দাস বংশের সংজ্ঞাটা কি যৌক্তিক? | দাস বংশের সংজ্ঞার যৌক্তিকতা লিখ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাসে দাস বংশের সংজ্ঞা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
উত্তর : ভূমিকা : সুলতান মুহাম্মদ ঘুরী নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর কুতুবউদ্দিন আইবেক “সুলতান” উপাধি ধারণ করে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সুতরাং ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভ থেকেই দিল্লির সুলতানি ইতিহাস শুরু হয়। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক সিংহাসনে আরোহণ করার পর থেকে কায়কোবাদ-এর শাসন পর্যন্ত (১২০৬–১২৯০) সময়কালকে মামলুক বা দাস বংশের শাসন কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
দাসবংশের সংজ্ঞার যৌক্তিকতা : ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক হতে কায়কোবাদ পর্যন্ত সুলতানগণ সাধারণত দাসবংশ নামে ইতিহাসে অভিহিত হয়ে আছেন।
প্রকৃতপক্ষে এই দাসবংশ নামকরণ ইতিহাসে প্রচলিত হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নাই বলে আধুনিক ঐতিহাসিকগণ মতপোষণ করেন ।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, প্রাথমিক আমলে তুর্কি সুলতানগণ ক্রীতদাস হিসেবে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন নাই।
কারণ যে সকল ক্রীতদাস সিংহাসনে অভিষিক্ত হয়েছিলেন তারা সিংহাসন লাভের পূর্বেই প্রত্যেকে উচ্চ রাজকর্মচারী পদে নিযুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে তারা প্রত্যেকেই পূর্ববর্তী সুলতানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন।
প্রথম জীবনে ক্রীতদাস থাকলেও তারা উচ্চরাজকর্মচারীর সম্মান লাভ করায় এবং সুলতানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ায় তাদের দাসত্বের অবসান ঘটেছিল। প্রভু কর্তৃক দাসত্ব বন্ধন হতে মুক্তি পেলে আর কেউ দাস পর্যায়ভুক্ত থাকে না।
কুতুবউদ্দিন আইবেক, ইলতুৎমিশ ও গিয়াসউদ্দিন বলবন প্রত্যেকেই প্রভুদিগের হতে মুক্তি লাভ করে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
এছাড়া জন্মের দিক দিয়ে বিচার করলে তাদের প্রায় সকলেই অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন। সুতরাং দাসবংশ নামকরণ ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করলেও ইহা আদৌ যুক্তিসংগত নয়।
প্রাথমিক আমলে দিল্লির তুর্কি সুলতানদের ইতিহাস হতে প্রমাণিত হয় যে, আজ যে ক্রীতদাস আগামীকাল তিনি সিংহাসনে সুলতান হিসেবে আরোহণ করতে পারেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় মুসলমানদের ইতিহাসে দাসবংশের সংজ্ঞা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
কেননা সুলতানগণ সিংহাসনে আরোহণের পূর্বে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে উচ্চ রাজকর্মচারী হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং সুলতানের সাথে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল।
এমনকি তাদের জন্মের দিক দিয়ে বিবেচনা করলেও তারা অভিজাত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাই দাসবংশ নামকরণ কোনোভাবেই যৌক্তিযুক্ত নয় ।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “দাস বংশের সংজ্ঞাটা কি যৌক্তিক? | দাস বংশের সংজ্ঞার যৌক্তিকতা লিখ” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।