বিশ্বগ্রামের ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদান সমূহ
‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পােহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববােধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তাে সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগােলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতাে একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতাে। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।
তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গােটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতাে বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মােচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ক্রমােন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারাে থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।
বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuhan) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। গ্লোবাল ভিলেজ হলাে এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যােগাযােগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযােগিতা প্রদান করতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে অবাধ ও সহজলভ্য তথ্য প্রবাহের উৎস তৈরি থেকে শুরু করে সার্বিক জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় সভ্যতার সুফল বিশ্বের সকল মানুষের দোরগােড়ায় দ্রুত পৌছে দেওয়া সম্ভব। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযােগিতা থাকা প্রয়ােজন। এর সাথে হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযােগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।
অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গােপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তােলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বগ্রাম ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানগুলাে (Principal Components regarding concept of Global village) নিচে আলােচনা করা হলাে:
যােগাযােগ (Communication)
যােগাযােগ বলতে আমরা সবসময়েই এক জায়গার সাথে অন্য জায়গার যােগাযােগ বুঝিয়ে এসেছি এবং বিশ্বগ্রামের ধারণার মাঝে এই যােগাযােগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। কারণ আধুনিক যােগাযােগ ব্যবস্থার কারণে একজন মানুষ বিমানে, দ্রুতগামী ট্রেনে অথবা আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মাঝে এক শহর থেকে অন্য শহরে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাতে পারে। তবে বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতে যােগাযােগ ব্যবস্থা বলতে এখন একই সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান কিংবা ভাব। নিময় করাকেও বােঝায়। কথন, লিখন কিংবা অন্য কোনাে মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানই এই যােগাযােগ এবং এই যােগাযােগই এখন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রধান উপাদান।
নতুন নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যােগাযােগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করছে। যােগাযােগের ক্ষেত্রে প্রায় শতাব্দী-প্রাচীন টেলিফোন যন্ত্রে তারের বদলে তারবিহীন মাধ্যমের ব্যবহার করে আজকের বিশ্বে বাইল ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ই-মেইল, স্কাইপি, হােয়াটস অ্যাপ, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ইমাে, ওয়েব ব্রাউজিং, জুম ইত্যাদির দ্বারা মূহুর্তের মাধ্যমে সারা বিশ্বের যে কোনাে প্রান্তের সাথে যােগাযােগ করা সম্ভব হচ্ছে।
এই যােগাযােগ ব্যবস্থাকে টেলিযােগাযােগ (Telecommunication) এবং তথ্য যােগাযােগ (Information communication) এই দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক সময় তার-নির্ভর টেলিফোনই ছিল। টেলিযােগাযােগের একমাত্র মাধ্যম। পরবর্তীকালে বেতার টেলিযােগাযােগ আবিষ্কৃত হওয়ার পর টেলিযােগাযােগ যন্ত্রের মধ্যে টেলিফোন, মােবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়াকিটকি ইত্যাদির ব্যবহার সর্বত্র ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
অন্য দিকে নিয়ম ও নিরাপত্তার বিষয়টি বজায় রেখে তথ্য স্থানান্তর বা শেয়ার করা হচ্ছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণ হিসেবে ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট-নির্ভর সার্ভিস যেমন ইমেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ওয়েবসাইট, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদির কথা বলা যায়।
ই-মেইল (E-mail) হলাে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযােগ্যভাবে বার্তা আদান-প্রদান পদ্ধতি। আজকাল একজন মানুষের প্রকৃত ঠিকানা থেকে তার ই-মেইল ঠিকানা বেশি প্রয়ােজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং দিয়ে একে অন্যের সাথে যােগাযােগ, তথ্য, ছবি এবং ভিডিও বিনিময় কিংবা সংবাদ প্রচারের কাজ করা হয়। সামাজিক নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে পৃথিবীতে অনেক বড় সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তােলা হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সিং পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীরা অডিও-ভিজুয়াল পদ্ধতিতে সভা করতে পারেন। ইন্টারনেটে এখন পৃথিবীর প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি সকলের সামনে তুলে ধরে। ইন্টারনেটভিত্তিক এই পদ্ধতিগুলাের ব্যাপক জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ সময় এবং অর্থের সাশ্রয়।
তবে ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং-এর উপর বেশি নির্ভরতা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক সময়েই আসক্তির পর্যায়ে চলে যাবার কারণে পুরাে পৃথিবীতেই এর ব্যবহার এখন আলাদাভাবে পর্যালােচনা করে দেখা হচ্ছে।
কর্মসংস্থান (Employment)
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলাের একটি বিরাট অংশ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশে এবং দেশের বাইরে চাকুরির বাজারে আবেদন করে নিজেদের বেকারত্ব দূর করতে পারছে। আমাদের দেশেও বিগত প্রায় দু দশক ধরে বিভিন্ন দেশের চাকুরি ও নিয়ােগ সংক্রান্ত খবরাখবর নিয়ে কয়েকটি জব-পাের্টাল চালু আছে। এগুলাের মধ্যে www.bdjobs.com, www.chakri.com ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। এসব ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্যের গােপনীয়তা বজায় রেখে অনলাইনে চাকুরির আবেদন করা যায়।
এছাড়া ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযােগ রয়েছে। এ ধরনের কর্মসংস্থানে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক দেশের নাগরিক ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিকের বা প্রতি পক্ষে দূর থেকে কাজ করে থাকেন। এই কার্যক্রমকেই আউটসাের্সিং বলে। আমাদের দেশে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু হয়েছে, এর ফলে অনেকের কাজের সুযােগ হয়েছে, অনেকে উদ্যোক্তা হিসেবে ন্যদের কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করেছেন।
এখানে আলাদাভাবে ‘উবার’ কিংবা ‘পাঠাও’য়ের মতাে সেবার কথা উল্লেখ করতে হয়, যেগুলাে যান পরিবহনের ক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে। আবার তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনাে প্রতিষ্ঠানের কাজ খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি যে কেউ স্বাধীনভাবে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। কাজের স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি কাজের স্থান ও সময়ের কোনাে বাঁধাধরা নিয়ম না থাকায় এ পেশার জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক কাজকে ফ্রিল্যান্সিং (স্ব-উদ্যোগের কাজ) বলা হয়। বিশ্বব্যাপী কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস বা জব শেয়ারিং ওয়েবসাইট যেমন— Upwork, Freelancer, Belancer, Fiverr ইত্যাদিতে ডেটা অ্যানালাইসিস, কপি রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এফিলিয়েট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), গুগল অ্যাডসেন্স, ভার্চুয়াল অ্যাসিসটেন্স, রিসার্চ এন্ড সার্ভে, আটিক্যাল-ব্লগ রাইটিং ইত্যাদি নানাধরনের বৈচিত্র্যময় কাজ করা যায়।
অবশ্য ফ্রিল্যান্সিং কাজের মাধ্যমে অর্থোপার্জন আপাতদৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলেও ভিন্নধর্মী জীবন যাপন অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন বা পরিবার-বিচ্ছিন্নতা এ কাজের বড় ধরনের নেতিবাচক দিক। রাত জেগে কাজ করা, দক্ষতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, কাজের জোগান দিতে বাধ্য-হওয়া-জনিত মানসিক চাপ, সরবরাহকৃত কাজের যথাযথভাবে মূল্যায়ন না হওয়া বা পারিশ্রমিক পরিশােধের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতা এবং সর্বোপরি পেশা হিসেবে সামাজিকভাবে স্বীকৃত না হওয়ায় অনেকেই এ ধরনের কাজে নিরুৎসাহিত বােধ করে থাকেন।
শিক্ষা (Education)
