স্থির তরঙ্গ কাকে বলে? অগ্রগামী তরঙ্গ ও স্থির তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য কি?

যে তরঙ্গ কোনো স্থানে উৎপন্ন হয়ে সেখানেই বিলীন হয় এবং কোনো দিকে অগ্রসর হয় না তাকে স্থির তরঙ্গ বলে। স্থির তরঙ্গের ক্ষেত্রে কিছু কণা সাম্যাবস্থানে স্থির থাকে আবার কিছু কণা সর্বোচ্চ বিস্তারে কাঁপতে থাকে। এ স্থির বিন্দুগুলোকে নিস্পন্দ বিন্দু এবং সর্বোচ্চ বিস্তারে কম্পনরত বিন্দুগুলোকে সুস্পন্দ বিন্দু বলে।
স্থির তরঙ্গ সৃষ্টির শর্ত (Condition for propagation of Stationary Waves)
নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে স্থির তরঙ্গ উৎপন্ন করা হয় :
(১) দুটি অভিন্ন চল তরঙ্গ বিপরীত দিক থেকে অগ্রসর হয়ে একে অন্যের উপর উপরিপাতিত হতে হবে।
(২) তরঙ্গ দুটি একই বেগে বিপরীত দিক থেকে আসতে হবে।
(৩) তরঙ্গ পৃষ্ঠ অনুভূমিক অবস্থানে সংকুচিত হয়।
(৪) তরঙ্গ শীর্ষ তরঙ্গ অবস্থানে প্রসারিত হয়।
(৫) প্রতিটি বিন্দুতে তরঙ্গ দুটির জন্য সরণ সমান ও বিপরীত হতে হবে।
(৬) তরঙ্গ দুটির বিস্তার সমান হতে হবে।
(৭) তরঙ্গ দুটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সমান হতে হবে।
টানা তারে স্থির তরঙ্গের গঠন : একটি টানা তারের কোথাও আঘাত করলে একটি তরঙ্গ সৃষ্টি হয় এবং এই তরঙ্গ তার বেয়ে দুই প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয় এবং পরিশেষে দুই প্রান্ত হতে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। এই প্রতিফলিত তরঙ্গ ও মূল তরঙ্গের প্রকৃতি অভিন্ন থাকলেও তাদের মাঝে দশা পার্থক্য থাকে৷ এই দুটি তরঙ্গ মিলিত হয়ে স্থির তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এই তরঙ্গ তারের বাইরে যায় না। তারের মধ্যে পর্যায়ক্রমে উৎপন্ন ও বিলুপ্ত হয়। 

অগ্রগামী তরঙ্গ ও স্থির তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য কি?

অগ্রগামী তরঙ্গ

  • মাধ্যমের সকল কণাই পর্যাবৃত্ত গতি লাভ করে।
  • প্রত্যেক কণার বিস্তার সমান কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে এদের সমান সরণ হয় না।
  • তরঙ্গের অভিমুখে এক কণার কম্পন পরবর্তী কণায় স্থানান্তরিত হয়, ফলে তরঙ্গ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট বেগে অগ্রসর হয়।
  • মাধ্যমের কণাগুলোর দশা এক কণা থেকে অন্য কণায় সঞ্চালিত হয়।
  • মাধ্যমের কণাগুলো কখনো স্থির অবস্থা প্রাপ্ত হয় না।
  • চলমান অনুপ্রস্থ তরঙ্গের ক্ষেত্রে একটি তরঙ্গচূড়া ও একটি তরঙ্গখাঁজ নিয়ে তরঙ্গদৈর্ঘ্য গঠিত এবং চলমান অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে একটি সংকোচন ও একটি প্রসারন নিয়ে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য গঠিত হয়।

 

স্থির তরঙ্গ

  • মাধ্যমের স্থির বিন্দুগুলো ছাড়া সকল কণাই পর্যাবৃত্ত গতি লাভ করে।
  • কণাগুলোর পর্যায়কাল সমান হলেও বিস্তার সমান নয়।
  • মাধ্যমের মধ্যে তরঙ্গগুলো স্থিরভাবে অবস্থান করে এবং সমান দূরত্বে কতগুলো স্থানে এদের সংকোচন ও প্রসারণ একবার দৃশ্য ও আর একবার অদৃশ্য হয়।
  • পাশাপাশি দুটি নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী সকল কণা একই দশায় থাকে কিন্তু বিস্তার অভিন্ন।
  • প্রত্যেক পূর্ণ কম্পনে কণাগুলো দু’বার স্থির অবস্থায় আসে।
  • পর পর তিনটি সুস্পন্দ বিন্দু বা তিনটি নিস্পন্দ বিন্দুর মধ্যবর্তী দূরত্বই স্থির তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *