দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা কি | দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুবিধা
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা কাকে বলে? দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষের যুক্তিগুলো উপস্থাপন কর।
অথবা, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বুঝ? দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তিগুলো উল্লেখ কর।
সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইন বিভাগ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইনবিভাগ আবার গঠন অনুসারে দুভাগে বিভক্ত। যথা :
(ক) এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা _ ও
(খ) দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বিদ্যমান থাকায় দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইন গ্রহণ করছে।
এছাড়া দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুবিধা থাকায় অনেক রাষ্ট্র দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন করছে। যথা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ইত্যাদি ।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা : গঠন অনুসারে আইনসভা দু- প্রকার। তারমধ্যে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অন্যতম। বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্র দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
যে আইনসভা দুটি কক্ষ বা পরিষদ নিয়ে গঠিত তাকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বলে । বর্তমান বিশ্বে অনেক রাষ্ট্রেই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান দুটি কক্ষ হলো
(ক) নিম্নকক্ষ (Lower House) ও
(খ) উচ্চকক্ষ (Upper House)।
(ক) নিম্নকক্ষ : আইনসভার নিম্নকক্ষ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিরা জনগণের সরাসরি প্রত্যক্ষ | ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়।
(খ) উচ্চকক্ষ : উচ্চকক্ষ হলো এমনই এক ধরনের কক্ষ যেখানে সদস্যগণ সাধারণত উত্তরাধিকার বিধান ও মনোন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি : দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন-JS. Mill, Lord Bryce, লর্ড Acton, Henry Maien প্রমুখ। নিচে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি দেওয়া হলো:
১. জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আকস্মিকভাবে আইন প্রণয়ন হয়। তবে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় কোনো আইন পাস হতে হলে তা দুই কক্ষে আলোচনা ও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে করা হয়। তাই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হয়ে থাকে।
২. পুনর্বিবেচনার সুযোগ : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় একটিমারা পরিষদ থাকায় পুনঃবিবেচনার কোনো সুযোগ থাকে না কিন্তু দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পুনঃবিবেচনার সুযোগ থেকে যায়। তাই বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়।
৩. ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা : বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষপাতিগণ মনে করে বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে উচ্চ কক্ষ নিম্ন পরিষদের অত্যাচার হতে জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করে থাকে।
৪. স্বেচ্ছাচার রোধ : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় একটি পরিষদ থাকায় তারা যা ইচ্ছা তাই করে। কিন্তু বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় উচ্চকক্ষ বা নিম্নকক্ষ কেউ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাতে স্বেচ্ছাচারিতা রোধ হয়।
৫. সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত হওয়ায় তা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। উচ্চকক্ষ গঠিত হয়, বিভিন্ন সম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এতে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৬. সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন : দ্বি-কক্ষ আইনসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় না। এখানে পুনঃবিবেচনার মাধ্যমে সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন হয়ে থাকে।
৭. জনমত গঠন : এখানে দুই কক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এককক্ষ আইনসভার মতো স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ফলে জনমত গঠন করার সুযোগ থেকে যায়।
৮. জ্ঞানী ও গুণীদের কদর : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় জ্ঞানী ও গুণীদের কদর প্রতিনিয়ত হয় না। কিন্তু দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় উচ্চ কক্ষ গঠিত হয় বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিদের দ্বারা। এতে জ্ঞানী ও গুণীদের সমানর ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়।
৯. রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তার : ধি-রুক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখে। কেননা নিম্ন কক্ষে কোনো বিল উত্থাপন হলে তা উচ্চ কক্ষে পাঠানো হয়।
এতে বিশ্লেষণের সুযোগ থাকে। জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য রেডিও, টেলিভিশনে ও সংবাদ পত্রের মাধ্যমে জনগণের মতামত জানাতে ও বুঝতে পারা যায়।
১০. ভুলত্রুটি সংশোধন : দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় ভুলত্রুটি কম হয়। কারণ নিম্নকক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা উচ্চ কক্ষে প্রেরিত হয় ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে ত্রুটিসমূহ দূর করার সুযোগ থাকে। তাই এই আইনসভায় ভুলত্রুটি সংশোধনের সুযোগ থেকে যায় ।
১১. শাসন বিভাগের নিরাপত্তা : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা শাসন বিভাগকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত, করতো। কিন্তু দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় কোনো ভাবেই নিম্ন কক্ষ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ নিম্নকক্ষ শাসন বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে উচ্চকক্ষ শাসন বিভাগ নিরাপত্তা প্রদানে নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।
১২. হঠকারিতা রোধ : এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় যেমন ত্রুটি ও সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থে হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, কিন্তু দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় নিম্নকক্ষ কখনই হটকারি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কারণ উচ্চ কক্ষ সে সকল বিল আবার বিশ্লেষণ করে থাকে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার চেয়ে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অধিক গ্রহণযোগ্য ।
এছাড়া এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার চেয়ে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে। তাই আইনসভার দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা শাসনব্যবস্থায় অধিক গ্রহণযোগ্য ।.
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা কি | দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার সুবিধা” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।