বংশগতি নিয়ন্ত্রনে ক্রোমোসোম, DNA, RNA এর ভুমিকা।

আমরা সবাই জানি যে, মাতা-পিতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে তাদের সন্তান-সন্ততিতে স্থানান্তরিত হওয়াকে বলে বংশগতি। বংশগতির ভিত্তি হল বংশগতি বস্তু অর্থাৎ
ক্রোমোসোম,  DNA, RNA ইত্যাদি। কাজেই বংশগতি নির্নয়ে এরা সরাসরি ভুমিকা পালন করে।

ক্রোমোসোমের ভুমিকাঃ
বংশগতিবিদ্যার জনক গ্রেগর জোহান মেন্ডেল ১৮৬৫ সালে যখন বংশগতি সমন্ধে ব্যাখ্যা প্রদান করেন তখনও ক্রোমোসোম সমন্ধে বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল না। তিনি বলেন যে, প্রতিটি বৈশিষ্ট্যেরর জন্য বিশেষ কনা বা particle আছে যা মাতা-পিতা হতে সন্তানে স্থানান্তরিত হয়। মাতা-পিতায় প্রতিটি বৈশিষ্ট্যএর দুটি করে কণা থাকে। মাতা-পিতা হতে সৃষ্ট গ্যামেটে কণা থাকে একটি করে যা দুটি গ্যামিটের মিলনের মাধ্যমে পুনরায় দুটিতে পরিনত হয়। পরে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে নিউক্লিয়াসে ক্রোমোসোম আবিস্কার হয় এবং এরপর আবিস্কার হয় মাইটোসিস কোষ বিভাজন ১৮৮২ সালে। এতে দেখা যায়- নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিওলাস ইত্যাদি এসব বস্তুর বিলুপ্তি ঘটলেও ক্রোমোসোমের বিলুপ্তি ঘটে না, বরং বিভাজনের আগে এবং পরে এদের সংখ্যা সমান থাকে। এ থেকে ধারনা করা হল কনাগুলো সম্ভবত ক্রোমোসোমের মাধ্যমে পিতা-মাতা থেকে সন্তানে সঞ্চারিত হয়। এর কিছুকাল পর (স্ট্রাসবারগার, ১৮৮৩) আবিস্কৃত হল জনন কোষে মিয়োসিস কোষ বিভাজন। এতে দেখা গেল – ডিপ্লয়েড জীবে দুটি সমসংস্থ ক্রোমোসোমের যে কোন একটি, গ্যামিটে স্থান পায় এবং দুটি গ্যামিটের মিলনের ফলে জাইগোটে পুনরায় সমসংস্থ ক্রোমোসোমের সমাবেশ ঘটে। এ থেকে প্রমানিত হয়, মেন্ডেলের কনাগুলো (মর্গান যাকে factor এবং যোহানসেন পরে যাকে “জিন” হিসেবে অভিহিত করেন) ক্রোমোসোমেই অবস্থিত।

কাজেই ক্রোমোসোমেরর কাজ হল- মাতা-পিতা থেকে বিশেষ কণা বা জিন সন্তান-সন্ততিতে বহন করে নিয়ে যাওয়া। ক্রোমোসোম হল বংশগতির ভৌত ভিত্তি।

DNA- এর ভুমিকাঃ
এখন সর্বজন স্বীকৃত যে, ক্রোমোসোমে অবস্থিত জিনই জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে যে, DNA -এর অংশবিশেষই জিন হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ  DNA ই জিন। DNA, ক্রোমোসোমের একমাত্র স্থায়ী রাসায়নিক পদার্থ। কাজেই কেবলমাত্র DNA ই বংশগতির বস্তু বা বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি। DNA ই সরাসরি মাতা-পিতা হতে বৈশিষ্ট্য তার সন্তান-সন্ততিতে নিয়ে যায়।

RNA এর ভুমিকাঃ
কিছুসংখ্যক ভাইরাসের ক্ষেত্রে (যেমন- TMV ভাইরাস) DNA অনুপস্থিত, কিন্তু এর পরিবর্তে থাকে RNA। এসব ক্ষেত্রে RNA ই বংশগতির রাসায়নিক বস্তু হিসেবে কাজ করে। RNA ও এনজাইম জিন কর্তৃক তৈরী হয়। এরা জীবের অধিকাংশ কাজই নিয়ন্ত্রন করে।

 

শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “বংশগতি নিয়ন্ত্রনে ক্রোমোসোম, DNA, RNA এর ভুমিকা।” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।

5/5 - (36 votes)

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.