বিশ্বগ্রামের ধারণায় শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, কারণ সত্যিকার শিক্ষাই একজন মানুষকে সমাজ এবং পরিবেশ সচেতন, মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, উদার বিশ্বনাগরিক হতে সাহায্য করে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্যান-ধারণার পরিবর্তে চলমান শতাব্দীর উপযােগী শিক্ষা ব্যবস্থা বা পদ্ধতিতে এসেছে নূতন মাত্রার গতিশীলতা এবং যান্ত্রিকায়ন। শিক্ষার্থীদের মেধা-মননের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির যথােপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে শিখন পদ্ধতি।
তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে একটি শক্তিশালী উপকরণ যা আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকের পাশাপাশি বিশ্বমানের প্রায়। যে কোনাে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষকগণের সাহচর্যে তথ্য ও জ্ঞানের ভান্ডার ব্যবহার এখন খুবই সহজ। একসময় মূল্যবান পাঠ্যবই অনেক দেশে খুবই দুর্লভ একটি বিষয় ছিল, এখন ই-বুকের কারণে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে সবাই পাঠ্যবই পেতে পারে। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাের্ডের প্রকাশিত।
সকল পাঠ্যপুস্তক তাদের ওয়েবসাইট থেকে ই-বুক আকারে ডাউনলােড করা যায়। বিশ্বগ্রাম ধারণায় শিক্ষা গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিংবা একদেশ থেকে অন্যদেশে যেতে হবে । না, তারা নিজের ঘরে বসেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। 2020 সালে সারা পৃথিবীব্যাপি কোভিড-19 সংক্রমণের সময় পৃথিবীর বেশিরভাগ স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষাক্রম বন্ধ না রেখে অনলাইন শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করেছেন। শিক্ষকেরা নিজ ঘরে থেকেই অনলাইনের বিভিন্ন অ্যাপ (যেমন Google meet, WebEx, webinar, Facebook messenger, imo, Skype, Whatsapp, Zoom ইত্যাদি) ব্যবহার করে লাইভ-ক্লাসে সরাসরি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছেন।
অনেক সময় বিষয়ভিত্তিক ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরির পর অনলাইনে শেয়ার, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্লগিং করে, বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। শুধু তাই নয় একজন শিক্ষার্থী। ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার-ভিডিও দেখে, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে বিশ্বের প্রায়। প্রতিটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বিষয়ভিত্তিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে। শিক্ষা কোনাে দেশের ভৌগােলিক সীমারেখায় আবদ্ধ না থাকার কারণে বিশ্বগ্রাম ধারণায় তথ্য ও যােগাযােগ।
প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারে একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গ হিসেবে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে যাচ্ছে। গতানুগতিক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের পরিবর্তে অনলাইনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক মাধ্যম। বিশেষত কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও ওয়েব ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার পদ্ধতিকে ই-লার্নিং বলে। ই-লার্নিং এমন একটি প্রযুক্তিগত শিখন পদ্ধতি যেখানে অনলাইনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যে কোনাে অবস্থানে থেকে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় (interactive) পাঠদান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
এটি সাধারণত অনলাইনে সুনির্দিষ্ট কোর্স, ডিগ্রি কিংবা প্রােগ্রাম শিক্ষায় বেশি ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারে। একসাথে অনেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান সম্ভব হলেও, মানবীয় উপাদানের অনুপস্থিতির (Lack of human element) কারণে অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে একটি দেশের। উন্নয়ন কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দপ্তর-বিভাগ, কর্পোরেট সংস্থাগুলাের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ। সংক্রান্ত কার্যক্রমে এই শিক্ষা পদ্ধতির ব্যবহার যথেষ্ট কার্যকর।
চিকিৎসা (Medical Facilities)
পৃথিবীর অনেক দেশেই দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল, চিকিৎসা সুবিধা এমনকি ভালােভাবে যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাটও থাকে না। আবার পৃথিবীতে এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া তাে দূরের কথা রােগীদেরকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতেও দু-তিন দিন লেগে যায়। শুধু তাই নয় পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী অনেক দেশেও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই, জনস্বাস্থ্য অবহেলিত বলে। দরিদ্র জনগােষ্ঠীর পক্ষে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হয় না। এ ধরনের মানুষের কাছে চিকিৎসা সুবিধা। পোঁছে দেয়ার জন্য টেলিমেডিসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
