HISTORY

খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা কর | খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর।

1 min read

ভারতবর্ষের শাসকবর্গের ইতিহাসে বাবর এক অতি পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ নাম । কেননা ভিনদেশী বাবর মাত্র কয়েক হাজার সৈন্য নিয়ে ভারত অধিপতিদের হাজার হাজার সৈন্যবাহিনীকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

তবে বাবরের এ ভারত জয় করার জন্য কতকগুলো যুদ্ধ করতে হয়েছিল। যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হচ্ছে খানুয়ার যুদ্ধ ।

 খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল : ভারতবর্ষে বাবরের মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে খানুয়ার যুদ্ধ এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কেননা এ যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। নিম্নে খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করা হলো :

১. রাজপুতদের শোচনীয় পরাজয় : খানুয়ার যুদ্ধের ফলে ভারতের রাজপুতদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ভারতে বাবরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা তথা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকে ভারতীয় রাজপুতরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি।

তাই তারা সকলেই একত্রিত হয়ে বাবরের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামরিক জোট গঠন করে। এ সামরিক জোট শত শত হস্তী ও হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের রণকৌশলের কাছে তারা সকলেই পরাজয়বরণ করে।

২. সমগ্র ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভের মধ্যদিয়ে বাবর দিল্লি ও আগ্রা অধিকার করেছিল। ঠিকই কিন্তু সমগ্র ভারতবর্ষের বিশাল অংশ এমনকি উত্তর ভারতের বিরাট অংশ বাবরের আয়ত্বের বাইরে ছিল।

এ সমস্ত অঞ্চলে বাবরের চেয়ে রাজপুতদের দাপট বেশি ছিল। কিন্তু খানুয়ার যুদ্ধে রাজপুতদের পরাজয়ের ফলে তথা বাবরের জয়লাভ করার ফলে সমগ্র ভারতবর্ষে স্থায়ীভাবে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩. রাজপুতদের শক্তি নিঃশেষ : খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের বিজয়ের ফলে বাবরের রাজপুত শত্রু নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কেননা এ যুদ্ধে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের রাজপুতগণ ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে।

কিন্তু যুদ্ধে তারা শুধু হেরেই যায়নি, বরং এ যুদ্ধে মেওয়াটের হাসান খান, দুর্গাপুরের রাওয়াল উদয় সিংহসহ বহু রাজপুত নেতা মারা যান।

রানা সংগ্রাম সিংহ আহত অবস্থায় পালিয়ে গেলেও এর দু’বছর পর তার মৃত্যু হয়। যার ফলে বাবরের সামনে দৃশ্যত আর কোনো শত্রু থাকে না ।

৪. দিল্লিকে স্থায়ী রাজধানী ঘোষণা : দিল্লিকে বাবরের সাম্রাজ্যের স্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করাও মূলত খানুয়ার যুদ্ধেরই ফল। বাবর দিল্লি জয়ের পূর্বে নানা যুদ্ধে জয়লাভ করলেও কোনখানেই স্থায়ী হননি।

এমনকি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বিজয়ের পরও তিনি দিল্লিতে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। কিন্তু খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভ করার পর তিনি কাবুলে ফেরার কথা ভুলে যান।

তিনি কাবুলের চেয়ে দিল্লিকে বেশি নিরাপদ মনে করেন এবং তার রাজধানী কাবুল হতে দিল্লিতে স্থানান্তর করেন।

৫. বাবরের বাদশাহ উপাধি গ্রহণ : খানুয়ার যুদ্ধের জয়লাভের ফলে বিভিন্ন উপাধিগুলোর মধ্যে রদবদল বা পরিবর্তন আসে। বাবর এ যুদ্ধে জয়ের পর ভারতবর্ষে সালতানাতের পরিবর্তে “মুলক’ বা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

তাছাড়া এ সময় বাবর প্রজাসাধারণের কাছে উচ্চ মর্যাদা ঘোষণার জন্য পূর্ববর্তী শাসকদের ‘সুলতান’ উপাধি পরিত্যাগ করে ‘বাদশাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন।

৬. বাবরের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি : খানুয়ার যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করার ফলে ভারতবর্ষে তথা চতুর্দিকে বাবরের প্রভাব প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে। সকলেই বাবরের রণকৌশলের প্রশংসা করেন।

তাছাড়া এসময় বাবর পূর্ববর্তী সুলতানদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। রাজ্যের লোকেরা বাবরের ভয়ে সকলেই তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। বাবর হয়ে উঠেন ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের জয় ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে।

বিশেষ করে এ যুদ্ধের ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাবুলের পরিবর্তে দিল্লির প্রাধান্য সূচিত হয়। তাছাড়া এর মাধ্যমে রাজপুত শক্তি পরাজিত হয় বলে একে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী যুদ্ধ বলা হয়।

খানুয়ার যুদ্ধের বর্ণনা

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা কর | খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল বর্ণনা কর। ” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (40 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x