শেরশাহ কে ছিলেন । শেরশাহের পরিচয় দাও
ভারতবর্ষে শাসকদের ইতিহাসে শেরশাহ এক অনন্য নাম। তিনি ভারতবর্ষের মুঘল সম্রাট হুমায়ূনকে পর পর দুইবার দুটি যুদ্ধে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন।
পরবর্তীতে তিনি প্রচলিত শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করেন এবং ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেন। তবে শেরশাহের বাল্যকাল খুব একটা সুখকর ছিল না।
শেরশাহের পরিচয় : শেরশাহের বাল্যকাল ছিল দুঃখ কষ্টে ভরা। তিনি বাল্যকাল থেকেই প্রতিকূল পরিবেশে বড় হন।
নিম্নে শেরশাহের পরিচয় আলোচনা করা হলো :
১. জন্ম : শেরশাহের বাল্যকালীন নাম হচ্ছে ফরিদ। তার জন্ম তারিখ সম্বন্ধে সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও আধুনিক ঐতিহাসিকরা মনে করেন তিনি ১৪৮৫ সালে পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসান শুর এবং তার মাতা ছিলেন হাসান শূরের প্রথম স্ত্রী ।
২. বংশ পরিচয় : শেরশাহের বা ফরিদ ছিলেন আফগান জাতির শুর উপদলভুক্ত। ফরিদের পিতামহ ইব্রাহীম ও পিতা হাসান সুলতান বাহলুল লোদীর রাজত্বের বা প্রওয়াবী প্রারম্ভে মহব্বত খান ও দাউদ খান নামক পাঞ্জাবের দুইজন জায়গিরদারের অধীনে কাজ করেন।
এসময় হাসান পরগনায় বাসবাস করেন। কিছুদিন পর জৌনপুরের শাসনকর্তা ওমরখান সারওয়ারি খান-ই-আজম কর্তৃক সাসারামের জায়গীর লাভ করেন। এবং ফরিদসহ সপরিবারে সেখানে চলে আসেন।
৩. পিতৃনিবাস ত্যাগ : শেরশাহের পিতা হাসান শূরের চারজন স্ত্রী ছিল। যার মধ্যে শেরশাহ ছিলেন প্রথম স্ত্রীর সন্তান। শেরশাহের পিতা হাসান শূরের ছোট স্ত্রীর প্রতি দুর্বলতা থাকায় শেরশাহ ছোটবেলাতেই পিতৃ স্নেহ থেকে বঞ্চিত হন।
শেরশাহের বিমাতা অল্পদিনের মধ্যে শেরশাহের সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করেন এবং তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেন। এক সময় অতিষ্ট হয়ে শেরশাহ পিতৃগৃহ ত্যাগ করে এবং জৌনপুরের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
৪. পাণ্ডিত্য অর্জন : শেরশাহ যে সময়ে জৌনপুর যান সে সময়ে জৌনপুর ছিল শিক্ষা ও সাহিত্যের কেন্দ্রস্থল। শেরশাহ জৌনপুরে গিয়ে আরবি ও ফারসি ভাষা শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন।
এসময় আরবি, ফারসি ও অন্যান্য বিষয়ে অসামান্য পাণ্ডিত্য লাভ করেন। শেরশাহের স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত গভীর ছিল। তিনি গুলিস্তান, বোস্তান ও সিকান্দারনামা প্রভৃতি গ্রন্থ মুখস্ত করে খ্যাতি অর্জন করেন।
৫. জায়গীরদারের দায়িত্ব পালন : শেরশাহের মেধা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও চারিত্রিক দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়ে জৌনপুরের শাসনকর্তা তার পিতাকে শেরশাহের প্রতি সদয় ব্যবহার করার নির্দেশ দেন।
এ সময় হাসান শুর তার ভুল বুঝতে পারেন। হাসান শুর শেরশাহকে সাসারামে ফিরিয়ে আনেন এবং তাকে জায়গিরদারের দায়িত্ব দেন।
শেরশাহ এ সময় প্রায় ৫ বছর জায়গীরদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাসারামে জায়গীরদার হিসেবে দায়িত্বপালনের মধ্যদিয়েই শেরশাহের শাসক জীবন শুরু হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শেরশাহের ছোটবেলা খুব একটা সুখের ছিল না। তবে তিনি অনেক পরিশ্রম ও কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে সম্রাট হুমায়ূনের সাথে জয়ী হয়ে শুর বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। বাল্যকালের দিক থেকে তাই ঐতিহাসিকরা শেরশাহের মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের সাথে তুলনা করেন।
শেরশাহ সর্ম্পকে আরো পড়ুন শেরশাহ কিভাবে শুর বংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “শেরশাহ কে ছিলেন । শেরশাহের পরিচয় দাও” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।