টেলিমেডিসিন বলতে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী রােগীদেরকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা। চিকিৎসা সেবা দেওয়াকে বােঝায়। এর মূল কথা হলাে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোড়গােড়ায় পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য খাতে গত কয়েক বছর ধরে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলােয় টেলিকনফারেন্স, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এবং জনসাধারণ এর সুফল ভােগ করা শুরু করেছেন। তাছাড়া ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানাে রােগীর চিকিৎসা।
সংক্রান্ত পরীক্ষা রিপাের্ট ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করেও রােগ নির্ণয় সহজতর হচ্ছে। অনেক সময় অনেক জটিল ধরনের অপারেশন করার ক্ষেত্রে এজন চিকিৎসক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অন্য আরেকজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। Teladoc, Maven clinic, iCliniq, MDlive, Amwell, Doctor on Demand, treatmentonline নামীয় অসংখ্য ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে বিশ্বের যে কোনাে প্রান্ত থেকে অনলাইন চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়। ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময় ব্যবস্থাপত্রসহ স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রতিটি দেশে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট ফোন নম্বর সার্বক্ষণিক চালু রাখা হয়েছিল যার মাধ্যমে চিকিৎসকগণ নানাভাবে দেশবাসীকে প্রতিনিয়ত টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করেছেন।
সঠিক রােগ নির্ণয় হচ্ছে রােগীর যথাযথ চিকিৎসার পূর্বশর্ত। বর্তমান বিশ্বে রােগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তিনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যথাযথ প্রয়ােগ দ্বারা সুক্ষ্মভাবে রােগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড (EHR: Electronic Health Record) ব্যবস্থাপনায় ডেটাবেজে রােগ সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে এবং রােগী তার EHR ব্যবহার করে যে কোনাে স্থান হতে তার রােগ সম্পর্কিত তথ্য, রিপাের্ট, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ইত্যাদি যে কোনাে স্থানে বসে পেতে পারেন। এ ধরনের কাজ। সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে Therapy Notes, Epic care, Next Gen Ambulatory EHR, Care 360 ইত্যাদি অন্যতম।
গবেষণা (Research)
যে প্রক্রিয়ায় সৃষ্টিশীল মেধা-মনন প্রয়ােগ করে পৃথিবীর জ্ঞানভান্ডার বৃদ্ধি বা সমৃদ্ধ করা হয় সেটিই হচ্ছে। গবেষণা। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলাে গবেষণা। নিয়মিত জ্ঞানচর্চা বা বিজ্ঞানসম্মত অধ্যয়ন গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত। উন্নতকামী দেশ মাত্রই গবেষণার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে। তাই বিশ্বগ্রাম ধারণায় গবেষণা একটি প্রধান অনুষঙ্গ এবং সেজন্য এখানে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম।
বর্তমান পৃথিবীতে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা গবেষণার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। তথ্য ও উপাত্তের সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়া, জটিল হিসাব, সিমুলেশন কিংবা যন্ত্রপাতি পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ, সেগুলাে থেকে ডেটা সংগ্রহ এর প্রতিটি ধাপেই তথ্য প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রেখে থাকে। বিজ্ঞানী বা গবেষকেরা তাঁদের চিন্তাধারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারেন, আলােচনা করতে পারেন কিংবা নিরবচ্ছিন্নভাবে যােগাযােগ রক্ষা করতে পারছেন। শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও একজন গবেষক সেমিনার বা কনফারেন্সে নিজের গবেষণা প্রকাশ করতে পারেন কিংবা অন্যের গবেষণা সম্পর্কে জানতে পারেন।
একসময় জার্নাল বা গবেষণাপত্র, প্যাটেন্ট ইত্যাদি অত্যন্ত দুর্লভ বিষয় ছিল, এবং সেটি ছিল গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। আজকাল প্রায় সব জার্নাল ই-জার্নাল হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং প্যাটেন্টের বিশাল ডেটাবেসের অনেকটুকুই উন্মুক্ত, কাজের যে কোনাে গবেষক সেই বিশাল তথ্যভান্ডার ব্যবহার করতে পারেন। সে কারণে আমরা দেখতে পাই সীমিত সম্পদ নিয়েও আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের গবেষণা করতে পারে।
