Modal Ad Example
বিজ্ঞান

মঙ্গল গ্রহ লাল হওয়ার কারন কি?

1 min read

ঊর্ধ্ব গগনে মাথা তুলে তাকালে মঙ্গলকে লাল দেখায় বলেই গ্রহটির নাম হয়েছে লাল গ্রহ। রংটা অবশ্য ঠিক লাল না, লালের সঙ্গে কমলা মেলালে যা হয়, অনেকটা তেমন। এমন রঙের জন্যই প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা যুদ্ধের দেবতার সঙ্গে মিলিয়ে গ্রহটির নাম রেখেছিল ‘মার্স’। তবে মঙ্গলের বুকে এখন চরে বেড়াচ্ছে পাঁচ-পাঁচটি রোবটযান। কেবল রূপকথার গল্প বলে কি আর মানুষ ভোলানো যাবে?

মঙ্গলের লালাভ হওয়ার পেছনে মূল কারণ এর পৃষ্ঠে প্রচুর আয়রন অক্সাইড আছে। এই যৌগের জন্যই রক্ত এবং মরিচা লাল দেখায়। অবশ্য মঙ্গলের পাথুরে পৃষ্ঠের ওই আবরণকেও মরিচা বলা চলে। তবে প্রশ্ন হলো, মঙ্গলে এত লোহা এল কোত্থেকে?

শুরুটা প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে। সৌরজগৎ গঠনের সময়েই অনেক গ্রহ লোহায় সমৃদ্ধ হয়েছে। আর লোহার গঠন হয়েছে মৃত নক্ষত্রগুলোর বুকে। এরপর গ্যাস ও ধুলার মেঘের সঙ্গে ঘূর্ণিপাক খেতে খেতে একসময় মহাকর্ষজ বলের প্রভাবে সূর্য এবং গ্রহগুলো গঠনে সাহায্য করে। আমাদের পৃথিবীর ক্ষেত্রে লোহাগুলো জমা হয়েছে এর কেন্দ্রে। নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলের কেন্দ্রেও লোহা আছে, তবে পরিমাণে অঢেল হওয়ায় গ্রহটির পৃষ্ঠেও লোহার একটি আবরণ তৈরি হয়েছে। সে কারণেই লাল দেখায়।

মঙ্গল গ্রহ কি মানুষের জন্য বসাবসযোগ্য?

সূর্য থেকে চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল। বুধ, শুক্র ও পৃথিবীর পর এর অবস্থান। গড়ে ২২ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরে সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। গড় তাপমাত্রা শূন্যের ৬৩ ডিগ্রি নিচে, অ্যান্টার্কটিকার শীতের মতো। সেখানে রাতগুলো আরও শীতল।

মঙ্গলে মানুষ পৌঁছালে আরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। সেখানে বাতাস পৃথিবীর তুলনায় ১০০ গুণ বেশি পাতলা, আর কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ বেশি। অক্সিজেন মাস্ক আর বিশেষ পোশাক না পরলে মঙ্গলপৃষ্ঠে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব না।

 

মঙ্গল গ্রহ নিয়ে নানা সভ্যতায় মানুষের ভাবনা

অতীতে অনেক সভ্যতায় মঙ্গলের লাল রংকে খারাপ বা অশুভ মনে করা হতো। শুরুতে প্রাচীন গ্রিক আর রোমানদের কথা বলেছিলাম। যুদ্ধের দেবতার সঙ্গে মিলিয়ে মঙ্গলের নাম তারা রেখেছিল মার্স। প্রাচীন মিসরীয়রাও গ্রহটির লাল রং নিয়ে আলোচনা করত। অনেকে ভাবত, গ্রহ ও নক্ষত্র তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। সে কারণেই দেবতাদের নাম অনুসারে গ্রহ ও নক্ষত্রের নাম রাখত তারা। সে সময় মঙ্গলের লালাভ রং দেখে তারা ভেবেছিল, এটা নিশ্চয় কোনো সহিংস দেবতা। ভাবত, আকাশে অন্য কোনো গ্রহ তো অমন দেখায় না। আর সে কারণেই গ্রহটির সম্ভাব্য শক্তির ভয় নিয়ে শঙ্কিত থাকত।

মঙ্গল গ্রহ তে নাসার পারসেভারেন্স রোভার

সে শঙ্কা নিশ্চয় এত দিনে আর নেই। বিজ্ঞান এগিয়েছে। মঙ্গল সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি বেড়েছে। এই তো, গেল মাসে নাসার পারসিভারেন্স রোভার পৌঁছেছে মঙ্গলের বুকে। আর ইলন মাস্কের স্বপ্ন সত্যি হলে, একদিন আমরাও হয়তো বীরদর্পে হেঁটে বেড়াব মঙ্গলপৃষ্ঠে।

 

মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য

মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা

যেহেতু মঙ্গল সূর্য থেকে একটু দূরে, তাই এখানে ঠান্ডার আধিক্যই বেশি। মঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দুপুরে ২০ডিগ্রী, আর রাতে -৬৩ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করে।

অর্থাৎ এখানে কেবল দুপুরেই কিছুক্ষণের জন্য জীবন ধারনের অনুকূল তাপমাত্রা পাওয়া যায়। আর রাতের কথা নাই বললাম।

 

মঙ্গল গ্রহের এর বিষাক্ততা

মঙ্গলে পৃষ্ঠ মারাত্নকভাবে টক্সিক! এর পৃষ্ঠে ক্লোরিনের মত ভয়াবহ ফেরোসালফেট যৌগ বিদ্যমান; যার মাত্র ১গ্রাম, আপনার উপরে পাঠিয়ে দিতে যথেষ্ট।

 

মঙ্গল গ্রহতে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড

মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের প্রায় ৯৫% কার্বন-ডাই অক্সাইড। সাথে আছে সামান্য পরিমান নাইট্রোজেন ও আর্গন। অক্সিজেন ছাড়া মঙ্গলে নামা, অন্তত এখনো পর্যন্ত অকল্পনীয় ব্যাপার।

 

মঙ্গল গ্রহতে দূর্বল চৌম্বকক্ষেত্র ও বায়ুমন্ডল

পৃথিবীর কেন্দ্রে বিভিন্ন পদার্থের একটি গলিত মজ্জা, বা কোর আছে, যার কারনে পৃথিবীর চারপাশে একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বিদ্যমান। এই চৌম্বক ক্ষেত্র সূর্য ও সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি ও বিকিরণ প্রতিহত করে। অবশ্যই এসব রশ্মি জীবকূলের জন্য ক্ষতিকর।

কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা, গঠনগত কারনে মঙ্গল ধীরে ধীরে তার চৌম্বক ক্ষেত্র হারিয়েছে। আর মঙ্গলের বায়ুমন্ডলও পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তুলনায় প্রায় ১০০গুন পাতলা। এই পাতলা-ভারীকে বুঝতে অসুবিধা হলে কাগজের সাথে তুলনা করতে পারেন। ১০০টা কাগজের পৃষ্ঠা একটার উপর একটা রাখলে যেমন হয়, কেবল ১টা পৃষ্ঠা তার থেকে অবশ্যই ১০০গুন কম/পাতলা হবে, তাই না?

এখানে কেবল ঐ ১টা পৃষ্ঠা হল মঙ্গলের বায়ুমন্ডল। মঙ্গলে জীবন ধারণের আরেকটি বড় বাধা – এই বায়ুমন্ডল।

5/5 - (7 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x