কোষ কি? কোষের আবিষ্কার ও অবদান। What is Cell?

কোষ বা Cell হচ্ছে জীবদেহের গঠন ও কাজের একক যা স্বনির্ভর, আত্মপ্রজননশীল, বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোটোপ্লাজম নিয়ে গঠিত এবং পূর্বতন কোষ থেকে সৃষ্ট। প্রতিটি জীবদেহ এক বা একাধিক কোষ দিয়ে তৈরি। একটি বড় দালান যেমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট দিয়ে তৈরি, তেমনি একটি পূর্ণাঙ্গ বহুকোষী জীবদেহ অসংখ্য ক্ষুদ্রাকার কোষের সমন্বয়ে গঠিত।

তাই কোষকে জীবদেহের গাঠনিক একক বলা হয়। শারীরবৃত্তীয় কাজের ভিত্তিতে কোষকে দুভাগে ভাগ করা যায়– দেহকোষ (somatic cell) ও জননকোষ (germ cell)। আবার নিউক্লিয়াসের গঠনের ভিত্তিতে কোষ দুধরনের– আদিকোষ (prokaryotic) ও প্রকৃতকোষ (eukaryotic)।

কোষ আবিষ্কার

যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (Robert Hooke, 1635-1703) ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে নিজের তৈরি ও ৩০ গুণ বিবর্ধন ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে একটি ছিপি বা কর্কের অংশ পর্যবেক্ষণের সময় মৌচাকের ক্ষুদ্র কুঠুরীর মতো ফাঁকা অংশগুলোকে Cell নামে অভিহিত করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মৃত কোষের কোষপ্রাচীর দেখেছিলেন। সম্পূর্ণ কোষের বর্ণনা তিনি না দিলেও এ আবিষ্কারের প্রায় দেড়শ বছর ধরে অন্যান্য বিজ্ঞানী উল্লেখযোগ্য তথ্য পরিবেশন করেন। তাদের মধ্যে গ্রু (Grew, 1682), উলফ (Wolf, 1759), দ্য মিরবেল (De Mirbel, 1802), ওকেন (Oken, 1805), ল্যামার্ক (Lamarck, 1809), ডুট্রোচেট (Dutrochet, 1824) অন্যতম। এসকল বিজ্ঞানীর মত অনুযায়ী উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ কোষ দিয়ে গঠিত এবং প্রতিটি কোষ গঠন ও কাজের ব্যাপারে স্বনির্ভর।
১৬৭৪ খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডের চশমা প্রস্তুতকারী লিউয়েন হুক (A. V. Leewenhoek) ২৭০ গুণ বিবর্ধন ক্ষমতা সম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র প্রস্তুত করলে কোষ গবেষণা আরও গতিশীল হয়। ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ফেলিস ফন্টানা (Felice Fontana) কোষের মধ্যে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব অনুমান করলেও ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ব্রাউন (Robert Brown) সর্বপ্রথম উদ্ভিদকোষে সুস্পষ্ট গোলাকার নিউক্লিয়াস এর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসী কোষবিদ ফেলিক্স ডুজারডিন (Felix Dujardin) কোষের মধ্যে জেলির মতো থকথকে পদার্থকে সারকোড (sarcode) নামে অভিহিত করেন এবং ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে হুগো ভন মল (Hugo von Mohl) ঐ তরল সজীব পদার্থের নাম দেন প্রোটোপ্লাজম (protoplasm)। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ম্যাক্স নল (Max Knol) ও আর্নেস্ট রাস্কা (Ernst Ruska) কর্তৃক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণযন্ত্র আবিষ্কার এবং পরে এর উন্নতি সাধনের পর কোষ ও কোষীয় অঙ্গাণুর অতিসূক্ষ্ম (ultra) গঠন জানা সম্ভব হয়েছে। 

কোষের অবদান

কোষের অবদান দেওয়া হলো-

  • বিভিন্ন ধরনের কলা গঠন: অনেকগুলো কোষ সম্মিলিতভাবে একটি কলা ও কলাতন্ত্র গঠন করে। এ ক্ষেত্রে কলায় অবস্থিত সকল কোষ এক ধরনের কাজ করে। পরিবহন, ভারসাম্য রক্ষা করা, দৃঢ়তা প্রদান করা এদের কাজ।
  • বিভিন্ন অঙ্গ গঠন: বিভিন্ন ধরনের কোষ ও কলা মিলিত হয়ে জীবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠন করে। যেমন: মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ইত্যাদি।
  • জীবের দেহ গঠন: ক্ষুদ্র কোষ থেকে জীবের দেহ সৃষ্টি হয়। ক্রমশ এই কোষ থেকেই জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে।
  • খাদ্য উৎপাদন: সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। সবুজ উদ্ভিদের কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট নামক প্লাস্টিড থাকে। এই ক্লোরোপ্লাস্ট সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড সমন্বয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।
এছাড়া শক্তি উৎপাদন, খাদ্য ও পানি সঞ্চয় এবং প্রয়োজনীয় উৎসেচক ও রস নিঃসরণ করা ইত্যাদিতে ভূমিকা রয়েছে।
অনুশীলনী

কত সালে কোষ আবিষ্কৃত হয়?

উত্তরঃ ১৬৬৫ সালে কোষ আবিষ্কৃত হয়।

জনন কোষের কাজ কি?

উত্তরঃ জনন কোষের কাজ হলো জীবের প্রজননে অংশগ্রহণ করা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *