Islamic QA

আদম (আঃ) কর্তৃক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিয়ে ওসিলা দেয়া শীর্ষক হাদিসটি বাতিল

1 min read

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি এ হাদিসটি পড়েছি। আমি জানতে চাই, হাদিসটি কি সহিহ; নাকি সহিহ নয়?
(যখন আদম আলাইহিস সালাম গুনাহতে লিপ্ত হলেন তখন তিনি বললেন: ইয়া রব্ব, মুহাম্মদ এর অধিকার এর বদৌলতে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ্‌ বললেন: হে আদম, তুমি মুহাম্মদকে কিভাবে চিনলে, আমি তো তাকে এখনও সৃষ্টি করিনি? আদম বলল: ইয়া রব্ব, কারণ যখন আপনি আমাকে নিজ হাত সৃষ্টি করে, আমার মধ্যে আপনার রূহ থেকে ফুঁকে দিলেন তখন আমি মাথা উত্তোলন করে দেখলাম যে, আপনার আরশের খুঁটিগুলোর উপর লেখা আছে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌’ (অর্থ আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই; মুহাম্মদ তাঁর বার্তাবাহক)। তখন আমি জানতে পেরেছি যে, আপনি আপনার নামের সাথে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মাখলুক ছাড়া অন্য কারো নাম সম্বন্ধিত করেননি। তখন আল্লাহ্‌ বললেন: হে আদম, তুমি সত্য বলেছ। নিশ্চয় তিনি আমার সবচেয়ে প্রিয় মাখলুক। তাঁর অধিকারের ওসিলা দিয়ে দোয়া কর। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। যদি মুহাম্মদ না হত তাহলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।)

 

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

এ হাদিসটি মাওযু (বানোয়াট)। এ হাদিসটি ইমাম হাকেম (রহঃ) আব্দুল্লাহ্‌ বিন মুসলিম আল-ফিহরি এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আমাদের নিকট ইসমাইল বিন মাসলামা হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমাদেরকে আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম সংবাদ দিয়েছেন তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে, তিনি উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন আদম গুনাহতে লিপ্ত হল… প্রশ্নকারী যে ভাষায় উল্লেখ করেছেন ঠিক সে ভাষায় সেখানে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।

হাকেম বলেন: এটি সহিহ সনদবিশিষ্ট হাদিস।[সমাপ্ত]

হাকেম এভাবেই বলেছেন! কিন্তু অনেক আলেম, হাকেমের কথার সমালোচনা করেছেন এবং হাকেম কর্তৃক এ হাদিসকে সহিহ বলার প্রতিবাদ করেছেন। তারা হাদিসটিকে বাতিল ও বানোয়াট হুকুম দেন। তারা আরও তুলে ধরেন যে, হাকেম নিজেই এ হাদিসে স্ববিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছেন।

আলেমগণের সেসব উক্তির কিয়দাংশ নিম্নরূপ:

হাকেমের পূর্বোক্ত উক্তির সমালোচনা করে যাহাবী বলেন: বরঞ্চ হাদিসটি মাওযু (বানোয়াট)। আব্দুর রহমান একজন অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। আর আব্দুল্লাহ্‌ বিন মুসলিম আল-ফিহরি কে আমি চিনি না।[সমাপ্ত]

যাহাবী তার ‘মিযানুল ইতিদাল’ গ্রন্থে বলেন: “এটি বাতিল খবর (হাদিস)”।

ইবনে হাজার তাঁর ‘লিসানুন মিযান’ গ্রন্থে এ অভিমতের প্রতি সম্মতি জানিয়েছেন।

বাইহাকী বলেন: এই সূত্রটি আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম এককভাবে বর্ণনা করেছেন। এ আব্দুর রহমান দুর্বল রাবী।[সমাপ্ত] ইবনে কাছির তাঁর ‘আল-বিদায়া ওয়াল নিহায়া’ গ্রন্থে (২/৩২৩) এ অভিমতের প্রতি সম্মতি জানিয়েছেন।

আলবানী তাঁর আল-সিলসিলা আয-যায়িফা গ্রন্থে (২৫) বলেন: মাওযু (বানোয়াট)।[সমাপ্ত]

হাকেম নিজেও (আল্লাহ্‌ তাঁকে মাফ করুন) আব্দুর রহমান বিন যায়েদকে হাদিস জাল করার দোষে অভিযুক্ত করেছেন। তাহলে হাদিসটি সহিহ হয় কিভাবে?!

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর ‘আল-কায়েদা আল-জালিয়্যা ফিত তাওয়াস্‌সুল ওয়াল ওসিলা’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-৬৯) বলেন: হাকেম এ হাদিসটি বর্ণনা করে নিজেই সমালোচিত হয়েছেন। কারণ তিনি নিজে ‘আল-মাদখাল ইলা মারিফাতিস সহিহ মিনাস সাকিম’ গ্রন্থে বলেন: আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম তার পিতা থেকে বেশ কিছু জাল হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিস বিশারদদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ রেওয়ায়েতটির প্রতি গভীর দৃষ্টি দিয়েছেন তার কাছে অস্পষ্ট নয় যে, এ রেওয়ায়েতে তার উপরই দোষারোপ করা হবে। আমি বলি: আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম তাদের সর্বসম্মতিক্রমে দুর্বল; তিনি প্রচুর ভুল করেন।[সমাপ্ত]

[দেখুন: আলবানী এর ‘সিলসিলাতুল আহাদিস আয-যায়িফা’ (১/৩৮-৪৭)]

5/5 - (15 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x