পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ২য় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। ব্রিটিশ শাসনের দুটি খারাপ ও দুটি ভালো দিক উল্লেখ করো।

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনের দুটি খারাপ দিক:

১. ‘ভাগ করো শাসন করো’—নীতির ফলে এ দেশের মানুষের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও অঞ্চলভেদে বিভেদ সৃষ্টি হয়।

২. অনেক কারিগর বেকার ও অনেক কৃষক গরিব হয়ে যায় এবং বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যা ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত।

ব্রিটিশ শাসনের দুটি ভালো দিক:

১. নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হয়।

২. সড়কপথ ও রেলপথ উন্নয়ন এবং টেলিগ্রাফ প্রচলনের ফলে যোগাযোগব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়।

প্রশ্ন-২। ইংরেজরা কেন ভারতে এসেছিল এবং কবে তারা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে?

উত্তর: মোঘল আমলে ইংরেজরা ব্যবসা করতে ভারতীয় উপমহাদেশে আসে। ভারত এবং ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ১৬০০ সালে তারা ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে।

প্রশ্ন-৩। বাংলার শেষ নবাব কে ছিলেন এবং কত সালে তিনি বাংলার নবাব হন?

উত্তর: বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজ-উদ-দৌলা। তিনি ১৭৫৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলার নবাব হন।

প্রশ্ন-৪। নবাবের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করে?

উত্তর: নবাবের বিরুদ্ধে তিনটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করলেন এঁরা হলেন তাঁর পরিবারের কিছু সদস্য, বিশেষ করে খালা ঘসেটি বেগম, এদেশীয় বণিক রায় দুর্লভ, জগৎশেঠ। এ ছাড়া ষড়যন্ত্রে ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান মীর জাফর এবং ইংরেজ বণিকগণ।

প্রশ্ন-৫। নবাব কেন যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন?

উত্তর: এ দেশের বণিকেরা ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে যোগ দেন। সেনাবাহিনীর প্রধান মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব পরাজিত হন।

প্রশ্ন-৬। ইতিহাসের কোন সময় কোম্পানির শাসন নামে পরিচিত এবং কোম্পানির প্রথম শাসনকর্তা কে ছিলেন?

উত্তর: ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এক শ বছর এ দেশে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন চলে। ইতিহাসে যা কোম্পানির শাসন নামে পরিচিত। কোম্পানির প্রথম শাসনকর্তা ছিলেন লর্ড ক্লাইভ।

প্রশ্ন-৭। ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতির ফলে কী হয়েছিল?

উত্তর: ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতির ফলে এ দেশের মানুষদের মধ্যে ধর্ম, বর্ণ, জাতি এবং অঞ্চলভেদে বিভেদ সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন-৮। ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ কী?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনামলে অনেক কারিগর বেকার ও অনেক কৃষক গরিব হয়ে যায় এবং বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজি ১৭৭০) হয়েছিল, ‘যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন-৯। বাংলার ‘নবজাগরণ’ কাকে বলে?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনামলে শিক্ষা ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে উনিশ শতকে বাংলায় সামাজিক সংস্কারসহ শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে, যা বাংলার ‘নবজাগরণ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন-১০। তিতুমীর কেন বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন?

উত্তর: তিতুমীর ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য বারাসাতের কাছে নারকেলবাড়িয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন। ১৮৩১ সালের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিতুমীর পরাজিত ও নিহত হন।

প্রশ্ন-১১। সেনাবাহিনীতে ভারতীয় এবং ব্রিটিশ সিপাহীর সংখ্যা কত ছিল?

উত্তর: সেনাবাহিনীতে ৫০ হাজার ব্রিটিশ এবং ৩ লাখ ভারতীয় সিপাহী ছিল।

প্রশ্ন-১২। বঙ্গভঙ্গ কাকে বলে?

উত্তর: শিক্ষাপ্রসার এবং নবজাগরণের ফলে সারা বাংলায় দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তার লাভ করে। ব্রিটিশরা ভারতীয় চেতনার প্রসারে ভীত হয়ে পড়ে এবং ১৯০৫ সালে বাংলা প্রদেশকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। একে বঙ্গভঙ্গ বলে।

প্রশ্ন-১৩। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে কবি ও লেখকেরা কীভাবে বেগবান করেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের কবিতা, গান ও লেখার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধিকারের চেতনা আরও বেগবান হয়।

প্রশ্ন-১৪। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যাঁদের আত্মত্যাগ ও সাহসী ভূমিকা চিরস্মরণীয়, তাঁদের নাম লেখো।

উত্তর: ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, তিতুমীর এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা চিরস্মরণীয়।

 

 

বর্ণনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। সিপাহি বিদ্রোহ কবে হয়েছিল? কার নেতৃত্বে এ বিদ্রোহী শুরু হয়? এ বিদ্রোহের কারণ লেখো।