গবেষণার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা ব্লগে প্রকাশিত হলে গবেষণার কার্যক্রম আরাে গতিশীল ও ত্বরান্বিত হয়। বিজ্ঞানী বা গবেষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল, তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা যাচাই এবং সমগ্র বিশ্বের সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গের নিকট দ্রুততার সাথে প্রচার এবং সেগুলাের উপর পর্যবেক্ষণ, মতামত প্রদান ইত্যাদি প্রতিটি বিষয় বিশ্বগ্রাম ধারণার মাধ্যমে বাস্তবায়ন অত্যন্ত সহজসাধ্য হয়েছে।
অফিস (office)
অফিস বা কর্মস্থল এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী তাদের পেশা সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন। অফিসের বর্তমান ব্যবস্থায় বিশ্বগ্রাম ধারণাটি সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়। আমরা কোনাে তথ্যের জন্য কোনাে কোম্পানির অফিসে ফোন করলে বা অন্য কোনােভাবে যােগাযােগ করলে কখনােই নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না, পৃথিবীর কোন প্রান্ত বা কোন দেশ থেকে সেই ফোনের বা সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আধুনিক অফিস ইকুইপমেন্টস, আইসিটি ও বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে অফিসের সার্বিক কার্যক্রম অত্যন্ত সহজ, স্বচ্ছতা এবং দৃশ্যমান গতিশীলতার সাথে করা সম্ভব হচ্ছে।
সরকারি অফিসসহ বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাগার, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কর্পোরেট অফিসগুলাে আজকাল ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত থেকে সার্বিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে (Automated) কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁত আর দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে অফিসগুলােকে কাগজবিহীন ডিজিটালাইজড অফিসে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বদলে যাচ্ছে অফিসের ফাইলিং সিস্টেম এবং প্রাত্যহিক কার্যপ্রক্রিয়া।
আজকের বিশ্বায়ন ব্যবস্থায় তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির কল্যাণে গতানুগতিক অফিস-ব্যবস্থা একটি বড় পরিবর্তনের পথে রয়েছে। অনেকেই নিজ দেশে কিংবা অন্য দেশে থেকে বাসায় বসে কাজ করেন, অনেককেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা বজায় রাখতে হয় না। উত্তর আমেরিকার সাথে আমাদের প্রায় বারাে ঘণ্টা সময়ের পার্থক্য থাকার কারণে দুই মহাদেশে দুইটি অফিস রেখে, কয়েক শিফটে সেটি দিন-রাত্রি মিলে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করতে পারে।
গুগল’ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবহিত আছি, ড্রপবক্স। (www.dropbox.com), গুগল ড্রাইভ, Office 365, Google docs ইত্যাদি গুগলের সার্ভিসে আমরা আমাদের যাবতীয় ফাইল তৈরিসহ নিরাপত্তার সাথে সংরক্ষণ করতে পারি এবং বিশ্বের যে কোনাে প্রান্ত থেকে সেখানে কাজ করতে পারি। অফিসের সবধরনের মিটিংয়ের ক্ষেত্রে ভিডিও কনফারেন্সিং করে । প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা দিতে পারি।
তবে অফিস যান্ত্রিকায়নের ফলে অনভিজ্ঞ মানুষের কর্মসংস্থান কমে যায়। তেমনি গ্রাহকের সাথে । ব্যবস্থাপনার মিথস্ক্রিয়া (interaction) এবং একই সাথে সহকর্মীদের সাথে সামাজিক যােগাযােগ হ্রাস পায়। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে তথ্য সরক্ষণের জন্য বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির ডেটা সেন্টারগুলাে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা হলে সবসময় একধর
কে যায়।
বাসস্থান (Residence)
বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থায় আজকাল অত্যাধুনিক সুযােগ-সুবিধাসমৃদ্ধ বাসভবন নির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ ঘরে অবস্থান করে দূরবর্তী দেশের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামনাসামনি কথােপকথন থেকে আরম্ভ করে রিমােট কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, কক্ষের তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধি করা, লাইটিং সিস্টেম, ঘরে বসেই বাজার করা, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, চিত্তবিনােদন ইত্যাদি সবকিছুতেই আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত আরামদায়ক ও সহজসাধ্য করে দিয়েছে।
