৃষ্টি হলে,

 F = ma 

অর্থাৎ ত্বরণ এবং ভরের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়।

বলের প্রকারভেদ

প্রকৃতিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বল বিদ্যমান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু হলো মৌলিক বল এবং কিছু যৌগিক বল।

মৌলিক বল (Fundamental Force)

যে সকল বল অন্য কোন বল থেকে উৎপন্ন হয় না বরং অন্যান্য বলসমূহ এই সকল বল থেকে উৎপন্ন হয়, তাদেরকে মৌলিক বল বলে। যেমন- মহাকর্ষ বল (Gravitational force), তড়িৎ-চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force), সবল নিউক্লীয় বল (Strong nuclear force), দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak nuclear force)

যৌগিক বল (Compound Force)

যে সকল বলসমূহ দুই বা ততোধিক মৌলিক বল থেকে উৎপন্ন হয় সে সকল বলই হলো যৌগিক বল।

যেমনঃ ঘর্ষণ বল,টান বল,স্থিতিস্থাপক বল ইত্যাদি।

প্রকৃতিতে মৌলিক বল প্রধানত 4 প্রকার। যথাঃ

  1.  মহাকর্ষ বল (Gravitational force)
  2.  তড়িৎ-চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force)
  3.  সবল নিউক্লীয় বল (Strong nuclear force)
  4.  দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak nuclear force)

মহাকর্ষ বল কাকে বলে (Gravitational force)

মহাকর্ষ বল (Gravitational force): মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে যে বলে আকর্ষণ করে সেই আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বল বলা হয় । এই বলের পরিমাণ ক্রিয়াশীল বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং এটি বস্তুদ্বয়ের সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে মুলত গ্রাভিটন (Graviton) নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে বস্তুসমূহের মধ্যে এই মহাকর্ষ বল ক্রিয়াশীল হয় । মহাকর্ষ বল অত্যন্ত দুর্বল বল। মহাকর্ষ বল নক্ষত্রগুলোকে একত্রিত করে গ্যালাক্সি গঠন করে।

তড়িৎ চৌম্বকীয় বল কাকে বলে (Electromagnetic Force)

তড়িৎ-চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force): দুটি আহিত বা চার্জিত কণার মধ্যে যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল ক্রিয়া করে তাকে তড়িৎ-চৌম্বক বল বলা হয় । চৌম্বক বল এবং তড়িৎ বল সাধারণত  আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ উভয় ধরনের হতে পারে ।

ধারণা করা হয় যে , মূলত চার্জহীন এবং ভরহীন ফোটন  নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে এই তড়িৎ-চৌম্বক বল কার্যকর হয়। প্রকৃতির অধিকাংশ বলই তড়িৎ-চৌম্বক বলের অন্তর্ভুক্ত।

ঘর্ষণ বল, কুলম্বের তড়িৎ বল, কুলম্বের চৌম্বক বল, স্প্রিং বল, পরমাণুতে কার্যকর নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যকার পারমাণবিক বল ইত্যাদি তড়িৎ-চৌম্বক বল।

সবল নিউক্লিয় বল কাকে বলে (Strong Nuclear Force)

সবল নিউক্লীয় বল (Strong nuclear force): প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা প্রতিটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠিত। এদেরকে একত্রে বলা হয় নিউক্লিয়ন (Nucleon)। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে সমধর্মী ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটনগুলো খুব কাছাকাছি থাকায় এদের মধ্যে কুলম্বের বিকর্ষণ বল প্রবল হওয়া উচিত এবং নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে যাওয়ার কথা ।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনেক নিউক্লিয়াসই স্থায়ী । নিউক্লিয়নের মধ্যে যে মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে তা এত নগণ্য যে এই বল কুলম্বের বিকর্ষণ বলকে প্রশমিত (balance) করতে পারে না । সুতরাং নিউক্লিয়াসে অবশ্যই অন্য এক ধরনের সবল বল কাজ করে যা নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয়ন সমূহকে ধরে রাখে ।

এই বলকে বলা হয় সবল নিউক্লীয় বল । বিজ্ঞানীদের ধারণা যে নিউক্লিয়নের মধ্যে মেসন(Meson ) নামে এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে এই বল ক্রিয়াশীল হয় । এই বল আকর্ষণধর্মী , স্বল্প পাল্লা বিশিষ্ট (short range) , চার্জ নিরপেক্ষ এবং নিউক্লিয়াসের বাইরে এই বল ক্রিয়াশীল নয়। দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বল দ্রুত হ্রাস পায়।

দুর্বল নিউক্লিয় বল কাকে বলে (Weak nuclear force)

দুর্বল নিউক্লীয় বল (Weak nuclear force): প্রকৃতিতে বেশ কিছু মৌলিক পদার্থ রয়েছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে যায় (যেমন- ইউরেনিয়াম, থােরিয়াম ইত্যাদি)। এই সমস্ত নিউক্লিয়াসকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস। তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে তিন ধরনের রশ্মি বা কণা নির্গত হয় যাদেরকে আলফা রশ্মি,  বিটা রশ্মি এবং গামা রশ্মি বলা হয়।

তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে বিটা কণা নির্গত হওয়ার সময় একই সাথে শক্তিও নির্গত হয় । তবে পরিক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণ বিটা কণার গতিশক্তির চেয়ে অনেক বেশি।

1930 সালে বিজ্ঞানী ডব্লিউ. পাউলি (W. Pauli ) প্রস্তাব করেন যে অবশিষ্ট শক্তি অন্য এক ধরনের কণা বহন করে যা আসলে বিটা-কণার সঙ্গেই নির্গত হয় এবং এই কণাকে বলা হয় নিউট্রিনো (neutrino)

এই নিউট্রিনো কণা এবং বিটা-কণার নির্গমন চতুর্থ একটি মৌলিক বলের কারণে ঘটে থাকে ত, যাকে বলা হয় দুর্বল নিউক্লীয় বল । এই দুর্বল নিউক্লীয় বল সবল নিউক্লীয় বা তড়িৎ চুম্বকীয় বলের তুলনায় প্রায় অনেকটা দুর্বল।

এই দুর্বল নিউক্লীয় বলের কারণে অনেক পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া দ্রুত সংঘটিত হয়ে থাকে । ধারণা করা হয় যে, বোসন নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের ফলে এই দুর্বল নিউক্লীয় বল কার্যকর হয়।

এখানে যা শিখলাম–
বল কি?; বলের একক কি?; বলের উদাহরণ; বল কত প্রকার ও কি কি?; টান বল কাকে বলে?; চাপ কাকে বলে?; ঠেলা কাকে বলে?; ঘর্ষণ কাকে বলে?; আকর্ষণ কাকে বলে?; বলের প্রভাব; বলের বৈশিষ্ট্য কি কি?
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “বল কি? বলের একক, প্রকারভেদ, প্রভাব এবং বৈশিষ্ট্য। What is Force?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।
5/5 - (38 votes)