উত্তর: ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল।

পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডের নেতৃত্বে এ বিদ্রোহ শুরু হয়ে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

সিপাহি বিদ্রোহের কারণ:

১. সেনাবাহিনীতে সিপাহি পদে ভারতীয়দের সংখ্যা বেশি ছিল। সেখানে ৫০ হাজার ব্রিটিশ এবং ৩ লাখ ভারতীয় সিপাহি ছিল।

২. ১৮৫৬ সালের পর ভারতের বাইরেও সৈন্যদের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

৩. কামান ও বন্দুকের কাতু​র্জ পিচ্ছিল করার জন্য গরু ও শূকরের চর্বি ব্যবহারের গুজব নিয়ে ধর্মীয় অশান্তি তৈরি করা হয়েছিল।

৪. সৈন্যদের আন্দোলনকে সমর্থন জানানোর জন্য সাধারণ মানুষ প্রস্তুত ছিলেন। এই আন্দোলন দ্রুতই সৈন্যদের থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকার কঠোর হাতে এ বিদ্রোহ দমন করে। এ বিদ্রোহে প্রায় এক লাখ ভারতীয় মারা যায়।

প্রশ্ন-২। কোন শতকে নবজাগরণ ঘটে? নবজাগরণের ফলাফল লেখো। কারা নবজাগরণে অবদান রাখেন?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনকালে শিক্ষা ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে। এ সময় সামাজিক সংস্কারসহ শিক্ষা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে।

বাংলায় নবজাগরণের জন্য যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—

১. রাজা রামমোহন রায়

২. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

৩. নবাব আবদুল লতিফ

৪. সৈয়দ আমীর আলী

৫. মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ।

তাঁদের হাত ধরেই উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটে। তাঁরা নিজেদের সমাজে বহুকাল ধরে প্রচলিত নানা কুসংস্কার, কুপ্রথা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন।

প্রশ্ন-৩। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব কে? কত সালে তিনি নবাব হন? পলাশীর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখো।

উত্তর: বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা।

তিনি ১৭৫৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে বাংলার নবাব হন।

পলাশীর যুদ্ধের কারণ: নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর পরিবারের কিছু সদস্যের, বিশেষ করে খালা ঘষেটি বেগম, রায়দুর্লভ এবং জগৎশেঠের মতো ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হন। এ সময় নানা কারণে নবাবের সঙ্গে ইংরেজ বণিকদের বিরোধ দেখা দেয়। ইংরেজদের সঙ্গে নবাববিরোধী শক্তিগুলো একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়। এসবের জের ধরে শেষাবধি ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইংরেজ শক্তির সঙ্গে নবাবের সৈন্যদের পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ হয়।

যুদ্ধের ফলাফল: সেনাবাহিনীর প্রধান মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব পরাজিত হন। পরে নবাবকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলায় ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছরের ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন-৪। সাহিত্যিকেরা রাজনৈতিক আন্দোলনে কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেন?

উত্তর : বিশ শতকে রাজনৈতিক আন্দোলনের তৃতীয় ধাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিভিন্ন সাহিত্যিক তাঁদের লেখার মাধ্যমে। শিক্ষার প্রসার ও নবজাগরণের ফলে দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তার লাভ করে। এ সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের কবিতা, গান ও লেখার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধিকার চেতনা আরও বেগবান হয়।

প্রশ্ন-৫। বিশ শতকে কেন দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তার লাভ করে? ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দল কবে গঠিত হয়? বঙ্গভঙ্গ সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তর : শিক্ষার প্রসার ও নবজাগরণের ফলে বিশ শতকে দেশপ্রেমের চেতনা বিস্তার লাভ করে।

১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’নামে রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।

ব্রিটিশরা ভারতীয় জাতীয় চেতনার প্রসারে ভীত হয়ে পড়ে এবং ১৯০৫ সালে বাংলা প্রদেশকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, একে বঙ্গভঙ্গ বলে। আসামকে অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ব বাংলা অঞ্চল গঠিত হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হলে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়, অর্থাৎ দুই বাংলাকে একত্র করে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন-৬। ‘ভারতীয় মুসলিম লীগ’ কবে গঠিত হয়? ভারতের কয়েকটি বড় আন্দোলনের নাম লেখো। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের সম্পর্কে লেখো।

উত্তর : ১৯০৬ সালে ‘ভারতীয় মুসলিম লীগ’নামে রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।

ভারতের বড় আন্দোলনগুলোর মধ্যে ছিল স্বরাজ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র যুব বিদ্রোহ।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা চিরস্মরণীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতের অনেক সাহসী তরুণ ব্রিটিশদের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু তাই বলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেমে থাকেনি, স্বাধীনতার জন্য ভারতীয়দের আন্দোলন চলতে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *