পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের চাবিকাঠি। অন্যান্য বিজ্ঞানের মৌলিক শাখা হলো পদার্থবিজ্ঞান। কারণ এর নীতিগুলোই বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাসমূহের ভিত্তি রচনা করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অণু-পরমাণু গঠন থেকে শুরু করে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান বিস্তৃত। পঠন পাঠনের সুবিধার জন্য এবং পদার্থবিজ্ঞানকে বিশদভাবে আলোচনার জন্য তাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা :
(১) সাধারণ পদার্থবিজ্ঞান (General Physics)
(২) তাপবিজ্ঞান
(৩) শব্দবিজ্ঞান (Acoustics)
(৪) আলোকবিজ্ঞান (Optics)
(৫) চুম্বকবিজ্ঞান (Magnetism)
(৬) তড়িৎ বা বিদ্যুৎ বিজ্ঞান (Electricity)
(৭) ইলেকট্রনিক্স (Electronics)
(৮) পারমাণবিক বিজ্ঞান ইত্যাদি।
সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা :
(১) বলবিদ্যা (Mechanics)
(২) পদার্থের ধর্ম (Properties of matter)
বলবিদ্যা বস্তুর উপর বলের ক্রিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করে। পদার্থের ধর্ম বস্তুর বিভিন্ন গুণ আলোচনা করে।
বলবিদ্যা আবার দুই ভাগে বিভক্ত, যথা :
(১) স্থিতিবিদ্যা (Statics) এবং
(২) গতিবিদ্যা (Dynamics)
স্থিতিবিদ্যা স্থিতিশীল বস্তুর উপর বলের ক্রিয়া আলোচনা করে এবং গতিবিদ্যা গতিশীল বস্তুর উপর বলের ক্রিয়া আলোচনা করে। গতিবিদ্যাকে পুনরায় দু’অংশে ভাগ করা হয়– সৃতিবিদ্যা ও চলবিদ্যা।
পদার্থের কতকগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলোকে মিলিতভাগে পদার্থের ধর্ম (Properties of Matter) বলে। পদার্থের ধর্ম দুই প্রকার, যথা :
(১) সাধারণ ধর্ম (General property) এবং
(২) বিশেষ ধর্ম (Special property)
যে ধর্ম সকল পদার্থেরই কম-বেশি রয়েছে তাকে পদার্থের সাধারণ ধর্ম বলে। যেমন- ওজন, বিস্তৃতি, রোধ, স্থিতিস্থাপকতা ইত্যাদি। আর যে ধর্ম সকল পদার্থের নেই তাকে পদার্থের বিশেষ ধর্ম বলে। যেমন— তারতা (Visco), পাততা, দৃঢ়তা, ভঙ্গুরতা ইত্যাদি ধর্ম কেবলমাত্র কঠিন পদার্থের বেলায় দেখা যায়। এসব ধর্ম কঠিন পদার্থের বিশেষ ধর্ম। সান্দ্রতা (Viscosity) তরল ও বায়বীয় পদার্থের বিশেষ ধর্ম। পৃষ্ঠটান বা তলটান (Surface Tension) তরল পদার্থের বিশেষ ধর্ম।
পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর বা আওতা সুবিস্তীর্ণ। মানব সভ্যতার অগ্রগতির মূলে ইহা ভিত্তিপ্রস্তর স্বরূপ। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইহা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া এই মহাবিশ্ব সম্বন্ধে কোনো কিছু জানা আমাদের পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব। অসীম আকাশ হতে শুরু করে প্রত্যেক পরমাণুর অভ্যন্তর পর্যন্ত এর পরিধি বিস্তৃত। যেখানেই বস্তু ও শক্তি রয়েছে সেখানেই পদার্থবিজ্ঞানের কিছু না কিছু করণীয় রয়েছে। সুতরাং সাধারণ শিক্ষার বাহক হিসেবে পদার্থবিজ্ঞানের সেবায় ব্রত হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। পদার্থবিজ্ঞানের ব্যাপকতা এবং এর ব্যবহার মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ–
প্রশ্ন-১. কোনটি ভৌত বিজ্ঞানের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী শাখা?
উত্তর : পদার্থবিজ্ঞান।
প্রশ্ন-২. পদার্থবিজ্ঞানের মূল ভিত্তি কোন নীতিকে বলা হয়?
উত্তর : শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি।
প্রশ্ন-৩. বিখ্যাত দার্শনিক থেলিস কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন?
উত্তর : গ্রিস।
প্রশ্ন-৪. কে জ্যামিতির সাহায্যে প্রথম পিরামিডের উচ্চতা পরিমাপ করেছিলেন?
উত্তর : থেলিস।
প্রশ্ন-৫. গণিত ও ভেষজ বিজ্ঞানে কে বিশেষ অবদান রাখেন?
উত্তর : পিথাগোরাস।
প্রশ্ন-৬. কে পদার্থের অবিভাজ্য এককের নাম দেন পরমাণু?
উত্তর : ডেমোক্রিটাস।
প্রশ্ন-৭. কে সর্বপ্রথম বলেন যে, সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে অন্যান্য গ্রহ তার চারপাশে ঘুরছে?
উত্তর : অ্যারিস্টার্কাস।
প্রশ্ন-৮. পাখি উড়া পর্যবেক্ষণ করে উড়োজাহাজের মডেল তৈরি করেন কে?
উত্তর : লিওনার্দো দা ভিঞ্চি।
প্রশ্ন-৯. কে জ্যামিতি ও আলোকবিজ্ঞান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা লব্ধ ফলাফল প্রদান করেন?
উত্তর : ইউক্লিড।
প্রশ্ন-১০. কোন বিজ্ঞানী লিভারের কার্যনীতি আবিষ্কার করেন?
উত্তর : আর্কিমিডিস।
প্রশ্ন-১১. উদস্থিতি বিদ্যায় সূত্র আবিষ্কার করেন কোন বিজ্ঞানী?
উত্তর : আর্কিমিডিস।
প্রশ্ন-১২. বোসন কার নাম থেকে এসেছে?
উত্তর : সত্যেন্দ্রনাথ বসু।
প্রশ্ন-১৩. বিজ্ঞানের বন্ধ্যাকালে কোন বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন?
উত্তর : মুসলিম ও ভারতীয়।
প্রশ্ন-১৪. ইবনে আল হাইয়াম কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন?
উত্তর : আলোকতত্ত্ব।
প্রশ্ন-১৫. কোন বিজ্ঞানী রসায়ন, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন?
উত্তর : জাবির ইবনে হাইয়ান।