এ ধরনের সুবিধাসমৃদ্ধ বাসস্থানকে স্মার্ট হােম (Smart Home) এবং এর পদ্ধতিকে হােম অটোমেশন সিস্টেম (Home automation system) বা ব্যবস্থা বলা হয়। এসব বাসস্থানে দৈনন্দিন সবধরনের কাজে নানা ধরনের ডিভাইস যেমন- টেলিভিশন, সাউন্ড ব্যবস্থা, মিউজিক সিস্টেম, লাইট, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ফায়ার সিস্টেম, শাওয়ার সিস্টেম, পর্দা উঠানাে নামানাে, গ্যারেজ সিস্টেম, ভূমিকম্প সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, তাপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্মার্ট হােম হলাে একধরনের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস পয়েন্টের মতাে, যেখানে বসবাসের জন্য সব উপযােজন পাওয়া যায় এবং গ্রাহককে ব্যবহার্য দ্রব্যাদির গুণগতমান নিশ্চিত করে এ সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা যায়।
স্মার্ট হােম ক্যামেরা এবং মােশন সেন্সর (Motion Censor) দিয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুম কিংবা প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানির সাথে যুক্ত থাকে বলে বাসস্থানটি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকে এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। বাসস্থানে কোনাে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকলে স্মার্ট হােম তার জন্য সত্যিকারের সহায়তা হতে পারে, কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে (ভয়েস কমান্ড) দরজা খােলা বা বন্ধ করা, লাইট, কম্পিউটার ও টেলিফোন চালু কিংবা বন্ধ করা ইত্যাদি কাজ তখন সহজেই করা সম্ভব হয়ে যায়। হােম অটোমেশনে ব্যাপক আর্থিক বিনিয়ােগ, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনবল, ব্যক্তিগত গােপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, কণ্ঠস্বর বা ভয়েস নিয়ন্ত্রিত ডিভাইস ব্যবহারে বিড়ম্বনা ইত্যাদি সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য (Business)
পৃথিবীর কোনাে দেশ এখন আর পরিপূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, প্রত্যেকটি দেশকেই কোনাে না কোনাে দ্রব্যের জন্য অন্যান্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। যে দেশ যেটি উৎপাদন করে সেই দেশ সেটি রপ্তানি করে, এবং যে দেশে যেটি প্রয়ােজন সেটি অন্য দেশ থেকে আমদানি করে। সে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বগ্রামের ধারণাটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে দেখি। শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর দেশের উন্নয়ন নির্ভরশীল। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিশ্বগ্রাম ব্যবস্থা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে।
তথ্য প্রযুক্তির প্রভাবে আজকাল ব্যবসা-বাণিজ্যেও অভাবনীয় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে তাদের উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অন্যত্র যেতে হয় না। উৎপাদিত পণ্য বা সেবার গুণগতমান অনলাইনের মাধ্যমে স্থানীয় এবং বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ক্রেতা বা ভােক্তাগণ তাদের প্রয়ােজন অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য আজকাল আর ভৌগােলিক সীমানায় আবদ্ধ নেই। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স, ই-বিজনেস, অনলাইন শপিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইলেকট্রনিক্স কমার্স বা ই-কমার্সই এ যাত্রার পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।
আধুনিক ডেটা প্রসেসিং এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বিশেষত ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য বা সেবা বিপণন, বিক্রয়, সরবরাহ, ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন ইত্যাদি কাজকে সম্মিলিতভাবে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বলে। ই-কমার্স ওয়েব সাইটে পণ্যের গুণগত মান, বৰ্ণনা, ছবি ও মূল্য সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ থাকে। ই-কমার্সের পরিচিত কতকগুলাে ওয়েব সাইট হলাে, www.bikroy.com, www.daraz.com, www.alibaba.com, www.amazon.com, www.ebay.com বাংলাদেশে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও ইতােমধ্যে ই-কমার্সের কার্যক্রম চালু হয়েছে। ইদানীং সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলােয় অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের স্থানীয় শেয়ার বাজারের তথ্য এবং উৎপাদিত পণ্যের প্রচার এবং নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর হােম ডেলিভারির বিজ্ঞাপন করে থাকেন।
