মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলা হয় কেন?
মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউজ বা বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায় যে, শক্তি উৎপাদনের সকল কাজ মাইটোকন্ড্রিয়াতে ঘটে বলে, একে কোষের পাওয়ার বলে।
ইউক্যারোওটিক কোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়ানো দিস্তরী পর্দাবেষ্টিত গোলাকার, ডিম্বাকার, দন্ডাকার, সূত্রাকার বা তারকাকৃতি যেসব অঙ্গাণু কোষের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন হয়, তাদের মাইটোকন্ডিয়া বলে । এ অঙ্গাণুতে ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম প্রভৃতি ঘটে থাকে । এটি কোষের যাবতীয় জৈবিক কাজ সম্পাদনের প্রয়োজনীয় শক্তির একমাত্র উৎস, এজন্য মাইটোকন্ডিয়াকে কোষের শক্তিঘর বা পাওয়ার হাউস বলা হয় ।
মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার কারনগুলো হল-
i.মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের সমস্ত কাজের জন্য শক্তি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ করে।
ii.মাইটোকন্ড্রিয়া শ্বসনের জন্যে প্রয়োজনীয় এনজাইম,
কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারন করে।
iii. মাইটোকন্ড্রিয়া শ্বসনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন- ক্রেবস চক্র, ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট,
অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন সম্পন্ন করে।
iv.নিজস্ব DNA ও RNA তৈরী করে।
v.স্নেহ বিপাকে সাহায্য করে।
মাইটোকন্ড্রিয়ায় ক্রেবস চক্র, ফ্যাটি এসিড চক্র, ইলেক্ট্রন ট্ররান্সপোর্ট প্রক্রিয়া প্রভৃতি ঘটে থাকে এবং শক্তি উৎপন্ন হয়। মাইটকন্ড্রিয়া শ্বসনের প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম প্রভৃতি ধারণ করে (মাইটকন্ড্রিয়ায় প্রায় ১০০ রকমের এনজাইম ও কো-এনজাইম রয়েছে) । স্নেহ বিপাকেও সাহায্য করে।
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ জটিল জৈবযৌগ জারিত হয়, ফলে জৈবজৌগে সঞ্চিত স্থিতিশক্তি রূপান্তরিত হয়ে রাসায়নিক গতিশক্তিতে পরিণত হয়, তাকে শ্বসন বলে। অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে শ্বসন প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
১। সবাত শ্বসনঃ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন হয় এবং শ্বসনিক বস্তু সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড, পানি ও বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে সবাত শ্বসন বলে।
২। অবাত শ্বসনঃ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় মুক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন হয় না তাকে অবাত শ্বসন বলে।
সবাত শ্বসন প্রক্রিয়াকে তিন পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথাঃ ১) গ্লাইক্লোলাইসিস, ২) ক্রেবস চক্র এবং ৩) ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম ।
গ্লাইকোলাইসিস সবাত ও অবাত উভয় প্রকার শ্বসনেরই প্রথম পর্যায় । গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
বাকি দুইটি পর্যায় ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম মাইটোকন্ড্রিয়ায় ঘটে । মাইটোকন্ড্রিয়ায় শ্বসনের বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় সম্পন্ন হয় বলে মাইটোকন্ডিয়াকে কোষের শক্তিঘর বলা হয়।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউজ বলা হয় কেন?” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।