শান্তিরক্ষা মিশনে র‍্যাবকে নিষিদ্ধ করার যৌথ আহ্বান জানিয়েছে ১২ আন্তর্জাতিক সংস্থা। সূত্র মতে, একটি সমন্বিত পদক্ষেপে বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এর সদস্যদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

এ বিষয়ে, আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জাঁ-পিয়ের ল্যাক্রোক্সকে ব্যক্তিগতভাবে অধিকার গোষ্ঠীগুলোর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে, গত বছরের ৮ নভেম্বর পাঠানো চিঠিটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ।

‘মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাবনা বাড়াবে র‍্যাব’

রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যদি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার বিষয়ে গুরুতর হন, তাহলে তিনি র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মতো বিতর্কিত ইউনিটগুলোকে মিশনে মোতায়েন থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।”

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে; এখন জাতিসংঘের সময় এসেছে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার।”

এদিকে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুই শাঁবু প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে র‍্যাবের সদস্যদের মোতায়েন করলে আদতে জাতিসংঘের মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্ভাবনা বাড়াবে।”

তিনি বলেন, “জাতিসংঘের উচিত হোস্ট এবং নিজেদের সৈন্য পাঠানো দেশগুলোকে এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠানো। তাদেরকে জানানো উচিত যে, অপমানজনক ইউনিটগুলো জাতিসংঘের অংশ হবে না।”

জাতিসংঘের উদ্বেগ এবং বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান

এইচআরডব্লিউ- এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো ব্যাপকভাবে র‍্যাবের অপব্যবহার নথিভুক্ত করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইউনিটের সদস্যরা নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন জনিত কাজের সাথে জড়িত।

২০২১ এর মার্চের শুরুতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট বলেন, “র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের দ্বারা নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগগুলো উদ্বেগের কারণ ছিল।”

কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের অধীনে বাংলাদেশের ২০১৯ সালের ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়। কমিটি জানায়, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সাথে কাজ করা কর্মীদেরকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে মোতায়েন করার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

গত বছরের ৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের এনফোর্সড অ্যান্ড ইনভলেন্টেরি ডিস্যাপিয়ারেন্স উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, “র‍্যাবের সদস্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘন জনিত কাজে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগের তদন্ত বা যাচাই প্রক্রিয়া ছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।”

বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর মধ্যে এ ধরনের ব্যক্তিদের পদোন্নতি এবং পুরস্কৃত হতে দেখা যায় বলেও উদ্বেগ জানায় তারা।

এদিকে, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে মোতায়েনের জন্য প্রস্তাবিত সকল সামরিক ও পুলিশ কর্মীদের জন্য জাতিসংঘের যথাযথ নির্দেশনাসহ একটি স্বাধীন যাচাই পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা এবং কমিশনে মোতায়েন করা কোনো ব্যক্তি বা ইউনিট যাতে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাম গুম বা অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত কাজে জড়িত না থাকে তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারের কমিটি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান তারা।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর, র‍্যাবকে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্টের অধীনে ‘প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বা এ ধরণের কাজে জড়িত বিদেশি প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে মনোনীত করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

এছাড়া, বর্তমানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদসহ র‍্যাবের ৭ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

এদিকে, এইচআরডব্লিউ উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলো জানিয়েছে, অফিসাররা তাদের বাড়িতে যেয়ে তাদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে গুম করা হয়নি, এ ধরণের মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন তারা।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠিতে সাক্ষর করেছে

  • অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
  • এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলেন্টারি
  • ডিস্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি)
  • এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম- এশিয়া)
  • এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন
  • এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস
  • ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট
  • সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন
  • হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
  • ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস
  • রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস
  • অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস
  • ওয়ার্ল্ড অরগ্যানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি)
Rate this post

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.