এতে করে উৎপাদিত পণ্যের বাজার দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা যায় এবং বৈশ্বিক ব্যবসাবাণিজ্যের সুফল আমরা পেতে পারি। প্রযুক্তি শেয়ার ও স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নত হবে শিল্প কারখানাগুলাে। বিশ্বমানের ব্যবস্থায় উৎপাদিত পণ্য হবে আন্তর্জাতিক মানের। ফলে সম্প্রসারিত হবে বৈশ্বিক ব্যবসাবাণিজ্যের। এক্ষেত্রে লেনদেনে ব্যবহৃত হয় ইএফটি (EFT: Electronic fund transfer) যেটি এক ধরনের ইলেকট্রনিক লেনদেন যা সংঘটিত হয় কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কের সাহায্যে। একই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার অ্যাকাউন্টের মধ্যে অথবা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে, কিংবা বৈদেশিক ব্যাংকের মধ্যেও এ ধরনের লেনদেন করা যায়। এছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা যায়।
অনলাইন ব্যাংকিং নামে পরিচিত এই পদ্ধতিটি বর্তমান তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির অন্যতম পরিসেবা হিসেবে গণ্য করা যায়। এ ধরনের পদ্ধতিতে লেনদেনকে ইন্টারনেট ব্যাংকিংও বলা হয়। এই ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় গ্রাহকগণকে লেনদেন সম্পন্নের জন্য সশরীরে কোনাে ব্যাংক শাখায় যাওয়ার প্রয়ােজন হয় না; বাড়িতে বা কর্মস্থলে কিংবা ভ্রমণরত অবস্থাতেও এই কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এজন্য শুধু কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সংযােগ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড প্রয়ােজন হয়।
সংবাদ (News)
সংবাদ বিশ্বগ্রাম ধারণার একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ব্যবহার সংবাদ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রমে গতিশীলতা বেড়ে গেছে বহুগুণে, যােগ করেছে ভিন্নমাত্রা। ব্যাপক হারে বিস্তৃতি পেয়েছে এর কর্মপরিধি। পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মুহুর্তের মাঝে সারা পৃথিবীর সকল মানুষ জেনে যেতে পারে। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিউজ চ্যানেল, যেমন এপি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন বা আলজাজিরা ইত্যাদি তাদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংবাদগুলাে আমাদের দোরগােড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ কিংবা দুর্ভিক্ষের সংবাদ সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে বিশ্বভ্রাতৃত্ব এবং সহমর্মিতার জন্ম দেয়। ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সেটি দেখতে দেখতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের গণমাধ্যমেও সম্প্রসারণ, ক্রমবিস্তৃতি লাভ করছে। অনলাইন সাংবাদিকতার সুযােগগুলাে আমরা কাজে লাগাতে পারছি।
খবরের যথার্থতা নির্ণয়ে আমরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন চ্যানেলের সংবাদ যাচাই করতে পারি। আমাদের দেশেও অনলাইন নিউজ সাইটগুলাে সমসাময়িক বিশ্বের সকল খবরাখবর প্রচার করে চলেছে। এছাড়াও বর্তমানে প্রায় সব খবরের কাগজ তাদের অনলাইন সংস্করণ নিয়মিতভাবে প্রকাশ করছে। মােবাইল ফোন কোম্পানিগুলােও আপডেট নিউজ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে। সেগুলাে প্রচার করছে। সংবাদগুলাে বৈশ্বিক হওয়ায় সারা বিশ্ব পরিণত হচ্ছে এক পরিবারে। তথ্যের সমৃদ্ধতা যে কোনাে দেশকে উন্নত করতে পারে। বর্তমানে তথ্যই শক্তি, যার অন্যতম প্রধান উৎস এই সংবাদপত্র যার উপর ভিত্তি করে চলবে নিরন্তর গবেষণা, নিশ্চিত হবে টেকসই উন্নয়নের অসীম সম্ভাবনা।
তবে ইন্টারনেটভিত্তিক ওই সব পাের্টাল তৈরি করা, কিংবা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা খুবই সহজ হয়ে যাওয়ার কারণে এর যথেষ্ট অপব্যবহার হতে দেখা যায়। মিথ্যা সংবাদ কিংবা ি প্রচারণা এখন সারা পৃথিবীর জন্য বড় সমস্যা। এর মােকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) নিজস্ব নিউজ সার্ভার, শক্তিশালী ডেটাবেজ, নেটওয়ার্ক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা প্রয়ােজন।
বিনােদন ও সামাজিক যােগাযােগ (Entertainment and Social Communication)
বিনােদন ছাড়া মানুষের জীবনের উল্লেখযােগ্য অংশ অপূর্ণ থেকে যায়। সভ্যতার উন্মেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিনােদনের অনুষঙ্গের মধ্যে গল্প বলা, বাদ্য বাজানাে, নৃত্য, গান, নাটক ইত্যাদি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বর্তমানে বিনােদনের অধিকাংশই হয়ে পড়ছে ইলেকট্রনিক যন্ত্রনির্ভর; যেমন টেলিভিশন, রেডিও, মােবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি। স্যাটেলাইট বা ইন্টারনেটের কল্যাণে এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন ঘরে বসেই পথিবীর যে কোনাে অনুষ্ঠান উপভােগ করা সম্ভব। হলিউডের সিনেমা একসময় চলচ্চি, অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হতাে।
