যে নারী দেরীতে বিয়ে হওয়ার ভয় করছে এবং যখনই তার কোন বান্ধবীর বিয়ে হয় তখনই সে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে

যে নারী দেরীতে বিয়ে হওয়ার ভয় করছে এবং যখনই তার কোন বান্ধবীর বিয়ে হয় তখনই সে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে

প্রশ্ন:

আমি সবসময় দেখি যে, আমার বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কারো কারো এনগেজমেন্ট হচ্ছে। এতে আমি বিষণ্ণ হই এবং অনুভব করি যে, আমার বিয়ে হতে দেরী হবে। যেহেতু আমাকে কেউ দেখে না। আমি থাকি ঘরের ভেতরে। তাই আমার মনে হয় যে, কখনও আমার বিয়ে হবে না। কিভাবে আমার জন্য ছেলে আসবে; আমি তো ঘরের ভেতরে। ঘর থেকে বের হই না। আমাকে কেউ দেখে না এবং আমি চাকুরীও করি না। আমি যদি ছেলেদের সাথে সম্পর্ক না রাখি তাহলে ভবিষ্যতে যে ছেলে আমাকে বিয়ে করবে সে কোথা থেকে আসবে? এ বিষয়ে আপনারা আমাকে কী উপদেশ দিবেন? এ ক্ষেত্রে কি কি সঠিক পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত? সর্বদা আমার চিন্তা হচ্ছে: বিয়ের আগে ছেলেটিকে ভালভাবে জানা উচিত এবং তাকে জানার জন্য কিছুদিন তার সাথে কথাবার্তা বলা উচিত; যাতে করে পরবর্তীতে সে খারাপ বা এ ধরণের কিছু না পড়ে। এ দৃষ্টিভঙ্গি কি সঠিক? নাকি সরাসরি বিয়ে করতে হবে?

উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

যদি একজন মুসলিম এ আয়াতে কারীমাটি একটু ভেবে দেখে: “দুনিয়ার জীবনে আমিই তো তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং মর্যাদায় তাদের কাউকে কাউকে অন্যদের ওপরে উঠাই।”[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৩২] তাহলে জানতে পারবে যে, মানুষ ধনী হওয়া ও গরীব হওয়া, শক্তিশালী হওয়া ও দুর্বল হওয়া, সুস্থ হওয়া ও অসুস্থ হওয়া, বিবাহিত হওয়া ও অবিবাহিত থাকা, সন্তানধারী হওয়া ও নিঃসন্তান হওয়া… এ বণ্টন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে; মানুষের পক্ষ থেকে নয়— তখন তার অন্তর প্রশান্ত হবে। কাউকে আল্লাহ্‌ বিশেষ কোন নেয়ামত দিলে সে ব্যক্তির প্রতি তার অন্তরে হিংসা হবে না। তার মনে দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা আসবে না; এই ভেবে যে, অমুকে এ নেয়ামত পেল সে পেল না কেন। কারণ সে জানে যে, সবকিছু আল্লাহ্‌র নির্দেশে ও তাঁর ইচ্ছায় ঘটে। আল্লাহ্‌ যা চান তা ঘটে; তিনি যা চান না তা ঘটে না।

একজন মুসলিম যখন এ বিষয়টি জানবে তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে তার দুশ্চিন্তা আসবে না। বরং সে জানবে যে, তার দায়িত্ব হচ্ছে— আল্লাহ্‌র নির্দেশের ওপর অবিচল থাকা এবং তার গোটা জীবন আল্লাহ্‌র জন্য ও আল্লাহ্‌র আনুগত্যের সাথে যাপন করা। এরপর আল্লাহ্‌ যা খুশি তাকে রিযিক (জীবিকা) দান করবেন। অচিরেই আল্লাহ্‌ তার জন্য যে জীবিকা বণ্টন করেছেন সেটার ওপর তাকে সন্তুষ্টি ও পরিতুষ্টি দান করবেন।

মানুষের রিযিক নির্ধারিত। আল্লাহ্‌ তার জন্য যে রিযিক নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা কোন বৃদ্ধি বা ঘাটতি ছাড়া আসবেই আসবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোন আত্মা তার চূড়ান্ত রিযিক ও আয়ু ভোগ করা ছাড়া কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। সুতরাং আল্লাহ্‌কে ভয় করুন এবং রিযিক সন্ধানকে সুন্দর করুন।”[আলবানী ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা’ গ্রন্থে (৬/৮৬৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] অর্থাৎ মানুষের রিযিক আসবেই আসবে। মানুষের কর্তব্য হচ্ছে—আল্লাহ্‌কে ভয় করা এবং তাঁর নির্দেশের গণ্ডিতে অবিচল থাকা। আর সুন্দরভাবে রিযিক সন্ধান করা। অর্থাৎ সীমানার ভেতরে থেকে রিযিক সন্ধান করা। সুতরাং হারাম উপায়ে রিযিক তালাশ না করা। কারণ সে যত যা করুক না কেন আল্লাহ্‌ তার জন্য যতটুকু রিযিক লিখে রেখেছেন এর বেশি সে পাবে না।

