বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে চাকরি শুরু করার স্বপ্ন যাঁদের, তাঁরা নিশ্চয় ইতিমধ্যে আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। লক্ষাধিক আবেদনকারীকে টপকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পড়াশোনা, পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি। এ জন্য নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে এখন থেকেই যথাযথ প্রস্তুতির বিকল্প নেই। আমি বিশ্বাস করি, বেশির ভাগ চাকরিপ্রত্যাশী কমবেশি পড়াশোনা করেছেন। কিছু বিষয়ে বাড়তি নজর দিয়ে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সময় কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হওয়া আপনার জন্য সময়ের ব্যাপারমাত্র।

এই কাঙ্ক্ষিত পদে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য তিন ধাপের ৩০০ + ২৫ নম্বরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ এমসিকিউ পদ্ধতির প্রিলিমিনারি বা প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা। চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এটি টিকে থাকার লড়াই। তাই স্কোর যা-ই তুলতে পারেন না কেন, টিকে থাকলেই চলবে। ক্রিকেটে ব্যাট হাতে সব বল খেলার মতো সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে। কারও পক্ষেই সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনও নেই। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ৬০ মিনিট সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটির জন্য গড়ে ৩৩ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা হবে ০.২৫ নম্বর। স্বাভাবিকভাবেই মনস্তাত্ত্বিক চাপ থাকবে। তাই এই অংশে ভালো করার জন্য সময়, সতর্কতা, তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা, মনোযোগ ও মনোবল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথোপযুক্ত প্রশ্ন বাছাই করে উত্তর দিতে পারা একধরনের বাড়তি দক্ষতা। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে হাতে যতটুকু সময় পান প্রতিদিন অনুশীলন করুন। সাফল্য আসবেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় সাধারণত বাংলায় ২০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ৩০, সাধারণ জ্ঞান থেকে ২০ এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি অংশে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। বাংলার ক্ষেত্রে সাহিত্য ও ব্যাকরণ থেকে সমানসংখ্যক প্রশ্ন হতে পারে, তবে ইংরেজিতে সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দসহ অ্যানালজি, বাক্যে ভুল নির্ণয়, বাক্য সম্পূর্ণকরণ ক্রিয়ার ব্যবহারসংক্রান্ত বেশি প্রশ্ন দেখা যায়। বাংলায় প্রশ্নের ক্ষেত্রে সমসাময়িক সাহিত্যকর্মের প্রাধান্য থাকে। এ ছাড়া শুদ্ধীকরণ, প্রবাদ প্রবচন, বাগধারা, সন্ধি, সমাস, প্রকৃতি ও প্রত্যয় ও এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন হয়। এ অংশে পড়াশোনার জন্য নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইটিসহ প্রচলিত ভালো মানের গাইড বই রাখতে পারেন। তবে আনুপাতিকভাবে গণিতে নম্বর বেশি এবং পরীক্ষায় উত্তর করতেও বেশি সময় লাগে বলে অনুশীলন বাড়াতে হবে।

ক্যালকুলেটর ছাড়াই বিভিন্ন বই থেকে ইংরেজিতে অঙ্ক করার অভ্যাস করুন। ভয় কেটে যাবে। মনোবল বৃদ্ধি পাবে। কম্পিউটার ও প্রযুক্তি নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। এ অংশ থেকে ১০টি প্রশ্ন থাকে। সিলেবাস সীমিত তাই নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে এ অংশে পূর্ণ নম্বর পেতে পারেন।
কম্পিউটার প্রযুক্তির জন্য নবম-দশম বা উচ্চমাধ্যমিকের কম্পিউটার বইসহ বাজারের যেকোনো গাইড বই আদ্যোপান্ত ভালোভাবে পড়ে ফেলুন। পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকার টেক বা প্রযুক্তি পাতা নিয়মিত পড়ার অভ্যাস করলে কাজে আসবে।

পত্রিকায় প্রতিদিন সমসাময়িক নানা ঘটনার বিবরণ-বিশ্লেষণ পড়লেই সাধারণ জ্ঞান অংশের প্রস্তুতি অনেকখানি হয়ে যাবে। বাকিটা যেকোনো বই থেকে পড়লেই প্রিলিমিনারির জন্য চলবে।
প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার বৈতরণি পার হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা। দুই ঘণ্টার ২০০ নম্বরের এই পরীক্ষার ওপরই অনেকটা নির্ভর করে চূড়ান্ত নিয়োগের সম্ভাবনা। যেহেতু প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার নম্বর যোগ হবে না এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর তুলনামূলক কম, তাই লিখিত অংশে ভালো করার বিকল্প নেই। ভালো করতে চাওয়া মানে বাড়তি চাপ নেওয়া নয়।

যেহেতু সবচেয়ে কঠিন এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ ধাপ পেরিয়ে এসেছেন, তার মানে আপনার প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো। প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয় আপনার দখলে। লিখিত পরীক্ষায় সেগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরাই আপনার কাজ। তা ছাড়া লিখিত পরীক্ষার জন্য যে কয়েক মাস সময় পাবেন তা কীভাবে কাজে লাগাবেন সে পরিকল্পনা করে ফেলুন এখনই। এ জন্য প্রয়োজনীয় রসদ জোগাড় করতে থাকুন।

বিশেষ করে বাংলা ও ইংরেজিতে ফোকাল রাইটিং (নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্ধারিত জায়গার সংক্ষিপ্ত রচনা) ক্রিয়েটিভ রাইটিং, বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ অনুশীলন করতে পারেন। এগুলো প্রিলিমিনারি ও লিখিত, উভয় অংশে কাজে লাগবে। যেমন বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, কয়েক বছরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি(জিডিপি), রপ্তানি বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিস্থিতি, ব্যাংকিং বিকাশ ও আর্থিক সমসাময়িক বিষয়গুলো সূত্রসহ ছক আকারে কয়েক পৃষ্ঠার মধ্যে লিখে রাখতে পারেন। বাংলা কিংবা ইংরেজি যে মাধ্যমই হোক, লিখতে গেলে এ তথ্যগুলো কাজে আসবে।

পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা বিশিষ্ট ব্যক্তির পর্যবেক্ষণনির্ভর মন্তব্য বা উক্তিও আরেক পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে রাখলে লেখার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম, অর্থ ও বাণিজ্য পাতা, বিজ্ঞান ও সাহিত্য সাময়িকী নিয়মিত পড়লে ভালো লেখার পাশাপাশি অনুবাদ-দক্ষতা বাড়ে। এখন থেকে আপনার ধারাবাহিক পড়াশোনা নিয়োগের সর্বশেষ ধাপ মৌখিক পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল দেবে, এগিয়ে রাখবে সাফল্যের দৌড়ে।
লেখক: বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক
– ধন্যবাদ

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top