কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? (What is Computer Network in Bengali/Bangla?)
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যাতে দুই বা ততোধিক কম্পিউটার একসাথে যুক্ত থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ফলে একটি কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য একাধিক ব্যবহারকারীর নিজ নিজ কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ, তথ্যের আদান প্রদান, ই-কমার্স, ইলেক্ট্রনিক মেইল, ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি, বুলেটিন বোর্ড ইত্যাদির প্রচলন ও প্রসার একের পর এক বেড়েই চলেছে। নেটওয়ার্কে যে সকল হার্ডওয়্যার রিসোর্স খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হয় তা হলো প্রিন্টার, ফ্যাক্স মডেম, স্ক্যানার এবং স্টোরেজ ডিভাইস (যেমন হার্ডডিস্ক, সিডি বা কম্প্যাক্ট ডিস্ক), প্লোটার (Plotter) ইত্যাদি।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের উপাদান (Elements of Computer Network)
একটি নেটওয়ার্কে মূলত তিনটি উপাদান থাকে। এগুলো হলো– অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার (Application Software), নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার (Network Software) এবং নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার (Network Hardware)।
- অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার হচ্ছে কতগুলি ইন্টারফেস প্রোগ্রামের সমষ্টি যার মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে নেটওয়ার্কে বিদ্যমান বিভিন্ন সম্পদ ভাগাভাগি করতে পারেন। এগুলি ক্লায়েন্ট-সার্ভার কিংবা পিয়ার-টু-পিয়ার প্রকৃতির হতে পারে।
- নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার হচ্ছে কতগুলি প্রোগ্রামের সমষ্টি যা নেটওয়ার্ক ব্যবহারের নিয়ম বা প্রোটোকল স্থাপন করে, যার ভিত্তিতে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে তথ্য আদান প্রদান করে বা “কথা বলে”। ফরম্যাটকৃত নির্দেশাবলি তথা প্যাকেটসমূহ আদান-প্রদান করে এই প্রোটোকলগুলি রক্ষা করা হয়। প্রোটোকলগুলি দুই কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনগুলির মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ সৃষ্টি করে, ভৌত নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে প্যাকেট পরিচালন করে এবং একই সময়ে পাঠানো প্যাকেটের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টা করে।
- যেসমস্ত ভৌত যন্ত্রাংশ বা উপাদান একাধিক কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে, তাদেরকে একত্রে নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার বলা হয়। এদের মধ্যে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কম্পিউটারের সিগনাল বহনকারী ট্রান্সমিশন মাধ্যম এবং নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার। ট্রান্সমিশন মাধ্যম সাধারণত তার বা আপটিকাল ফাইবারে তৈরি। নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টারের কাজ ট্রান্সমিশন মাধ্যম ও নেটওয়ার্ক সফটওয়্যারের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা।
নেটওয়ার্কে ট্রান্সমিট করা তথ্য বাইনারি ডিজিট বা বিট আকারের হয়, যাতে কম্পিউটারের ইলেকট্রনিক বর্তনী সহজেই তা প্রক্রিয়া করতে পারে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ (Types of Computer Network)
ব্যবহারকারী তথা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কের উৎপত্তি হয়েছে। যেমনঃ–
মালিকানা ভিত্তিতে
মালিকানা ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক ২ প্রকার। যথাঃ–
- প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network)
- পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network)
টপোলজির ভিত্তিতে
টপোলজির উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্ক প্রধানত চার প্রকার। যথাঃ–
- স্টার টপোলজি (Star Topology)
- রিং টপোলজি (Ring Topology)
- বাস টপোলজি (Bus Topology)
- মেশ টপোলজি (Mesh Topology)
কার্যাবলির ভিত্তিতে
কার্যাবলির বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন–
- পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক (Per-to-Per Network)
- ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client Server Network)
কার্যক্ষেত্রের ভিত্তিতে
কার্যক্ষেত্রের পরিধির উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন–
- লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network)
- মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network)
- ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network)
সুইচিং এর উপর ভিত্তি করে
সুইচিং কৌশলের উপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন–
- সার্কিট সুইচ নেটওয়ার্ক (Circuit switched Network)
- ম্যাসেজ সুইচ নেটওয়ার্ক (Message Switched Network)
- প্যাকেট সুইচ নেটওয়ার্ক (Packet Switch Network)
নির্মাণ কৌশলের ভিত্তিতে
নির্মান কৌশলের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক মূলত ২ প্রকার। যথাঃ–
- পয়েন্ট টু পয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Point to Point Network)
- ব্রডকাস্ট বা মাল্টিপয়েন্ট নেটওয়ার্ক (Broadcast or Multipoint Network)
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সুবিধা (Advantages of Computer Network)
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের একটি বড় সুবিধা হলো রিসোর্স শেয়ারিং। অর্থাৎ নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত প্রিন্টার বা স্ক্যানারগুলো নেটওয়ার্কভুক্ত প্রতিটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য আলাদা স্ক্যানার বা প্রিন্টারের প্রয়োজন হয় না।