এখন স্ট্রিমিং করে ইন্টারনেটে চলচ্চিত্র দেখার প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স হলিউডকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার পর্যায়ে চলে গেছে। এ ছাড়াও ইন্টারনেট গেমিং, আইপি টিভি (ইন্টারনেট প্রটোকল টিভি), ইউটিউবসহ আরাে অসংখ্য অনলাইন বিনােদন মাধ্যম রয়েছে যেগুলাে যে কোনাে ব্যক্তি তার পছন্দসই গেম, ভিডিও, গান ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও ডাউনলােড করতে পারে। একটা সময় ছিল যখন সকল বিনােদনের অনুষ্ঠান তৈরি হতাে জাতীয় কৃষ্টি কালচার ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনা করে। তথ্য প্রযুক্তির প্রভাবে এবং বিশ্বায়নের এ যুগে সেখানেও বৈচিত্র্য এসেছে।
বিশ্বগ্রামের চেতনার সাথে তাল মিলিয়ে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের ধ্যানধারণা, চিন্তা, সংস্কৃতির ছোঁয়ার সাথে পরিচিত হচ্ছে। অনলাইন নিউজ, টিভি প্রােগ্রাম, গান, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি যে কোনাে ব্যক্তি যে কোনাে স্থানে মুহূর্তের মধ্যেই নিজের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে দেখতে ও উপভােগ করতে পারছেন। জনপ্রিয় সামাজিক যােগাযােগ। মাধ্যমগুলাে যেমন ফেসবুক, টুইটার, হােয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার, স্কাইপি ইত্যাদি ব্যবহার করে সারা বিশ্বের যে কোনাে প্রান্তের সাথে যােগাযােগসহ বিনােদন জগতের আপডেট তথ্য, ভিডিও, ছবি খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ এবং লাইক’-এর মাধ্যমে জনমত যাচাই করতে পারছেন।
ডিজিটাল সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে যে কোনাে ব্যক্তি তার ভালাে লাগা বা মন্দ লাগা বিষয়ে নিজের মতামত দেওয়া, মতবিনিময় কিংবা অন্যকে শেয়ার করতে পারায় বৈশ্বিক যােগাযােগ সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সকলের সতর্ক হওয়া প্রয়ােজন। ভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়ায় স্বদেশীয় জাতিসত্তা যেন হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা প্রয়ােজন। তা ছাড়াও আজকাল সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম মাদকাশক্তির ন্যায় অপব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, ভাটা পড়ছে পারিবারিক ও সামাজিকতায়। কর্মস্থল এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে, সেইসাথে ব্যক্তিগত তথ্যে অযাচিত হস্তক্ষেপ, একজনের ছবি বা তথ্য অন্য নামে চালিয়ে দেয়া কিংবা অপপ্রচার ও গুজব সমাজে ছড়িয়ে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ঘটনাও নিয়মিতভাবে ঘটছে।
সাংস্কৃতিক বিনিময় (Exchange of Cultural Activities)
মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইতিহাস পর্যালােচনায় এটি নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে সাথে বিভিন্ন জাতি-গােষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নয়ন ও সমদ্ধিও উল্লেখ করার মতাে। আমাদের বাংলা ভাষা হাজার বছর আগে এখনকার মতাে ছিল না। কালের বিবর্তনে এ ভাষা বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে।
বর্তমান বিশ্বায়ন ব্যবস্থার প্রভাব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। একসময় আমাদের দেশে “ভালােবাসা দিবস” বলে কোনাে দিবস পালিত হতাে না, এখন এদেশের তরুণদের কাছে এটি জনপ্রিয় একটি দিবস। আজকের বাংলাদেশি একজন কিশাের এবং একজন মার্কিন কিশাের একই সময়ে, একই ধরনের প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ফলে একইভাবে যে কোনাে বিষয় অবলােকন, চিন্তাভাবনা, মতবিনিময় করতে সক্ষম হচ্ছে। তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির কল্যাণে ভিন্ন জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ একটি একক সমাজে বসবাসের ফলে মানুষের যােগাযােগের ব্যাপকতা এবং বিশ্বের সকল সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া সুযােগ ঘটেছে, যেটি বিশ্বগ্রামের ধারণার সাথে পুরােপুরি সংগতিপূর্ণ।
অবশ্য এর বিরূপ প্রভাবও লক্ষ করা যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মুখে পড়ছে পিছিয়ে থাকা দেশগুলাের ভাষা ও সংস্কৃতি। বিলুপ্ত হতে বসেছে অনেক ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি। আমাদের দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও রিমিক্স, ফিউশন কিংবা পপ-কালচারের ক্ষতিকারক প্রভাবে প্রভাবান্বিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং ঐতিহ্যগত দিক ব্লগ, ওয়েবসাইট, চ্যানেল ইত্যাদিতে তুলে ধরতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা, সুস্থ ও আকর্ষণীয় বিনােদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার এবং এ বিষয়ে সচেতনতামূলক ও আগ্রহ সৃষ্টির কাজ চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নে আমাদের সংস্কৃতি স্বমহিমায় জায়গা করে নিতে পারবে।