পার্থিব উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা সংক্রান্ত নীতিমালা

প্রশ্ন

আমি কিভাবে বুঝতে পারব যে, আমি যথাযথ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করেছি; যার ফলে আমি অনুভব করব যে, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি; এবার আমি প্রশান্তচিত্তে আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করতে পারি। অন্য কথায়: উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি কি? উদাহরণতঃ কেউ কেউ বলেন: “তুমি তোমার সওয়ারীকে রশি দিয়ে বেঁধে আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল কর”। এখন ‘লোহার শিকল দিয়ে সওয়ারীকে বাঁধা’ উপকরণ গ্রহণ করার মধ্যে পড়বে? নাকি এটি উপকরণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি?

 

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) করার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার বিধান আল্লাহ্‌ই দিয়েছেন; সাথে এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে, ভাল-মন্দ আল্লাহ্‌র হাতে। উপকরণ ও ফলাফল উভয়ের স্রষ্টা আল্লাহ্‌।

উপকরণ ও ফলাফল একটির সাথে অপরটির যোগসূত্র থাকা আবশ্যক। অভিজ্ঞতা, অভ্যাস ও শরয়ি সংবাদ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ এ ব্যাপারটি জেনে থাকে। এছাড়া উপকরণটি অবশ্যই শরিয়ত অনুমোদিত হতে হবে। শরিয়ত অনুমোদিত ভাল কোন উদ্দেশ্য হাছিলের পন্থাও শরিয়ত অনুমোদিত হওয়া আবশ্যক।

বান্দা তার যে কোন বিষয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে: না সে উপকরণ গ্রহণকে একেবারে বাদ দিবে; আর না সে মনেপ্রাণে উপকরণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকবে। বরং প্রথাগতভাবে ও নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে মানুষ যেসব উপায়-উপকরণ গ্রহণ করে সেও সেসব উপায়-মাধ্যম গ্রহণ করবে। কিন্তু, উক্ত উপকরণের সাথে তার অন্তর সম্পৃক্ত হয়ে থাকবে না। বরং তার অন্তর সম্পৃক্ত থাকবে মহান সৃষ্টিকর্তা, রাজাধিরাজ ও সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকর্তার সাথে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন:

উপকরণের দিকে চেয়ে থাকা: মানুষের অন্তর উপকরণের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে থাকা, সে উপকরণের উপর আশা রাখা ও ভর করা। মাখলুকাতের মধ্যে এমন কোন মাখলুক নেই যে মাখলুক এগুলো পাওয়ার অধিকার রাখে। কারণ মাখলুক স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়। মাখলুকের সহকারী ও প্রতিপক্ষ থাকা অনিবার্য। এসব সত্ত্বেও যিনি সকল কারণের স্রষ্টা তিনি যদি সুগম করে না দেন তাহলে কোন কিছুই ঘটে না।”।[মাজমুউল ফাতাওয়া (৮/১৬৯)]

উপকরণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সূত্র হচ্ছে- প্রত্যেক বিষয়ের উপকরণ সেটার উপযোগী বিষয় দিয়ে হয়ে থাকে। যেমন- হালকা রোগ থেকে সতর্কতা গ্রহণ প্রক্রিয়া কঠিন রোগ থেকে সতর্কতা গ্রহণ প্রক্রিয়ার মত নয়; কোন মূল্যবান, দামী জিনিসের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া কমদামী ও সাধারণ জিনিসের সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার মত নয়।

জীবিকা সন্ধানের উপকরণ রোগ প্রতিরোধের উপকরণ থেকে ভিন্ন। পানাহারের উপকরণ সন্তান-প্রাপ্তি ও প্রতিপালনের উপকরণ থেকে ভিন্ন। এভাবে প্রত্যেক বিষয়ের উপকরণ ওটার সাথে যেমন উপযুক্ত তেমন হয়ে থাকে। আর উপকরণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কে অসচেতন ও অবহেলাকারী, আর কে সচেতন ও বুদ্ধিমান এটি নির্ণয়ের নীতি বিষয়ভেদে ও অবস্থাভেদে ভিন্ন। এ বিষয়গুলো মানুষ নিজের থেকে ও স্বাভাবিক অভ্যাস থেকে জানতে পারে।

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

Similar Posts