প্রশ্ন

ঈমান আনার কারণ ও না-আনার প্রতিবন্ধকতাগুলো কি কি?

 

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক: ঈমান আনার কারণসমূহ অনেক। যেমন-

১। ইলম অর্জন করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: কিন্তু তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানে মজবুত তারা ও মুমিনগণ আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার আগে যা নাযিল করা হয়েছে তাতে ঈমান আনে।”[সূরা নিসা, আয়াত: ১৬২]

২। সত্যকে গ্রহণ করা, অহংকার না করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “এটা আখেরাতের সে আবাস যা আমরা নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা যমীনে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ৮৩]

৩। আল্লাহ্‌ তাআলার সৃষ্টিগত নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে রাত ও দিনের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯০]

৪। মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের পরিণতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত।”[সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৪৬]

৫। আল্লাহ্‌র পাঠানো কিতাব ও তাঁর শরয়ি নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “এক মুবারক কিতাব, এটা আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা গ্রহণ করে উপদেশ।”[সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯]

৬। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ না করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “সুতরাং আপনি আহ্বান করুন এবং দৃঢ় থাকুন, যেভাবে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। আর আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না; এবং বলুন, আল্লাহ্‌ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তাতে ঈমান এনেছি।”[সূরা শুরা, আয়াত: ১৫]

৭। ঈমানদারদের সঙ্গ গ্রহণ এবং কাফের ও পাপীদের সঙ্গ ত্যাগ: আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজের দু’হাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোন পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।”[সূরা ফুরক্বান, আয়াত: ২৭-২৯]

৮। সুস্থ-সরল বিবেককে কাজে লাগানো। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম, তাহলে আমরা জলন্ত আগুনের অধিবাসী হতাম না।”[সূরা মুলক, আয়াত: ১০]

৯। ভাল কাজ পছন্দ করা এবং কুফুরি ও পাপ কাজকে ঘৃণা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “কিন্তু আল্লাহ্‌ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং সেটাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন। আর কুফুরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের কাছে অপ্রিয়।”[সূরা হুজুরাত, আয়াত: ৭]

১০। সব কারণের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আল্লাহ্‌ তাআলার ইচ্ছা ও বান্দার জন্য ভাল তাকদীর নির্ধারণ করে রাখা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর আল্লাহ্‌ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছে সরল পথে পরিচালিত করেন।”[সূরা ইউনুস, আয়াত: ২৫]

দুই:

ঈমান না-আনার প্রতিবন্ধকতাও অনেক। যেমন-

১। অজ্ঞতা এবং ঈমানী মহান শিক্ষা ও দিক নির্দেশনাগুলো না জানা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “বরং তারা যে বিষয়ের জ্ঞান আয়ত্ত করেনি তাতে মিথ্যারোপ করেছে, আর যার প্রকৃত পরিণতি এখনও তাদের কাছে আসেনি। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল, কাজেই দেখুন, যালিমদের পরিণাম কি হয়েছে।”! [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৯] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “কিন্তু, তাদের অধিকাংশই মূর্খ।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১১১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “কিন্তু, তাদের অধিকাংশই জানে না।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৩৭]

২। হিংসা ও বিদ্বেষ; যা হচ্ছে ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “কিতাবীদের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে তোমাদের ঈমান আনার পর কাফেররূপে ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষবশতঃ (তারা এটা করে থাকে।” [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১০৯]

৩। অহংকার। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যমীনে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায় আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে রাখব। আর তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তাতে ঈমান আনবে না এবং তারা সৎপথ দেখলেও এটাকে পথ বলে গ্রহণ করবে না, কিন্তু তারা ভুল পথ দেখলে সেটাকে পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এটা এ জন্য যে, তারা আমাদের নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং সে সম্বন্ধে তারা ছিল গাফেল।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৪৬]

৪। সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও সত্যকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনাকে তো আমরা এদের রক্ষক করে পাঠাইনি।”[সূরা শুরা, আয়াত: ৪৮] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “পূর্বে যা ঘটেছে তার কিছু সংবাদ আমরা এভাবে আপনার নিকট বর্ণনা করি। আর আমরা আমাদের নিকট হতে আপনাকে দান করেছি যিকর। এটা থেকে যে বিমুখ হবে, অবশ্যই সে কিয়ামতের দিন মহাভার বহন করবে। সেটাতে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য এ বোঝা হবে কত মন্দ!”[সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ৯৯-১০১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “অতএব আপনি তাকে উপেক্ষা করে চলুন যে, আমাদের স্মরণ থেকে বিমুখ হয় এবং কেবল দুনিয়ার জীবনই কামনা করে।”[সূরা নাজম, আয়াত: ২৯] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “আর যে রহমানের যিকির থেকে বিমুখ হয় আমরা তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান, অতঃপর সে হয় তার সহচর।”[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৩৬]

৫। ঈমানকে বুঝার পরে, দলিল জানার পরেও প্রত্যাখ্যান করা, গ্রহণ না করা। জানার পরেও হঠকারিতা করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আমরা যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা তাকে সেরূপ চিনে যেরূপ চিনে তাদের সন্তানদেরকে। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারা ঈমান আনবে না।”[সূরা আনআম, আয়াত: ২০] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “অতঃপর তারা যখন বাঁকা পথ অবলম্বন করল তখন আল্লাহ্‌ তাদের হৃদয়কে বাঁকা করে দিলেন। আর আল্লাহ্‌ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।”[সূরা সাফ্‌ফ, আয়াত: ৫] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “এভাবেই ফিরিয়ে নেয়া হয় তাদেরকে যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে।”[সূরা গাফের, আয়াত: ৬৩]

৬। বিলাসিতায় ডুবে থাকা, নেয়ামতের অপচয় করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর যারা কুফরী করেছে যেদিন তাদেরকে জাহান্নামের সামনে পেশ করা হবে (সেদিন তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা তোমাদের দুনিয়ার জীবনেই যাবতীয় সুখ-সম্ভার নিয়ে গেছ এবং সেগুলো উপভোগও করেছে। সুতরাং আজ তোমাদেরকে দেয়া হবে অবমাননাকর শাস্তি; কারণ তোমরা যমীনে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে এবং তোমরা নাফরমানী করতে।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ২০] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন, “ইতোপূর্বে তারা তো মগ্ন ছিল ভোগ-বিলাসে।”[সূরা ওয়াক্বিয়া, আয়াত: ৪৫]

৭। সত্যকে ও সত্য গ্রহণকারীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। আল্লাহ্‌ তাআলা নূহ আলাইহিস সালাম এর এর উম্মত সম্পর্কে বলেন, তারা বলল, ‘আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব অথচ তোমার অনুসরণ করছে নীচুজাতেরা।”[সূরা ওয়াক্বিয়া, আয়াত: ১১১]

৮। পাপ কাজ করা ও আল্লাহ্‌র আনুগত্য থেকে বেরিয়ে শয়তানের আনুগত্য করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, যারা অবাধ্য হয়েছে এভাবেই তাদের সম্পর্কে আপনার রবের বাণী সত্য প্রতিপন্ন হয়েছে যে, তারা ঈমান আনবে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৩]

৯। অন্তরের কাঠিন্যতা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “সুতরাং যখন আমাদের শাস্তি তাদের উপর আপতিত হল, তখন তারা কেন বিনীত হল না? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।”[সূরা আনআম, আয়াত: ৪৩]

১০। আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন সেটাকে অপছন্দ করা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংস এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন তারা তা অপছন্দ করেছে। কাজেই তিনি তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৮-৯]

আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

5/5 - (14 votes)

By Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.