খানুয়ার যুদ্ধের বর্ণনা দাও। খানুয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে যা জান লিখ
ভারতবর্ষের শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও বীরবিক্রমশীল যোদ্ধা হচ্ছেন জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। তিনি অতি অল্প বয়সে নানারকম প্রতিকূলতাকে জয় করে ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি দেন তবে বাবর একবারেই ভারতবর্ষ জয় করতে পারেনি।
কয়েকটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে বাবর তার দিল্লি জয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। আর বাবরের এ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে খানুয়ার যুদ্ধ।
খানুয়ার যুদ্ধের বর্ণনা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে খানুয়ার যুদ্ধ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি ছিল বাবরের সাথে রাজপুতদের সম্মিলিত যুদ্ধ। নিম্নে খানুয়ার যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. রাজপুতদের সামরিক জোট গঠন : মেবারের রাজা রানা সংগ্রাম সিংহ বাবরের আক্রমণ থেকে নিজ দেশকে রক্ষার জন্য এক বিশাল রাজপুত সৈন্যবাহিনী গঠন করেন।
তাছাড়া রানা সংগ্রাম সিংহ বাবরকে মোকাবিলা করার জন্য মারওয়ানের ভীম সিংহ, চান্দেরীর মেদিনীরাও, দুর্গাপুরের রাওয়াম উদয়সিংহ, মেওয়াটের হাসান খান, মেওয়াট ছাড়াও অম্বর, গোয়ালিয়র, আজমির প্রভৃতি অঞ্চলের শাসকদের নিয়ে এক শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করে। এ সময় এ শৃঙ্খলিত সৈন্যবাহিনীতে ৮০ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য ও পাঁচশত হাতি ছিল।
২. মুঘল সৈন্যদের প্রেরণা : সংগ্রাম সিংহের সামরিক প্রস্তুতি ও বিপুল সৈন্যবাহিনী দেখে বাবরের সৈন্যরা ভয় পেয়ে যায়। তবে মুঘল সৈন্যদের প্রেরণা বাবর অত্যন্ত সুকৌশলে সৈন্যবাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
বাবর ফরাসি সেনানায়ক নেপোলিয়নের ন্যায় নিজ সৈন্যবাহিনীকে এভাবে উৎসাহ দেন যে, মানুষ মরণশীল তবে রণাঙ্গনে প্রাণ দিয়ে শহিদ হওয়া কাপুরুষতা থেকে শ্রেয়। এভাবে বাবর নিজ সেনাবাহিনীর মধ্যে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করে।
৩. সৈন্য শিবির স্থাপন : রানা সংগ্রাম সিংহের সামরিক জোট তার বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাবরের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়। বাবরও চুপ করে থাকেননি।
তিনি তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে আমার দিকে ধাবিত হন। বাবর তার সৈন্যবাহিনীকে নিয়ে আগ্রার সন্নিকটে সিক্রির অদূরে খালুয়া নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন।
৪. পরিকল্পনা প্রণয়ন : বাবর তার সৈন্য শিবিরে পানিপথের প্রথম যুদ্ধের ন্যায় ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি তার সৈন্যদেরকে ডান, মধ্য ও বাম সারিতে সাজান।
ডানদিকের সৈন্যবাহিনীর দায়িত্ব ছিল বাবরের পুত্র হুমায়ূনের উপর এবং বামদিকের দায়িত্ব ছিল শ্যালক সৈয়দ মাহদি খাজার উপর।
বাবর নিজে মধ্যের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেন। তাছাড়া তিনি ডান ও বাম দিকের সেনাবাহিনীর পাশে দুটি রিজার্ভ বাহিনী মোতায়েন রাখেন যেন তারা চারদিক দিয়ে ঘিরে শত্রু বাহিনীকে পিছন থেকে আক্রমণ করতে পারে।
৫.’ কামানের গোলা নিক্ষেপ : ১৫২৭ সালের ১৬ মার্চ শনিবার সকাল ৯টায় খানুয়ার প্রান্তরে রাজপুতের সৈন্যবাহিনী ও বাবরের সৈন্যবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
সারাদিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। খানুয়ার যুদ্ধেও বাবর কামানের ব্যবহার করেন এবং বাবরের কামানের গোলার সামনে টিকতে না পেরে সংগ্রাম সিংহের বিশাল বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
৬. বাবরের বিজয় লাভ : খানুয়ার যুদ্ধের প্রথমদিকে রানা সংগ্রাম সিংহের সৈন্যবাহিনী যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করলেও রাজপুতরা শেষ পর্যন্ত বাবরের নিকট পরাজয় স্বীকার করে।
এ যুদ্ধে মেওয়াটের হাসান খান, দুর্গাপুরের রাওয়াল উদয় সিংহসহ বহু সেনাপতি ও সৈন্য নিহত হন। সংগ্রাম সিংহ কোনোরকম প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায় এবং বাবর এ যুদ্ধেও জয়লাভ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খানুয়ার যুদ্ধের বর্ণনা মূলত বাবরের রণকৌশলের বাস্তবায়ন। নিজ মেধা ও বুদ্ধি দ্বারা বাবর শত্রুপক্ষের বিশাল সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করেন।
আর এ যুদ্ধে বিজয়ের ফলে বাবরের ভারত শাসনের পথ আরো পরিচ্ছন্ন হয়। পানিপথের যুদ্ধের জয়লাভের চেয়ে এ যুদ্ধে জয়লাভ ফলপ্রসূ হয় বেশি।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “খানুয়ার যুদ্ধের বর্ণনা দাও। খানুয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে যা জান লিখ” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।