সুতরাং আপনার বাসা থেকে বের হওয়া, ছেলেদের সাথে সম্পর্ক রাখা, ইত্যাদি ইত্যাদি… এগুলো কিছুই না। এগুলোও সব করলে আপনার বিয়ের রিযিক আসবে— তা নয়। “সুতরাং আল্লাহ্‌কে ভয় করুন এবং রিযিক সন্ধানকে সুন্দর করুন”। আপনি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। শয়তান আপনার অন্তরে দুশ্চিন্তা নিক্ষেপ করছে; যাতে করে আপনাকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে আল্লাহ্‌ আপনার কাছে কী চাচ্ছেন সেটা নিয়ে মশগুল থাকুন এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশের ওপর অবিচল থাকুন। অচিরেই আল্লাহ্‌ আপনার জন্য যে রিযিক নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা আসবেই আসবে; এর ব্যতিক্রম হবে না।

দুই:

জানাশুনার উদ্দেশ্যে বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে পাত্রের সাথে পরিচিত হওয়া ও তার সাথে কথাবার্তা বলা:

বাস্তবতা হচ্ছে—বিয়ের আগে পরিচিত হওয়ার মধ্যে কোন লাভ নেই। এ পরিচিতি সফল দাম্পত্য জীবনের কোন গ্যারান্টি দেয় না। আরও বেশি জানতে 84102 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন। সে প্রশ্নোত্তরে রয়েছে যে, পূর্ব পরিচিতি ও প্রেম-ভালবাসার কাহিনীর পর সংঘটিত অধিকাংশ বিবাহ ব্যর্থ হয় এবং সেগুলোর শেষ পরিণতি হয়— তালাক।

বরং এ পরিচিতি একজন মেয়ের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ছেলেটি মিথ্যাবাদী প্রতারক হতে পারে। তখন সে মেয়েটি থেকে তার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে নিবে। মেয়েটি সবকিছু হারাবে; কিছুই পাবে না। প্রত্যেক মেয়ে এ কথাই বলে: ‘আমি অন্যদের মত নই। আর যে ছেলেটিকে আমি ভালবাসি ও যার সাথে আমি ঘুরতে বের হই, সেও অন্য ছেলেদের মত নয়’। এই প্রতারণা দিয়ে শয়তান তাকে প্রতারিত করে। এক পর্যায়ে সে শয়তানের জালে পড়ে সবকিছু হারায়। পরিশেষে, মেয়েটির কাছে এটাই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার অবস্থাও অন্য মেয়েদের মত। আরও জানতে দেখুন: 84089 নং প্রশ্নোত্তর।

কোন ছেলেকে জানাশুনার জন্য এইটুকু যথেষ্ট যে— তার  দ্বীনদারি, তার আখলাক এবং যে পরিবারে সে বড় হয়েছে ও থেকেছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। কোন কোন সমাজে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামাজিক অবস্থান জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ; যেটাকে উপেক্ষা করা চলে না। এরপর কিছুদিন ‘খিতবা’ (প্রস্তাবনা)-র সময় অতিবাহিত হবে। এরপর বিয়ের আকদ হবে। জেনে রাখুন, স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃত জানাশুনা তারা উভয়ে ঘর সংসার শুরু করে একই ছাদের নীচে বাস করার আগে সম্ভবপর নয়। এর আগে প্রস্তাবনা-কালীন সময় কিংবা আকদ-কালীন সময়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভাল দিকটা প্রকাশ করে; খারাপ দিকটা করে না। প্রত্যেক পক্ষ বিপরীত পক্ষকে তুষ্ট করার জন্য কৃত্রিমতা অবলম্বন করে। সংসার শুরু হওয়ার পর আসল রূপ প্রকাশ হয়। তখন মানুষ কৃত্রিমতা বাদ দিয়ে তার স্বরূপ প্রকৃতিতে ফিরে আসে।

এ কারণে বিয়ের আগের সময়টা যত দীর্ঘই হোক না কেন এটি দাম্পত্য জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে জানার জন্য যথেষ্ট নয় এবং এ সময়ের চরিত্র আসল চরিত্র নয়।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনাকে সঠিক বুঝ দান করেন, আপনাকে তার পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির পথ ধরার তাওফীক দেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

 

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Similar Posts